Hare to Whatsapp
রাজ্যে 'মেড ইন ত্রিপুরা'র স্লোগান দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
By Our Correspondent
আগরতলা, জানুয়ারি ১২, : রাজ্যের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণের জন্য 'মেড ইন ত্রিপুরা'র উদ্যোগ শুরু করার কথা বললেন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব। প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদির 'মেক ইন ইন্ডিয়া' ভাবনার অনুকরণে ত্রিপুরাতেও, এই ধরনের ভাবনা বাস্তবায়নের আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন সঠিক উপায়ে ত্রিপুরার উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বৃদ্ধি করে রাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যাবে। শনিবার রাজধানীর প্রজ্ঞাভবনে প্রধানমন্ত্রী বনধন যোজনার উদ্বোধন করে একথা বলেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন জনজাতি অংশের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করে চলেছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। বনজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিনের শোষণ থেকে জনজাতি মানুষকে মুক্তি দিতে সরকার কাজ করে চলেছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার এখনো পর্যন্ত যতগুলি প্রকল্প চালু করেছে সবগুলি সাফল্যের মুখ দেখেছে রাজ্যে। এ প্রসঙ্গে তিনি উজ্জ্বলা যোজনা, সৌভাগ্য যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত যোজনার সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন। উজ্জ্বলা প্রকল্পে ৯০% সাফল্য পেয়েছে রাজ্য, সৌভাগ্য যোজনায় ১০০% সফল বলে তিনি উল্লেখ করেন। রাজ্যে সাড়ে ৮ লক্ষ পরিবারকে আয়ুষ্মান কার্ড বিতরণ করা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, স্ব সহায়ক দলের মাধ্যমে পাহাড়ি অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১১ টি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যেই নয়টি প্রকল্প ইতিমধ্যেই অনুমোদিত হয়েছে। এই প্রকল্প গুলির কাজ বাস্তবায়িত করতে কেন্দ্রীয় সরকার ১ কোটি ২১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা দিতে সম্মত হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর-পূর্ব ভারতকে এক নতুন দিশায় নিয়ে যেতে চাইছেন। এই অঞ্চলের প্রত্যেকটি পাহাড়ি এলাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন 'মা ত্রিপুরসুন্দরীর আশীর্বাদ নিয়ে' দেশের মধ্যে প্রথম সিএনজি রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরাকে করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকেই কাজ শুরু হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বনধন প্রকল্পের মাধ্যমে মৌমাছি প্রতিপালনের দ্বারা স্বাবলম্বী হওয়ার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন মধু সংরক্ষণে নতুনত্ব নিয়ে আসা হচ্ছে। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ পর্ষদের সহায়তায় ইতিমধ্যে ২০০০ মধু চাষিকে মৌমাছি প্রতিপালনের সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে।
বনজ সম্পদ ধ্বংস না করে তাকে কাজে লাগিয়ে জনজাতিদের রোজগারের পথ তৈরি করার আহ্বান রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। কিভাবে উন্নত প্রযুক্তিতে রাজ্যে উৎপাদিত আনারস, কাঁঠালের মতো ফলকে প্রক্রিয়াকরণ করে বাজারজাত করা যায়, সেই লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ত্রিপুরা থেকে সরাসরি আগর দুবাই পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী জানান। এতে আগর চাষিরা লাভবান হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন। উত্তর পূর্ব ভারতকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দেশগুলির প্রবেশদ্বার বানাতে চান প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনিই যোরাম থাঙ্গা এবং পি এ সাংমার নাম উল্লেখ করে বলেন, তৎকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা তাদের কাছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য, রাজধানী কোথায় জানতে চাইতেন। অন্যদিকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিপুরার আইপিএফটি দলের প্রধান শ্রী এনসি দেববর্মার পরিবার সম্পর্কেও খবর রাখেন।
মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, এই সময়ে রাজ্যে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।একই সাথে নিবন্ধীকৃত বেকারের সংখ্যাও কম হয়েছে বলে জানান। প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার জন্য এখন ২ ঘন্টা ২০ মিনিটে আগরতলা থেকে দিল্লি যাওয়া সম্ভব হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন কেন্দ্রীয় সরকারের মত রাজ্য সরকার কাজে বিশ্বাস করে, তাই বর্তমান সরকার রাজ্যের স্বার্থে বিধানসভায় একদিনের অধিবেশনেই তিনটি বিল পাস করার রেকর্ড তৈরি করেছে। সিলেক্ট কমিটিতে ফেলে রেখে অযথা বিলম্বের সুযোগ দেয়া হয়নি।
এদিন অনুষ্ঠানে এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বনমন্ত্রী শ্রী মেবার কুমার জমাতিয়া সহ অন্যান্যরা। অনুষ্ঠান শেষে জনজাতিদের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি উৎপাদিত পণ্য দেখে বলেন, 'মেড ইন ত্রিপুরা' প্রকল্পের সূচনা করা হবে। যার মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য গুলি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে এবং ত্রিপুরায় রোজগারের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।