রাজ্যের ১৪ লক্ষ মানুষকে এখন পর্যন্ত হেপাটাইটিস-বি টিকাকরণের আওতায় আনা সম্ভবপর হয়েছে : মুখ্যমন্ত্ৰী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, জুন ১৫, : রাজ্যের ১৪ লক্ষ মানুষকে এখন পর্যন্ত হেপাটাইটিস-বি টিকাকরণের আওতায় আনা সম্ভবপর হয়েছে। হেপাটাইটিস-বি ও সি-এর র্যাপিড কিট বেসড শনাক্তকরণ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্তর পর্যন্ত করা হচ্ছে। ১৪ জুন দু'দিনব্যাপী ৮ম এইচ.এফ.টি. লিভারকনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। হাঁপানিয়া আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণে হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন অব ত্রিপুরা এই কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে রাজ্য ও বহির্রাজ্যের চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবকগণ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ‘দ্য ভয়েস অব লিভার' নামে একটি স্মরণিকারও আবরণ উন্মোচন করেন। এবারকার আয়োজিত কর্মসূচির থিম হলো- ‘লিভার হেলথ ফর অল, এমপাওয়ারমেন্ট অব কমিউনিটি'।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ১,৩১৩ জন হেপাটাইটিস-সি আক্রান্ত রোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা করে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা হয়েছে। তাছাড়া হেপাটাইটিস-বি আক্রান্ত ৩,৪৭৬ জনকে আজীবন বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের রাজ্যের এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতাল ছাড়াও সবগুলি জেলা হাসপাতাল এবং বিশালগড় মহকুমা হাসপাতালে হেপাটাইটিস-বি ও সি-এর বিনামূল্যে চিকিৎসা উপলব্ধ রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ওষুধও বিনামূল্যে রোগীদের দেওয়া হয়৷ রাজ্যকে হেপাটাইটিস রোগমুক্ত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ও হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন অব ত্রিপুরা যৌথভাবে কাজ করছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে হেপাটাইটিস টিকাকরণের জন্য ৬ হাজারের অধিক টিকা পাওয়া গেছে। হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন অব ত্রিপুরা রাজ্যে হেপাটাইটিস রোগ সম্পর্কে জনজাগরণ, টিকাকরণ ও চিকিৎসা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সাম্প্রতিককালে ফ্যাটি লিভার রোগের হার ক্রমশ বাড়ছে। এরফলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো রোগ বাড়ছে। উচ্চরক্তচাপ, স্থূলতা, ট্রাইগ্লিসারাইডের বৃদ্ধি, ক্রনিক লিভার ডিজিজের মূল কারণ। লিভারের রোগ প্রতিরোধে লিভার প্রতিস্থাপন হচ্ছে কার্যকরী উপায়। তাই রাজ্য সরকার লিভার প্রতিস্থাপনের ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৭ বছরে রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি স্তরে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। রাজ্যের চিকিৎসকদের সম্পর্কে মানুষের আস্থা বৃদ্ধির দরুণ চিকিৎসার জন্য বহির্রাজ্যে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। আরও ১০০ আসন বাড়ানোর কাজ চলছে। কার্ডিওলজি, নেফ্রলজি, নিউরোলজি, ইউরোলজি-এর মত আরও অনেক সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় ও মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় যথাক্রমে প্রায় ২৩৯ কোটি এবং ১৭ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গোমতী, ধলাই ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে। শীঘ্রই উত্তর ত্রিপুরা জেলা হাসপাতালেও ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করা হবে। তাছাড়া ধলাই ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় আরও দুটি নতুন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে৷ পিএম ডিভাইন প্রকল্পে ৫১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ডেন্টাল কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়ন, এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতালে মা ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বিশ্রামগঞ্জে নেশামুক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হবে
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন অব ত্রিপুরা গত ২৩ বছর ধরে জনস্বার্থে নিরলসভাবে কাজ করছে। জনসচেতনতা ও সময় সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষাই এই রোগ থেকে দূরে থাকার একমাত্র উপায়। রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হওয়ায় বর্তমানে বেসরকারি সংস্থাও রাজ্যের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন স্বনামধন্য গ্যাস্ট্রোএন্ট্রোলজিস্ট ডা. গৌরদাস চৌধুরী, হেলথ সার্ভিসেসের অধিকর্তা ডা. তপন মজুমদার, আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ডা. প্রদীপ ভৌমিক এবং সম্পাদক ডা. অর্কদীপ চৌধুরী।
আরও পড়ুন...