Hare to Whatsapp
উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে কাজ করতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, নভেম্বর ২২, ২০২৪: উন্নয়ন কর্মসূচি রূপায়ণে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা ও সততা নিয়ে কাজ করতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের ভালো ব্যবহার মানুষের হৃদয়কে যেন স্পর্শ করে। তবেই মানুষ জনপ্রতিনিধিগণের উপর বিশ্বাস রাখবে। ২১ নভেম্বর অরুন্ধতীনগরস্থিত পঞ্চায়েতরাজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের গ্রাম স্বরাজ ভবনে রাজ্যভিত্তিক জনপরিকল্পনা অভিযানে (পিপলস প্ল্যান ক্যাম্পেইন) এক কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী পঞ্চায়েতরাজ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিকে স্টেট পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর পিপলস প্ল্যান ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত স্তরে বার্ষিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে পরবর্তী অর্থবছরের জন্য উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা তৈরি করা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘে গৃহীত ১৭টি ক্ষেত্রে সুস্থায়ী উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের দেশ বদ্ধপরিকর। এরই অঙ্গ হিসেবে লোকালাইজেশন অব সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস'র ৯টি থিমকে সামনে রেখে রাজ্যের প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটি স্তরে পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে, যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ৯টি থিমের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়। এই ৯টি থিমের মধ্যে যেকোনও একটিকে সামনে রেখে প্রতিটি পঞ্চায়েতের সংকল্প নেওয়া প্রয়োজন। সংকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্সে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত যেই স্কোর করেছে এরমধ্যে যে সমস্ত থিমগুলিতে স্কোর অপেক্ষাকৃত কম সেগুলিকে সংকল্প হিসেবে গ্রহণের জন্য প্রাধান্য দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পসমূহ ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, গ্রাম উদয় হলে ভারত উদয় হবে। বর্তমান ভারতবর্ষ এখন রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পাথেয় করে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের রূপান্তরে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েতের বার্ষিক পরিকল্পনা তৈরিতে গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন দপ্তরের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রকল্পসমূহ সহ ফ্ল্যাগশিপ যেসব প্রকল্প চালু রয়েছে সবগুলিকে মাথায় রেখে পরিকল্পনা করা আবশ্যক। গ্রাম সংসদের মাধ্যমে কাজের তালিকা প্রস্তুত করা এবং তা অনুমোদনের মাধ্যমে বার্ষিক চূড়ান্ত পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করাও অত্যন্ত জরুরি।
কোনও পঞ্চায়েত এবং ভিলেজ কমিটি যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা না করতে পারে তবে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ প্রতিটি মানুষের কাছে পৌছানো সম্ভবপর নয়। সবকা সাথ সবকা বিকাশ এই দৃষ্টিভঙ্গিকে পাথেয় করে গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিদের কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ত্রিপুরায় ক্যাবিনেট থেকে শুরু করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতগুলি ই-অফিস ব্যবস্থার সাথে যুক্ত হয়েছে, যা অত্যন্ত গর্বের বিষয়। পঞ্চায়েতগুলিতে ডিজিট্যাল লেনদেনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও সুচারুভাবে কাজ করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে যৌথভাবে কাজ করা হচ্ছে। রাজ্যের ২৫টি পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠানকে আইএসও সার্টিফাইড করার প্রয়াস চলছে এবং আশা করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ২৫টি পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠান আইএসও সার্টিফাইড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। রাজ্যে কয়েকটি পঞ্চায়েত পঞ্চায়েত লার্নিং সেন্টার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। গ্রাম অন্বেষণের মাধ্যমে পঞ্চায়েতে জনপ্রতিনিধি এবং কর্মচারিগণ মডেল পঞ্চায়েত পরিদর্শনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন, যা আগামীদিনে কাজের গুণগতমান বাড়াতে আরও সহায়ক হবে। রাজ্যে ৫টি পঞ্চায়েতিরাজ প্রতিষ্ঠান মহিলা দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
...অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব ড. সন্দীপ আর রাঠোর পিপলস প্ল্যান ক্যাম্পেইনের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, পঞ্চায়েত স্তরে পরিকল্পনা নেওয়ার পাশাপাশি তার রূপায়ণের উপরও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। গ্রাম পঞ্চায়েত উন্নয়ন পরিকল্পনায় মহিলা স্বসহায়ক দলগুলির প্রত্যাশাকে অন্তর্ভুক্ত করার উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রাম সভা, মহিলা সভা, শিশু সভার গুরুত্ব সম্পর্কেও তিনি আলোকপাত করেন। রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় বিগত কয়েকবছরে যে সফলতা এসেছে সেগুলি সম্পর্কেও সচিব বিস্তারিত আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন পঞ্চায়েত দপ্তরের অধিকর্তা প্রসূন দে। অনুষ্ঠানে ৮টি জেলার জিলা পরিষদের সভাধিপতিগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্স স্কোরের ভিত্তিতে সেরা জেলা, ব্লক, পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কমিটিগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়। সেরা ৩টি জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ঊনকোটি জেলা, দ্বিতীয় হয়েছে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা এবং তৃতীয় স্থান পেয়েছে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা। সেরা ৪টি ব্লকের মধ্যে প্রথম হয়েছে কুমারঘাট ব্লক, দ্বিতীয় পদ্মবিল ব্লক, তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে যুগ্মভাবে রূপাইছড়ি ও অমরপুর ব্লক। সেরা ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ভিলেজ কাউন্সিলের মধ্যে প্রথম স্থান পেয়েছে রূপাইছড়ি ব্লকের রূপাইছড়ি ভিলেজ কাউন্সিল, দ্বিতীয় অমরপুর ব্লকের বামপুর গ্রামপঞ্চায়েত এবং যুগ্মভাবে তৃতীয় স্থান পেয়েছে অমরপুর ব্লকের পশ্চিম মালবাসা ও চড়িলাম ব্লকের মধ্য ব্রজপুর। অনুষ্ঠানে স্মার্ট অফিস ইনোভেশন বাস্তবায়নে প্রথম স্থান পেয়েছে জিরানীয়া ব্লকের পশ্চিম মজলিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এবং দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে কুমারঘাট ব্লকের ফটিকরায় গ্রাম পঞ্চায়েত। ই-অফিস ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সাতচাদ ব্লকের বিডিও অনুপম দাসকে পুরস্কৃত করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারগুলি তুলে দেন। অনুষ্ঠানে সুস্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা স্থানীয়করণের উপর একটি থিম সং-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়। তাছাড়াও ৫টি ই-বুকলেটের আবরণ উন্মোচন করা হয়। এই বইগুলি হলো পঞ্চায়েত উন্নয়ন পরিকল্পনা, গ্রাম সভা ক্রনিক্যাল, প্রশিক্ষনাম, পঞ্চায়েতের বার্ষিক প্রতিবেদন ও কর্মপরিকল্পনা (২০২৪-২৫) এবং পঞ্চায়েত ডেভেলপমেন্ট ইন্ডেক্স স্কোর কার্ড। মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিগণ বইগুলির আবরণ উন্মোচন করেন।