Hare to Whatsapp
রাজ্যে শিল্পের বাস্তুতন্ত্রকে আরও মজবুত করে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, নভেম্বর ১২, ২০২৪: শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে রাজ্যের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ঘটাতে রাজ্য সরকার অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের রাজ্যে শিল্প স্থাপনের নানা সুযোগ সুবিধা প্রদান করে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ‘উন্নতি-২০২৪' প্রকল্পটি আমাদের রাজ্য সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যের শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। ১১ নভেম্বর প্রজ্ঞাভবনে ‘উন্নতি’ প্রকল্পের উপর আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক কর্মশালার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের উদ্যোগে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে শিল্পের বাস্তুতন্ত্রকে আরও মজবুত করে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। নতুন বিনিয়োগে উৎসাহিত করার লক্ষ্যেও অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এরজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিভাগ (ডিপিআইআইটি)-কে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী৷
কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন,এই প্রকল্পে আগামী ১০ বছরে ৮৩ হাজার কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এরজন্য ১০ হাজার ৩৭ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা এই অঞ্চলের জনগণের মজবুত জীবন-জীবিকা সৃষ্টির বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গীকে প্রতিফলিত করছে।এই প্রকল্পের আওতায় ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর ইউনিটগুলিতে ন্যূনতম ১ কোটি টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রকল্প ও যন্ত্রপাতির উপর ইনসেনটিভ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক ত্রিপুরাকে জোন-বি এর অধীনে বিবেচনা করায় ত্রিপুরার শিল্প ইউনিটগুলিতে সর্বাধিক পরিমাণে ভর্তুকি পাওয়া যাবে, যা আমাদের স্থানীয় উৎপাদিত পণ্যসমূহ বহিরাজ্যের উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার সুযোগ এনে দেবে। আজকের এই কর্মশালায় মূলত ‘উন্নতি-২০২৪'-এর আওতায় সুবিধা গ্রহণের জন্য সম্ভাব্য উদ্যোক্তা এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেওয়া হবে, যাতে আমাদের রাজ্য এই প্রকল্প থেকে সর্বাধিক সুবিধা পেতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নতি-২০২৪’-প্রকল্পের জন্য রেজিস্ট্রেশন ৯ মার্চ, ২০২৪ এ চালু হয়েছে এবং ৩১ মার্চ, ২০২৬ পর্যন্ত চলবে। পোর্টালে সময়মতো রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। আমাদের রাজ্যে রেজিস্ট্রেশন ধীরে ধীরে বাড়ছে, তবে এটাকে আরও জোরদার করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নতি- ২০২৪' ছাড়াও, ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগ ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন ইনসেনটিভ স্কিম (টি আই আই পি আই এস), ২০২৪ এর রাজ্য প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করছে, যার মাধ্যমে শিল্প ইউনিটগুলিকে বিভিন্ন ভর্তুকী প্রদান করা হচ্ছে। ভৌগোলিক বাধাগুলি অতিক্রম করে আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পগুলিকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার উভয়েই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সড়ক, রেল, বিমান পরিষেবা উন্নয়নের মাধ্যমে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দিয়েছে রাজ্য সরকার এছাড়াও সমস্ত আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত শিল্প পরিকাঠামো রাজ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজ্যে বিনিয়োগের সুবিধার্থে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরে স্টেট ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন এজেন্সি (আই পি এ) স্থাপন করা হয়।শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস' রাজ্যে খুব ভালো কাজ করছে। অনলাইন সিঙ্গেল উইন্ডো পোর্টালটিও শিল্প স্থাপনে বিনিয়োগকারিদের উৎসাহিত করতে ভালো কাজ করছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাঁশ, রাবার, কৃষি-হটি পণ্য, আগর, হোটেল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইটি সেক্টর ইত্যাদি স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ সংস্থানগুলি ব্যবহার করে ত্রিপুরায় বিনিয়োগের জন্য গভীর আগ্রহ দেখাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী এছাড়াও তার ভাষনে শিল্পের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা বলেন, শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। পাশাপাশি রাজ্যে শিল্প স্থাপনে বর্হিরাজ্যের বিনিয়োগকারীদেরও উৎসাহিত করা হচ্ছে। রাজ্য সরকারের আন্তরিকতার ফলেই রাজ্যে বর্তমানে বহু ক্ষুদ্র,মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, কোনও রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে শিল্প অন্যতম ভূমিকা রাখে।কারণ শিল্পের উন্নয়ন হলেই রাজ্যের জি ডি পিও বৃদ্ধি পায়।রাজ্যে শিল্পের উন্নয়ন হওয়ার ফলেই গত তিন বছরে রাজ্যের জিডিপি ক্রমশ বেড়েছে।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রকের শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিভাগের অধিকর্তা করমপাল সিং। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান নবাদল বনিক। অনুষ্ঠানে ‘ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট পলিসি,২০২৪' পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও রাজ্যে সফলভাবে শিল্প স্থাপন করেছে এমন বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট শিল্পপতিকে সম্মানা প্রদান করা হয়।মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা তাদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন।