Hare to Whatsapp
পানীয় জল সম্প্রসারণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ৭৫ হাজার পরিবার উপকৃত হবে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে কাজ করছে রাজ্য সরকার। জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ট ত্রিপুরা গঠনে এগিয়ে চলেছে বর্তমান সরকার। ২০ সেপ্টেম্বর উদয়পুর রাজর্ষি কলাক্ষেত্র প্রাঙ্গণে রাজ্যের ১২টি শহরে মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্পে পানীয়জল সম্প্রসারণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও পানীয়জল সম্প্রসারণ মডেলের আবরণ উন্মোচন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে দীর্ঘদিন চলতে থাকা কাশ্মীর সমস্যা, উত্তরপূর্ব ভারতে উগ্রপন্থার সমস্যা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করেছেন। তেমনি দেশের নাগরিকদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ও পরিষেবা প্রদানেও কাজ করে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রী চাইছেন এক ভারত, শ্রেষ্ট ভারত গঠনে সবাই এগিয়ে আসুক এবং সেই দিশাতেই রাজ্য সরকারও কাজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রতিটি নগরের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাট, পানীয়জল, জল নিকাশী ব্যবস্থা, স্ট্রিট লাইট, পার্ক নির্মানে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর আর্থিক সহায়তায় রাজ্যের ১২টি শহর খোয়াই, মোহনপুর, রানীরবাজার, বিশ্রামগঞ্জ, মেলাঘর, উদয়পুর, অমরপুর, বিলোনিয়া, ধর্মনগর, কৈলাসহর, কুমারঘাট এবং আমবাসায় পানীয়জলের ব্যবস্থার উন্নতি সাধন, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং নিকাশী ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই ১২টি শহরের উন্নতিকল্পে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক মোট ৫৩০ কোটি টাকার আর্থিক ঋণ প্রদান করছে। যারমধ্যে পানীয়জল সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নতি সাধনে প্রথম পর্যায়ে ৩৩০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এডিবির নির্দেশিকা অনুযায়ী এই কাজ আগামী ৩৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ৭৫ হাজার পরিবারের প্রায় ৪ লক্ষ নাগরিক উপকৃত হবেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই ১২টি শহরে পানীয়জল সম্প্রসারণের পাশাপাশি ১৮ কিলোমিটার রাস্তা এবং ৪৮ কিলোমিটার পাকা ড্রেন নির্মাণের কাজও হাতে নেওয়া হয়েছে। এই কাজের জন্য ২০০ কোটি টাকার অনুমোদন পাওয়া গেছে। এর ফলে নগর এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার যেমন উন্নয়ন হবে তেমনি বর্ষার সময়ে জল নিষ্কাশন ব্যবস্থারও উন্নতি হবে। মুখ্যমন্ত্রী দপ্তরের অধিকারিকদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার জন্যও নির্দেশ দেন। তিনি এই প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, বর্তমান সরকার নতুন নতুন চিন্তা ভাবনা নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া, শহরের রাস্তাঘাট, নিকাশী ব্যবস্থার উন্নতি হলে বন্যার জল অতি সহজে নিষ্কাশিত হয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন নগর উন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নগর উন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা রজত পন্থ। ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন নগর উন্নয়ন দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকার মিহির কান্তি গোপ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উদয়পুর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন শীতল চন্দ্র মজুমদার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন,গোমতী জিলা পরিষদের সভাধিপতি দেবল দেবরায়, বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, গোমতী জেলার জেলা শাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ১২টি শহরের পানীয়জল সম্প্রসারণ প্রকল্পের উপর একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্পের গাইডলাইন এর আবরণ উন্মোচন করেন। এছাড়া, অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা জল বোর্ড এর অমরুত ২.০ প্রকল্পের অধীনে 'অমরুত মিত্র' হিসেবে ৩টি স্ব সহায়ক দলের দ্বারা জল পরীক্ষা করা এবং জল কর সংগ্রহের জন্য তাঁদের হাতে মেমেন্টো, শংসাপত্র এবং ৫ হাজার টাকা করে চেক তুলে দেন। মঞ্চে করবুক বিদ্যালয় পরিদর্শকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বন্যায় দুর্গতদের সাহায্যর্থে ৫০ হাজার টাকার চেক মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, এই প্রকল্পে ১২টি শহরে মোট ১৯টি ওভারহেড ট্যাংক তৈরী করা হবে এবং এই ট্যাংকগুলি থেকে ৩০৫ কিলোমিটার পাইপলাইন বিছিয়ে বাড়ি বাড়ি পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও রাজ্যের বাকি ৮টি নগর পঞ্চায়েত পানিসাগর, কমলপুর, জিরানীয়া, বিশালগড়, সাক্রম, শান্তিরবাজার, তেলিয়ামুড়া এবং সোনামুড়ার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩০৯ কোটি টাকার প্রকল্প এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই প্রকল্পটি রূপায়নে নগর উন্নয়ন দপ্তরের আওতায় একটি প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও নির্মাণকার্য সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১২টি শহরকে তিনটি ক্লাস্টারে ভাগ করে আগরতলা, উদয়পুর এবং কুমারঘাটকে হেডকোয়ার্টার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।