Hare to Whatsapp
বন্যায় রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে : গ্রামোন্নয়ণ দপ্তরের সচিব সন্দীপ আর রাঠোর
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪: সাম্প্রতিক বন্যায় রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় প্রায় ৫০ হাজার ঘর এবং ৬ হাজার স্থায়ী সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০৬ কোটি টাকা। ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রামোন্নয়ণ দপ্তরের সচিব সন্দীপ আর রাঠোর এই সংবাদ জানান। তিনি জানান, বন্যা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট ব্লকের বিডিও সহ আরডি এবং আরডি (পঞ্চায়েত) দপ্তরে কর্মরত জিআরএস, আরপিএম গণ অসাধারণ দৃঢ়তা এবং ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। বন্যার ফলে গ্রামীণ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারের কাছে ইতিমধ্যেই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব পেশ করা হয়েছে। এছাড়াও গ্রামোন্নয়ণ দপ্তরের মাধ্যমে রেগার নির্দেশিকা অনুসরণ করে জরুরী ডিসিল্টিং এবং ডি-ওয়াটারিং কার্যক্রমের জন্য একটি বিশদ স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (SoP) প্রস্তুত করা হয়েছে। গ্রামোন্নয়ণ দপ্তরের সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) প্রায় ৫০,০০০ অতিরিক্ত ঘর বরাদ্দ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। রাজ্য সরকারও গ্রামোন্নয়ণ দপ্তরের কাজের জন্য ৪০ কোটি টাকার সহায়তা ঘোষণা করেছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রামোন্নয়ণ দপ্তরের বিভিন্ন সাফল্যের তথ্য তুলে ধরে সচিব জানান, সম্পূর্ণতা অভিযানের অধীনে অ্যাসপিরিশনাল জেলা ধলাই এবং অ্যাসপিরিশনাল ব্লক যেমন, গঙ্গানগর, দশদা এবং দামছড়া-তে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, পুষ্টি ইত্যাদি সম্বন্ধিত ৬টি সূচক ১০০ শতাংশ স্যাচুরেশন অর্জন করেছে। দেশের ১১২টি অ্যাসপিরিশনাল জেলা এবং ৫০০ টি অ্যাসপিরিশনাল ব্লকে ব্যাপক উন্নয়নের লক্ষ্যে নীতি আয়োগের দ্বারা এই অভিযানটি এ বছরের জুলাই মাস থেকে চালু হয়েছে।মাত্র আড়াই মাসেই এই সাফল্য অর্জন করার জন্য নীতি আয়োগ রাজ্য সরকারকে অভিনন্দনও জানিয়েছে।
সচিব জানান, এম জি এন রেগা গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান প্রদান এবং স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। বর্তমান আর্থিক বছরের (২০২৪-২৫) জন্য অনুমোদিত শ্রম বাজেট হচ্ছে মোট ৩০০ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি করা। ইতিমধ্যেই ১৫৫.২৫ লক্ষ শ্রমদিবসের কাজ করা হয়েছে।এম জি এন রেগায় চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত মোট ১.৮৪ লক্ষ কাজ শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে ০.৯৯ লক্ষ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।বাকি ০.৮৫ লক্ষ কাজ এখনও চলছে। এই সমস্ত কাজের মধ্যে গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং সম্পদ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে, রেগার জন্য মোট শ্রম বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ১,২৮২.৫৯ কোটি টাকা। এরমধ্যে ৭৬৬.২৪ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই প্রদান করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এছাড়াও রাজ্য সরকার তাদের অংশ হিসাবে ৪৩.৩৮ কোটি টাকা প্রদান করেছে। সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) এখন পর্যন্ত ৩,৭৬,৭৮০ টি ঘরের মঞ্জুরী পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ৩,৫৯,৫৬৩ টি ঘরের নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। যা মঞ্জুরীকৃত ঘরের ৯৫.৪ শতাংশ। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও অন্যান্য পাহাড়ি রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা বেস্ট পারফরমিং স্টেট হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে।
সচিব জানান, দীনদয়াল অন্তোদ্যয় যোজনা-জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশনের অধীনে রাজ্যে বর্তমানে ৫২,১৩৫ টি স্ব-সহায়ক দল রয়েছে। তাতে ৪৭২,৪৩৮ জন গ্রামীণ মহিলা সদস্যা হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। এই স্ব-সহায়ক দলগুলিকে পরবর্তী সময়ে ২,৩৩৬ টি গ্রামীণ সংগঠন ও ১৩৯ টি ক্লাস্টার লেভেল সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। 2023-24 এবং 2024-২৫ অর্থবছরের এখন পর্যন্ত মহিলা স্ব-সহায়ক দলগুলিকে মোট ৩৪.৬১ কোটি টাকা রিভলবিং ফান্ড হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এখন পর্যন্ত মহিলা স্ব-সহায়ক দলগুলিকে তাদের জীবিকার উন্নয়নের জন্য মোট ২৩৪.৮৫ কোটি টাকা কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড হিসেবে প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২৩-২৪ এবং 2024-25 অর্থবছরের এখন পর্যন্ত মহিলা স্ব-সহায়ক দলগুলিকে জীবিকার উন্নয়নের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে মোট ৪৯৭.৪৭ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক লোন হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।
তিনি জানান, স্ব-সহায়ক দলের উৎপাদিত পণ্যের বিপণনের মাধ্যমে স্ব-সহায়ক দলের সদস্যাদের সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে গত ২৮শে আগস্ট, ২০২৪ তারিখে উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় আঞ্চলিক কৃষি বিপনন কর্পোরেশন (ন্যারামেক) ও ত্রিপুরা গ্রামীণ জীবিকা মিশন (টিআরএলএম)- এর মধ্যে একটি মউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের সচিব দপ্তরের ইঞ্জিয়ারিং উইংয়ের বিভিন্ন কাজের তথ্যও তুলে ধরেন। সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব কুন্তল দাস, অবর সচিব সুদীপ্ত বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।