Hare to Whatsapp
কি ভাবে পৌঁছবে জুমের বীজ, অর্থ ঠিকানাহীন জুমিয়াদের কাছে?
By Our Correspondent
আগরতলা, এপ্রিল ২৯, : বস্তূত ঠিকানা বিহীন এ টিলা সে টিলা,এ পাহাড় থেকে সে পাহাড়ে যাযাবরের মত ঘুরে বেড়ানো হতভাগ্য জুমিয়াদের জন্য রাজ্য সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত প্রশংসাযোগ্য হলেও প্রশ্ন উঠতেই পারে ওদের কাছে কিভাবে পৌঁছাবে জুমের বীজ,রেগার টাকা এবং নগদ এককালীন অনুদান?এই প্রশ্ন খুবই স্বাভাবিক এবং যুক্তিসঙ্গত। কেননা এরাজ্যের যারা জুমিয়া তাদেরতো বাড়ীঘড় নেই, স্বাভাবিক ভাবেই নেই ঠিকানা।শুনতে অবাক লাগলেও এটাই বাস্তব যে এদের অধিকাংশই রেশন কার্ড বিহীন।তাদের আছে রেশন কার্ড সেগুলো আবার হয় মহাজন নয় রেশন সপে বন্ধক রয়েছে। বিপন্ন সময়ে ডিলারদের পা হাত ধরে এরা চাল নিয়ে যাচ্ছে,ক্ষুন্নিবৃত্তি করছে। সন্তান সন্ততি দের মুখে ভাত তুলে দিচ্ছে।এই পরিস্থিতি আজ নয়, দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসছে।ডিলাররা জুমিয়াদের বন্ধক দেয়া রেশনকার্ড দিয়ে নিজেরাই চাল ও অন্যান্য সামগ্রী উঠিয়ে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়ে নিজেদের ইমারত গড়ছে।জুমিয়ারা জানতেই পারেনা তাদের কাছে কি কি সুযোগ-সুবিধা পৌচ্ছাচ্ছে? এদের নামে কত কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়ে থাকে।ডাল,আটা, কেরোসিন কবে আসে,কবে যায়, কোথায় যায় তাও ওরা জানেনা।
বছরের পর বছর ধরে চলছে সেই না জানার ট্রাডিশন, ওদের ভাগ্য বিড়ম্বনা।এই দূর্বিষহ জীবন যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়ার ও কোন উপায় নেই ওই জুমিয়াদের।
দীর্ঘ প্রায় এগারো বছর বাদে জুমিয়াদের জন্য রাজ্য সরকার পরিস্হিতির প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে জুমিয়াদের জুম চাষের জন্য রাজ্য সরকার সাহায্য করবে।প্রায় সাত হাজার জুমিয়াকে জুম চাষাবাদের জন্য বীজ দেবে সরকার।জুম নিড়ানী,জঙ্গল কাটা র জন্য এমরেগার ৬ দিনের কাছ দেয়া হবে। এছাড়াও প্রত্যেককে দেয়া হবে নগদ কিছু অর্থ। মন্ত্রী রতন লাল নাথ জানিয়েছেন ৬ শ্রম দিবসের রেগার অর্থ সরাসরি এদের ব্যান্ক একাউন্টে ঢুকে যাবে।
এই সিদ্ধান্ত যদি যথাযথ ভাবে কার্যকরী হয় তাহলে হয়তো জুমিয়াদের ভাগ্য বিড়ম্বনা কিছুদিনের জন্য হ্রাস পাবে।
রাজ্য সরকার বলছেন রাজ্যে প্রায় সাত হাজার জুমিয়া রয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে এই সংখ্যাটা প্রায় বার হাজার হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে জুমিয়াদের একটা বড় অংশের যেমন রেশনকার্ড নেই,নেই এদের বাড়ী, স্বাভাবিক ভাবেই ঠিকানা ও নেই।থাকবেন কি করে? এঁরা যে যাযাবর,এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে জুমের তাগিদে ভেসে বেড়ায়।নুতন ডেরা বাঁধে। জুম আর জুমিয়া একে অপরের সম্পৃক্ত।জুমিয়াদের কাছে জুম প্রচন্ড উন্মাদনা। ফাল্গুনের শুরুতে ই এদের মধ্যে জুমের মাদকতা পেয়ে বসে।নুতন জুম খেত খূজতে এরা এ পাহাড় ও পাহাড় করে।টিলাভূমির চিলতে পেলেই দাগ কাটে, টং তুলে, চৈত্র রং শুরুতে জঙল কাটে, আগুন দেয়। বৈশাখের শুরুতে বৃষ্টির পর মাটি নরম হলেই শুরু করে বীজ রোপনের পালা।শুধু ধান নয়,নানা সবজীর বীজ পূতে দেয়।মাস খানেক বাদেই শুরু হয় সাফাই বা নিড়ী।শাক সবজী ধানের আগেই উঠে যায়,নিয়ে আসতে শুরু করে বাজার হাটে। কিন্তু সুদখোড় মহাজন ঠিক খবর রাখে কখন সবজী উঠবে, বাজারে যাবে।এঁরা কাকভোরে বাড়ী মানে অস্হায়ী ডেরায় হানা দেয়,নিয়ে আসতে শুরু করে জলের দরে শাকসবজি। কানাকড়িও জুটেনা জুমিয়াদের কপালে। এদের কান্নায় মহাজনদের হৃদয় গলে না বরং কঠোর হয়ে যায়।দশ টাকা কেজি দরে র সবজি তিনটাকায় কিনে নিয়ে হিসাব কষে। ওজনের কারচুপির কথা বলে লাভ নেই।আমি নিজেই বছরের পর বছর দেখেছি মহাজনদের ঠগ,বাটপারী। এই মহাজনী ব্যবসায় তারা যুক্ত এদের প্রায় সবার রাজধানী আগরতলায় দালান বাড়ী,গাড়ী রয়েছে।
জুমিয়াদের তখন এই অবস্থা তখন সরকারের সিদ্ধান্ত কি ভাবে কার্যকরী হবে।জুমিয়ারা জানবেই কি ভাবে? কবে, কোথায় বীজ দেয়া হবে এটাও জানবে কিভাবে? তদোপরী এখন লকডাউন।যানবাহন চলাচল করে না।যেখানে বীজ দেয়া হবে, সেখানেই যাবে কিভাবে? এসব সঙ্গত প্রশ্ন।
এদের বেশিরভাগের ব্যান্কে কোন একাউন্ট নেই। থাকবেই বা কি করে? টাকাই একাউন্টে আসবে কি করে।
ব্যান্ক একাউন্ট থাকলেই টাকা যাবে বা ঢুকবে। এক্ষেত্রে বিজন্যাস করেসপন্ডেন্ট রা টাকা দিয়ে আস্তে পারে।সে আশাও গুড়ে বালি।তবে কি হবে?
বর্তমান সরকার বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী যদি জুমিয়াদের এই বিষয়টি নিজে তদারকি করেন তাহলে হয়তো জুমিয়াদের বন্চনা, বিড়ম্বনা দূর হতে পারে।
মনে রাখতে হবে এই সব কর্মসূচি কিন্তু ব্লক স্তরেই রুপায়িত হয়ে থাকে।বিডিওরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অবলম্বন করে থাকে। অভিযোগ একশ্রেনীর টাউট,সিকি নেতা গলায় গেরুয়া মাফলার ঝুলিয়ে বিডিওদের অফিস,কক্ষ বা তার আশপাশে ঘোরাফেরা করে থাকে। এঁরা বিডিওদের নানাভাবে প্রভাবিত করে নিজেদের পকেট ভারী করে থাকে।এটা আগেও ছিল, এখনও আছে, ভবিষ্যতে ও থাকবে হয়তোবা।
মনে রাখতেই হবে সামনেই কিন্তু ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের নির্বাচন।জুমিয়াদের স্বার্থে গৃহীত সরকারী সিদ্ধান্ত যদি পন্চাশ শতাংশ ও বাস্তবায়িত হয় তাহলে জুমিয়াদের সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট রাও লাভ কুড়োতে পারবে।