Hare to Whatsapp
রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় ৪,২৭৯ কিমি রাস্তা-১, ১৮২টি লিফট ইরিগেশন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৪: রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় ৪২৭১ কিমি রাস্তা এবং ১৮৫টি ব্রীজ ও কালভার্ট সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রবল স্রোতে জল সমতলে নামার ফলে ব্যাপক ভূমিধস এবং নদীর তীরবর্তী এলাকা ভাঙ্গনের ফলে রাস্তাঘাট, কালভার্ট ও ব্রীজের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর আগরতলা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ত (সড়ক ও ব্রীজ), জলসম্পদ ও স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে একথা জানিয়েছেন। রাজ্যের সাম্প্রতিক বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে দপ্তরের গৃহীত পদক্ষেপ এবং পুনরুদ্ধার কাজের অগ্রগতি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরে সচিব কিরণ গিত্যে জানান, সবমিলিয়ে পুনরুদ্ধারের কাজে আনুমানিক খরচ প্রায় ২ হাজার ১৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ২০০ কিমি রাস্তার পুনরুদ্ধারের কাজ শেষ হয়েছে এবং আরও ৭০০ কিমি রাস্তার কাজ চলছে। আসন্ন দুর্গাপূজার আগে অধিকাংশ রাস্তার কাজ শেষ করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। রাস্তা এবং সেতু পুনরুদ্ধারের কাজে অর্থদপ্তর ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে বলে সচিব কিরণ গিত্যে জানিয়েছেন। এনএইচ -৮ এবং এম এইচ- ২০৮ উভয় জাতীয় সড়কই বর্তমানে চালু রয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে সেচ দপ্তরের ক্ষয়ক্ষতি এবং পুনরুদ্ধার কাজের উল্লেখ করে সচিব কিরণ দিতো জানান, সেচ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ১,৫৯৫টি লিফট ইরিগেশন প্রকল্পের মধ্যে ১, ১৮২টি প্রকল্প ক্ষতিগ্রন্থ। ৭টি হাই পাওয়ার লিফট ইরিগেশন স্কিমের মধ্যে ৫টিই অচল। ৩৫৪টি গভীর নলকুপের মধ্যে ২৫২টি এবং ৪৮টি ডাইভারসন স্কিমে ৪২টি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ১,০৬০টি অগভীর নলকূপের মধ্যে ৭২৪টি এবং মাঝারি সেচ প্রকল্পের ৩টির মধ্যে তিনটিই নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও ৯২টি সুইচ গেট এবং ৯৭ কিমি নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সব মিলিয়ে পূর্ত দপ্তরের জলসম্পদ বিভাগের সার্বিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা। শীতকালীন ফসল এবং সব্জি চাষের জন্য দপ্তরের পক্ষ থেকে সেচ প্রকল্পগুলোর মেরামতি ও সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে বলে দপ্তরের সচিব জানিয়েছেন।
সেচ প্রকল্পগুলির সংস্কার ও মেরামতির জন্য অর্থ দপ্তরের পক্ষ থেকে ৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দপ্তরের পক্ষ থেকে ১৪০টি লিফট ইরিগেশন স্কিম, ২টি হাই পাওয়ার লিফট ইরিগেশন, ১৮টি গভীর নলকুপ, ২৭টি অগভীর নলকূপ এবং ৭৫০ মিটার নদীর বাঁধ মেরামতি ও সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব জানান, সাম্প্রতিক এই বন্যায় রাজ্যের ১৫টি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ৩টি কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, ৮৩টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যার আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাসমূহে নিরাপদ জায়গায় জল সংরক্ষণ এবং জল ফুটিয়ে পান করতে নির্দেশিকা জারী করা হয়েছে। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত বন্যা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় ২,৭৪টি স্বাস্থ্য শিবিরে ১ লক্ষ ১০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা করা হয়েছে। চারটি রেপিড রেসপন্স টিম বন্যা কবলিত এলাকায় প্রতিনিয়ত পরিদর্শন করছেন। স্বাস্থ্য সচিব আরও জানান, কোথাও কোন ঔষধের ঘাটতি নেই। প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ঔষধের মজুত রাজ্যে রয়েছে। কোন জায়গা থেকে এখন পর্যন্ত ডায়ারিয়া রোগের প্রার্দুভাবের খবর নেই।
সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে বন্যা ও বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা এখন পর্যন্ত ১,৭৫৭টি আাণ শিবির পরিদর্শন করে ৪১,৯২৬টি পরিবারকে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করেছেন। কন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে যথাযথ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জনস্বাস্থ্য নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে মোট ৭৩১ ব্যাগ ব্রিচিং পাউডার বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। জল জমাকৃত অঞ্চলে নিরাপদ স্বাভাবিক প্রসব করানোর জন্য চিকিৎসক, নার্সিং অফিসার, কমিউনিটি হেলথ অফিসার এবং এনএমগণ সংশ্লিষ্ট বাড়ি পরিদর্শন করছেন। রাজ্যে বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ মজুত রয়েছে। আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও বিলোনীয়া মহকুমা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গতকাল বিলোনীয়া মহকুমার মাইছড়াতে এক বিশেষ স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ১৩ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ জেলা সফরে এই স্বাস্থ্য শিবিরটি পরিদর্শন করেন। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডা. অঞ্জন দাস, জলসম্পদ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য বাস্তুকার সুধন দেববর্মা, পিএমজিএসওয়াই'র মুখ্য বাস্তুকার বিমল দাস এবং পিডব্লিউডিএনএইচ'র মুখ্য বাস্তুকার অমিত দাস প্রমুখ।