Hare to Whatsapp
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন জনসচেতনতা : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪: জনসচেতনতা ও সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব। এজন্য যানবাহন চালক, সহযাত্রী ও পথচারীদের সড়ক সুরক্ষা বিষয়ক সমস্ত নিয়মাবলী মেনে চলা দরকার। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন জনসচেতনতা। ৮ সেপ্টেম্বর আগরতলার স্বামীবিবেকানন্দ ময়দানে পরিবহন দপ্তর আয়োজিত সড়ক সুরক্ষা ইভেন্ট কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। উল্লেখ্য, সড়ক সুরক্ষা ইভেন্ট কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে পরিবহণ দপ্তর কর্তৃক রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের জন্য ৮টি ইন্টারসেপ্টর গাড়ি এবং জেলা পরিবহণ আধিকারিকদের অধীনে ৮টি গাড়ি সহ মোট ১৬টি যানবাহনের সূচনা, জিরানীয়াস্থিত ইনস্টিটিউট অব ড্রাইভিং এন্ড ট্রেইনিং রিসার্চ-এ ৪৫ জন মহিলাকে একমাসব্যাপী ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের উদ্বোধন, সাংবাদিকদের হেলমেট প্রদান এবং সড়ক নিরাপত্তা নির্দেশিকা সংক্রান্ত দু'টি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন। অনুষ্ঠানে সবুজ পতাকা নেড়ে মুখ্যমন্ত্রী, পরিবহণ মন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথিগণ ১৬টি যানবাহণের সূচনা করেন। তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী, পরিবহন মন্ত্রী ও অন্যান্য অতিথিগণ ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে মহিলাদের হাতে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট এবং সাংবাদিকদের হাতে হেলমেট তুলে দেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, কোথাও কোনও ব্যক্তি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে তার প্রাণ বাঁচাতে তাৎক্ষণিক আমাদের সকলকে মানবিকবোধ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। গোল্ডেন আওয়ারের মধ্যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত লোকটিকে হাসপাতালে পৌছাতে হবে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ভারতে প্রতিবছর প্রায় দেড় লক্ষ লোক প্রাণ হারাচ্ছেন ও প্রায় ৫ লক্ষ লোক আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়ছেন। নেশা আসক্ত হয়ে যানবাহন চালানো, ফুটপাত ব্যবহার না করা, যত্রতত্র পার্কিং করে চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা ইত্যাদি কারণেই সড়ক দুর্ঘটনাগুলি ঘটে থাকে। গাড়ি চালানোর সময় সচেতনতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরী। এতে করে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। ট্রাফিক নিয়মবিধি মেনেচলা ও সড়ক সুরক্ষার বিষয়ে জনসচেতনতা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস করা সম্ভব।
তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচিগুলির বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া আবশ্যক। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আরক্ষা প্রশাসন, পরিবহন দপ্তর, পূর্ত দপ্তর সহ ট্রাফিক শাখা ও স্বাস্থ্য দপ্তর সম্মিলিতভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় বর্তমানে রেজিস্ট্রিকৃত যানবাহনের সংখ্যা ৭ লক্ষ ৮৭ হাজার ২০৩টি। এর মধ্যে দ্বিচক্র যানের সংখ্যা ৫ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫১৯টি। এই যানবাহনগুলির সুষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রণ ও সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য পরিবহণ দপ্তর থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। স্টেট রোড সেফটি কাউন্সিল, রোড সেফটি কমিটি, লিড এজেন্সি গঠিত হয়েছে। গাড়িতে সিট বেল্ট পরিধান ও বাইকের চালক ও পেছনে বসা বাইক আরোহীর জন্য হেলমেট পরিধান বাধ্যতামূলকের নির্দেশিকা রয়েছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত লোকেদের গোল্ডেন আওয়ারে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তাদের প্রাণ বাচাতে সক্ষম লোকেদের জন্য ৫ হাজার টাকার গুড সামারিটেন পুরস্কারের সংস্থান রয়েছে। এই মর্মে জেলাপর্যায়ে এপ্রাইজেল কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া জেলা ও মহকুমা রোড সেফটি কমিটিও রয়েছে। এসমস্ত কমিটিগুলির মনিটরিংএর উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে পরিবহণ মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে পরিবহণ দপ্তরের উদ্যোগে সড়ক সুরক্ষা পর্যবেক্ষণের জন্য আজ জেলা পরিবহণ আধিকারিকদের অধীনে ৮টি গাড়ি এবং আরক্ষা দপ্তর তথা রাজ্য ট্রাফিক পুলিশের জন্য ৮টি গাড়ি প্রদান করা হয়েছে। সঠিক পরিকাঠামোর মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে অনেকেই অকালে মৃত্যুবরণ করছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহু পরিবার। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনাগুলি ঘটছে প্রধাণত জনসচেতনতার অভাবে। তিনি বলেন, আগরতলা সহ সারা রাজ্যে রাস্তাঘাটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ৮ লক্ষ। এর মধ্যে ৫ লক্ষের বেশী দ্বিচক্র যান। পরিবহন মন্ত্রী বলেন, জনসচেতনতা বাড়াতে ও দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র ও বিধায়ক দীপক মজুদার, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পরিবহন দপ্তরের সচিব সি কে জমাতিয়া। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজিপি (ইন্টিলিজেন্স) অনুরাগ। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন পরিবহন দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব সুব্রত চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বন্যা পীড়িতদের সাহায্যার্থে পরিবহন দপ্তরের কর্মচারিগণ মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৫০ টাকা দান করেন। পরিবহন মন্ত্রী এই অর্থরাশির চেক মুখ্যমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।