Hare to Whatsapp

শিক্ষার মানোন্নয়নে নতুন নতুন প্রকল্প ও সুযোগ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪: রাজ্যের বর্তমান সরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। এজন্য এই ক্ষেত্র দু'টির পরিকাঠামোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নের জন্য নতুন নতুন প্রকল্প ও সুযোগ সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোন আপোষ করা হবে না। ৭ সেপ্টেম্বর কৈলাসহরের রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের বর্ষব্যাপী প্লাটিনাম জুবিলি উৎসবের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী আজ রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের ৭৫ বছরে পদার্পণ উৎসবে অংশগ্রহণের আগে কৈলাসহর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম পরিদর্শন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিঙ্কু রায়।

রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের প্লাটিনাম জুবিলি উৎসবের সূচনার পূর্বে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা মহাবিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে ফটো গ্যালারি ও মেগা রক্তদান শিবিরেরও উদ্বোধন করেন। পরে উদ্বোধকের ভাষণে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, মহিলাদের সমাজে এগিয়ে যেতে আমরা নানাভাবে উৎসাহিত করছি। কলেজ স্তরে এখন পড়াশোনা করতে মহিলাদের কোন ফি দিতে হয়না। চাকুরিতে মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা শুধু বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও এর শ্লোগানই দেইনা তার জন্য কাজ করেও দেখাই। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচেষ্টায় দেশে চালু হয়েছে। ত্রিপুরায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি চালু করা হয়েছে। সেগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি বলেন, ন্যাশানাল এডুকেশন পলিসির ইতিবাচক প্রভাব সুদুর প্রসারী। পরবর্তী প্রজন্ম এর সুফল ভোগ করবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যে ‘লক্ষ্য’ নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। রাজ্যের শিক্ষিত যুবক যুবতীর ইউপিএসসি পরীক্ষায় আইএএস/আইপিএস এর মতো প্রশাসনিক পদ অর্জন করার জন্য এই প্রকল্প থেকে সুবিধা নিতে পারবে। এই প্রকল্পের অধীনে এই সমস্ত প্রশাসনিক পদে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যারা সাফল্য লাভ করে তাদের ৫ লক্ষ ২০ হাজার আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত ৯ জনকে লক্ষ্য প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিএড অনুপ্রেরনা যোজনা চালু করা হয়েছিল ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে। এই প্রকল্পে ছাত্রছাত্রীরা যে ব্যাঙ্ক ঋণ নেয় তার ভর্তুকী সরকার থেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৭৯৬ জন ছাত্রছাত্রী উপকৃত হয়েছেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে আগরতলায় নিপল আইটি চালু করা হয়েছে। ত্রিপুরা ও বহিরাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা সেই কলেজে পাঠরত। আগরতলায় বুদ্ধমন্দির সংলগ্ন এলাকায় ন্যাশনাল ফরেন্সিক সাইয়েন্স ইউনিভারসিটি ২০২১-২২ অর্থবর্ষ থেকে চালু করা হয়েছে। ৩টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজ এই সরকারের সময়কালে তৈরী করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হচ্ছে। জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় এই সরকার চালু করেছে। দিব্যাঙ্গজনদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য উৎসাহিত করতে প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা ও ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত ২৩ জন দিব্যাঙ্গন, দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রী এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে। তিনি জানান, রাজ্যে আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হচ্ছে। সবকটিতে যেন ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি চালু হয় তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন রাজ্যের একমাত্র ডেন্টাল কলেজ থেকে প্রথম ব্যাচের রেজাল্ট বের হয়েছে। তিনি বলেন, সব মিলিয়ে রাজ্যে আমরা মেডিক্যাল ও এডুকেশন হাব তৈরী করতে চাইছি। এজন্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের উপরও জোর দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের মন্ত্রী টিঙ্কু রায় বলেন, এতদিন যাবৎ যোগাযোগ ব্যবস্থায় কৈলাসহর অনেক পুরানো মহকুমা হয়েও পিছিয়ে ছিল। সেই গ্লানি আমরা এখন কাটিয়ে উঠেছি। এখন কৈলাসহর থেকে খুব সহজেই যেকোন স্থানে যাতায়াত করা যায়। তা সম্ভব হয়েছে রাস্তার প্রভুত উন্নয়নের মাধ্যমে। তিনি জানান, শুধু রাস্তাঘাটই নয় সমগ্র ঊনকোটি জেলায় উন্নায়নের অনেকগুলি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা। স্বাগত ভাষণ রাখেন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. পিনাকী পাল। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্লাটিনাম জুবিলি উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সঞ্জীব চৌধুরী। অনুষ্ঠানে মহাবিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রয়াত অধ্যক্ষদের মরনোত্তর সম্মাননা এবং প্রাক্তন ও বর্তমান অধ্যক্ষদের সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক ও কুমারঘাট ব্লকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ১ লক্ষ টাকার চেক মুখ্যমন্ত্রী মাগ তহবিলে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে সম্প্রতি বন্যার জলে ডুবে মৃত নীরচাংলাল হালামের পরিবারের সদস্যদের হাতে ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকার চেক এবং বিদ্যুৎ চমকে মৃত বিমল দাস চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের হাতে ৪ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উচ্চশিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা অনিমেষ দেববর্মা, ত্রিপুরা ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান মবশ্বর আলি, জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা, পুলিশ সুপার কান্তা জাঙ্গির ও কৈলাসহর রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের মহারাজ স্বামী খিরিজানন্দজী।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন কৈলাসহর পানিচৌকি বাজারে গনেশ পূজা পরিদর্শন করেন। তাঁর সাথে ছিলেন যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া মন্ত্রী টিঙ্কু রায় ও কৈলাসহর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন চপলা দেবরায়। এখানে কৈলাসহর মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ২১ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার হাতে।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.