Hare to Whatsapp
বন্যার ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও পরিকাঠামো পুনঃনির্মাণের জন্য ৫৬৪ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪: সাম্প্রতিক বন্যায় সারা রাজ্যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের মানুষের জন্য অবিলম্বে ত্রাণের ব্যবস্থা করতে ও পরিকাঠামো পুনঃনির্মাণের জন্য রাজ্য সরকার ৫৬৪ কোটি টাকার একটি প্যাকেজ রূপায়ণ করবে। ৬ সেপ্টেম্বর বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা এই প্যাকেজের কথা ঘোষণা করেন। বিধানসভায় তিনি জানান, রাজ্য সরকারের তহবিল থেকে ঘোষিত প্যাকেজের টাকা দেওয়া হবে। সাম্প্রতিক বন্যায় রাস্তাঘাট, সেতু, বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন, কৃষি ও উদ্যান, চাষযোগ্য কৃষি জমি, মৎস্যচাষ, প্রাণীসম্পদ, বিভিন্ন নদীর বাধ, মানুষের ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের ত্রাণ ও পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে ৫৬৪ কোটি টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরকে দেওয়া হয়েছে ৭০ কোটি টাকা। পরবর্তী দু'মাসের জন্য প্রতি মাসে রেশন কার্ড প্রতি অতিরিক্ত ১০ কেজি চাল দেওয়া হবে। তাতে রাজ্যের প্রায় ৯ লক্ষ ৮০ হাজার রেশন ভোক্তা উপকৃত হবেন। খারিফ ও রবি শষ্য উৎপাদনের জন্য বীজ ও সার প্রদান এবং অন্যান্য কৃষি সহায়তার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে কৃষি দপ্তরের জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। হর্টিকালচার দপ্তরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ কোটি টাকা। শীতকালীন সব্জি চাষ ও ফুল চাষ, পান বরজ মেরামত, সার জাতীয় উপকরণ এবং ক্ষতিগ্রস্থ জমি থেকে পলি অপসারণের জন্য হর্টিকালচার দপ্তর আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। মাছের উৎপাদনের জন্য মাছের পোনা কেনা, মৎস্য খামার এবং হ্যাচারি মালিকদের আর্থিক সহায়তা করার জন্য মৎস্য দপ্তরের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রাণীদের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান, প্রাণী খামারগুলিতে জল, ঔষুধ সরবরাহ সহ প্রাণী খাদ্যের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য কাজের জন্য প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের জন্য ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বই সরবরাহ করা এবং স্কুল/কলেজ মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য শিক্ষা দপ্তরকে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পিডব্লিউডি (ডিডব্লিউএস) দপ্তরকে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলিকে পানীয়জল সরবরাহ এবং পাইপলাইনের মাধ্যমে জলের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে এই টাকা ব্যয় করা হবে।
শহরের রাস্তা ও পয়প্রনালী ব্যবস্থার মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য নগর উন্নয়ন দপ্তরকে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গ্রামীণ রাস্তা, ড্রেইন এবং অফিস ভবনের মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য গ্রামোন্নয়ন দপ্তরকে বরাদ্দ করা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য দপ্তরের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১০ কোটি টাকা। জীবানুমুক্তকরণ ও ডায়রিয়া প্রতিরোধে ২ হাজার ব্যাগ ব্লিচিং পাউডার, ২ লক্ষ ওআরএস প্যাকেট, ২০ লক্ষ হ্যালোজেন ট্যাবলেট, ১০ লক্ষ জিঙ্ক ট্যাবলেট, জ্বরের ঔষধ এবং চর্মরোগের ঔষধ কেনার জন্য এই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পূর্ত (ডব্লিউআর) এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। নদীর বাঁধ, চ্যানেল, প্রধান প্রকল্পগুলির সংস্কার, মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য এই টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ পরিবাহী লাইন, ট্রান্সফরমার, কন্ডাক্টর, তার এবং আনুষঙ্গিক সামগ্রীর দ্রুত সংস্কার এবং রক্ষনাবেক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ দপ্তরকে বরাদ্দ করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রাস্তা ও ড্রেইনের পুনঃনির্মান, সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষণের জন্য পূর্ত (রোডস এন্ড বিল্ডিং) দপ্তরকে বরাদ্দ করা হয়েছে ২০০ কোটি টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানান, জেলাশাসক এবং বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকগণ ক্ষেত্ৰ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করেছেন। প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়নের পর রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার জন্য একটি স্মারকলিপি জমা দেবে। রাজ্যকে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে এবং উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে পরিকাঠামো পুনঃনির্মাণ করতে কয়েকমাস সময় লাগবে। মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন এই প্যাকেজ বন্যা দুর্গত মানুষের ত্রাণে এবং সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।