কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ৫জি প্রযুক্তি প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন এবং সমৃদ্ধির পথপ্রদর্শক : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মে ২৪, : ২৩ মে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা কেন্দ্রীয় সরকারের উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রক এবং Electronics and IT মন্ত্রকের সহায়তায় আয়োজিত 'IT for Ashtalaxmi: Beyond the Bits and Bytes, Into Al and 5G' শীর্ষক আলোচনায় যোগ দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ নাম ‘অষ্টলক্ষ্মী' দিয়েছেন। নতুন দিল্লিস্থিত ভারত মন্ডপমে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় তিনি বলেন, এই রাজ্যগুলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাচুর্যপূর্ণ সম্পদের দ্বারা সমৃদ্ধ। এগুলি সত্যিই মা লক্ষ্মীর প্রতিচ্ছবি, যিনি ধন, জ্ঞান, শক্তি ও সমৃদ্ধির বহুমুখী আশীর্বাদের প্রতীক।
এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রণালয়কে এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 5G প্রযুক্তি যেখানে তথ্য দ্রুত ও কম Latency-তে পাঠাতে সক্ষম সেখানে AI উন্নত Algorithms ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কার্যক্রম সহজতর করে, যার ফলে গতি, দক্ষতা ও ব্যয় সাশ্রয় হয়। তাই 5G এবং AI পরস্পরের জন্য পরিপূরক। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, 5G ও AI গ্রহণের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন ও সমৃদ্ধির পথ উন্মোচন করতে পারব। 5G প্রযুক্তি শুধু মোবাইল নেটওয়ার্কের উন্নতি নয়, এটি একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যম। প্রতি সেকেন্ডে 10 GBPS ডেটা পাঠানোর ক্ষমতা এবং ১ মিলিসেকেন্ডেরও কম Latency সহ, 5G প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১০ লাখ ডিভাইস সংযুক্ত করতে পারে, যা আমাদের অঞ্চলের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে। AI ও 5G কৃষি, সংস্কৃতি ও সৃজনশীল অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং সুশাসনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হতে পারে। সঠিক কৃষির জন্য AI ভিত্তিক আবহাওয়ার সতর্কতা ও আই.ও.টি. সংযুক্ত মাটির সেন্সর ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। সংস্কৃতি ও সৃজনশীল অর্থনীতিতে 5G প্রযুক্তি শিল্পীদের তাদের পণ্য ভার্চুয়াল Storefront ও 3D মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে প্রদর্শনের সুযোগ করে দিতে পারে। এছাড়াও, 5G সমর্থিত শ্রেণিকক্ষ শিক্ষাক্ষেত্রে ভৌগোলিক প্রতিবন্ধকতা দূর করে যা শিখন ফলাফল উন্নত করতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যসেবায়, AI ভিত্তিক টেলিমেডিসিন প্ল্যাটফর্ম রিয়েল-টাইমে রোগীর স্বাস্থ্যপরীক্ষা, মেডিকেল ইতিহাস এবং রেডিওলজি স্ক্যান বিশ্লেষণ করতে পারে, যা নির্ভুল প্রাথমিক রোগ নির্ণয়ে সহায়ক হবে। এর ফলে সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চল এক নতুন যুগে প্রবেশ করে সবার জন্য উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, ত্রিপুরা 5G প্রযুক্তি চালুর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, যেখানে রাজ্যের সমস্ত শহর এবং ৫৮৩টি গ্রাম ইতোমধ্যেই সংযুক্ত রয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্য টেলিকম পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য নীতি প্রণয়ন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ইনফরমেশন Technology Policy 2022 এবং Data Centre Policy 2021.
সরকার ডাটা সেন্টার স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দ করেছে, যার মধ্যে একটি এয়ারটেলকে দেওয়া হয়েছে, যা সমগ্র পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের জন্য আগরতলায় স্থাপিত হবে। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ত্রিপুরা সরকার জাতীয় ই-গভর্নেন্স বিভাগ এবং ভারতের ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় "সুশাসনের জন্য AI: স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও প্রভাব বৃদ্ধি" বিষয়ক একটি কর্মশালার আয়োজন করেছে। এই কর্মশালা সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা বৃদ্ধি, বিশাল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষনের সক্ষমতা এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হতে পারে। তাছাড়া সেবার মানোন্নয়ন, যেখানে AI-চালিত Chatbot নাগরিকদের দ্রুত এবং দক্ষতার সাথে সরকারি পরিষেবা প্রদান করতে পারে। স্বচ্ছতা ও দক্ষতা উন্নয়ন, যেখানে AI স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত কাজগুলি সম্পাদন করতে পারে, যা গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য সম্পদ সংরক্ষণে সহায়ক হবে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আরও উল্লেখ করেন ত্রিপুরা রাজ্যে পেপারলেস প্রশাসন চালু করা হয়েছে। যার ফলে ফাইল নিষ্পত্তির সময় ৯ দিন থেকে কমিয়ে ৩ দিনে আনা হয়েছে। এই ব্যবস্থা চালুর ফলে প্রতি বছর ৫০ কোটি টাকারও বেশি সাশ্রয় হচ্ছে। এই ডিজিটাল রূপান্তর প্রশাসনের স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, আমরা উত্তর- পূর্বাঞ্চলের সব রাজ্যে প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন ও সমৃদ্ধি আনতে AI ও 5G প্রযুক্তি কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এরমধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নির্দিষ্ট পরিকাঠামো উন্নয়ন, Single Window Digital Platform চালু করা যা ডিজিটাল ইন্টারফেসের মাধ্যমে সরকারি পরিষেবাগুলির সহজলভ্যতা সুনিশ্চিত করবে, বিভাগভিত্তিক AI পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালু করা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো, যুব সমাজকে ভবিষ্যতের দক্ষতায় প্রস্তুত করা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিকাঠামো গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি যেখানে AI এবং 5G প্রযুক্তি প্রবৃদ্ধি, উদ্ভাবন এবং সমৃদ্ধির পথপ্রদর্শক হবে। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগের জন্য সকল বিনিয়োগকারী, শিল্প ও ব্যবসায়িক সংস্থাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই অনুষ্ঠানে ড. চন্দ্রশেখর পেদ্মাসানি (গ্রামীণ উন্নয়ন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী), মুখ্যসচিব, বিভিন্ন বিনিয়োগকারী, শিল্প ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন...