Hare to Whatsapp
বন্যা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে শাসক ও বিরোধী দলের সদস্যগণ বিধানসভার গঠনমূলক যেসমস্ত প্রস্তাব দিয়েছেন তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে : পরিষদীয় মন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৪: রাজ্যে গত ১৯ আগস্ট থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে অতি ভারী বর্ষণের ফলে এক অভূতপূর্ব ও বিধ্বংসী বন্যার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে শাসক ও বিরোধী দলের সদস্যগণ বিধানসভায় গঠনমূলক যেসমস্ত প্রস্তাব দিয়েছেন তা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। ৪ সেপ্টেম্বর বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী এবং বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ আনীত জনস্বার্থে আনা জরুরি বিষয় ‘সম্প্রতি রাজ্যে ভয়াবহ বন্যা ও সরকারি বেসরকারি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ সম্পর্কে’-এর উপর সংক্ষিপ্ত সময়ের আলোচনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ একথা বলেন। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির উপর আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, রাজ্যের ১২টি নদীর মধ্যে উত্তর ত্রিপুরা জেলার জুরি নদী ছাড়া ১১টি নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়েছিল। বন্যা ও ভূমিধসে প্রায় সবক্ষেত্রেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্যের প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে ও ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। রাজ্যজুড়ে ৮২১টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। এগুলিতে ১ লক্ষ ৪৯ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আলোচনায় পরিষদীয় মন্ত্রী আরও বলেন, এবারের বন্যার ফলে ভূমিধসে ১৯ জন, জলে ডুবে ১২ জন, মাটির দেওয়াল ধসে ১ জন মারা গেছেন। নিখোঁজ রয়েছেন ১ জন এবং আহত হয়েছেন ২ জন। পরিষদীয় মন্ত্রী রতনলাল নাথ আরও বলেন, বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৪ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা চূড়ান্ত মূল্যায়নের পর এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। সবচেয়ে বেশি ৩২৫১ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে উদ্যানপালন ও ভূমি সংরক্ষণ দপ্তরের। এছাড়া জলসম্পদ দপ্তরের ৩ হাজার ৮৩ কোটি টাকা, গ্রামীণ উন্নয়ন ও বাড়িঘরের ক্ষতি সহ ৩ হাজার ৯ কোটি টাকা এবং পিডব্লউডি (আর অ্যান্ড বি) ১ হাজার ৯০০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ দপ্তরের ৬৯৩ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিতে উদ্ধার কার্য পরিচালনায় এসডিআরএফ-এর ৩২টি দল, টিএসআর-এর ১৪টি ব্যাটেলিয়নের কর্মী সহ এনডিআরএফ-এর ১১টি ও ৮টি অতিরিক্ত দল, ১ হাজার জন প্রশিক্ষিত সিভিল ডিফেন্স ভলান্টিয়ার, ৯০০ জন আপদা মিত্র স্বেচ্ছাসেবক সহ বিভিন্ন দপ্তরের টাস্ক ফোর্সকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। গোমতী ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৩টি হেলিকপ্টার মোতায়েন করে খাবারের প্যাকেট পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।
পরিষদীয় মন্ত্রী আরও বলেন, আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৩০ কোটি টাকার উপর অর্থরাশি দান করা হয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে খাদ্যমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী শাসক ও বিরোধী দলের সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে গঠনমূলকভাবে রাজ্যকে এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আলোচনা করার জন্য ধন্যবাদ জানান।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ত্রাণ তহবিল থেকে বন্যায় মৃত ব্যক্তিদের নিকট আত্মীয়দের ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিসগড়, আসাম, অরুণাচল প্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য থেকেও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করা হয়েছে। খাদ্য দপ্তর থেকে ত্রাণ শিবিরে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। বন্যায় কিছু কিছু রেশন শপের সামগ্রীও নষ্ট হয়েছে। তার মূল্যায়নের কাজও চলছে। তিনি আরও বলেন, শ্রম দপ্তর থেকে ৪২ হাজার ৯৮১ জন নির্মাণ শ্রমিকদের এককালীন ৪ হাজার টাকার সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আলোচনা রাখতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী বন্যা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজ্য সরকারকে বিভিন্ন প্রস্তাব প্রদান করেন। এরমধ্যে রাজ্যের বিপর্যয়কে জাতীয় বিপর্যয় হিসেবে ঘোষণা, পরিকাঠামো ক্ষতি নিরূপণের জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন, ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের উদ্যোগ, যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পুনরায় ঘর প্রদানের বিষয়ে মূল্যায়নের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন। আলোচনায় বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ বন্যা পরিস্থিতি থেকে রাজ্যকে বেরিয়ে আসতে কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ প্যাকেজের ব্যবস্থা, বিপন্নদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সবকিছু দেওয়ার উদ্যোগ, সুদহীন ঋণ প্রদান এবং নদীগুলির নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব রাখেন। এছাড়াও এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বিধায়ক রঞ্জিত দাস, বিধায়ক স্বপ্না দেববর্মা, বিধায়ক কিশোর বর্মণ, বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী, বিধায়ক দীপঙ্কর সেন।