Hare to Whatsapp
ধলাই জেলা হাসপাতালে প্রথমবারের মতো সি-আর্ম মেশিনের মাধ্যমে হাড়ের দুরূহ অস্ত্রোপচার
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ৩০, ২০২৪: বিভিন্ন দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা পরিষেবা সহ নানা জটিল অস্ত্রোপচারও এখন কুলাইস্থিত ধলাই জেলা হাসপাতালে সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। গত ২৮ আগস্ট জেলা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক সার্জনদের নেতৃত্বে গঠিত একটি টিম সি-আর্ম মেশিনের মাধ্যমে এক রোগীর কোমড়ের নিচের থাই-এ ভাঙ্গা হাড়ের (ইন্টারলকিং নেইলিং (আইএলএন)অব ফিমার সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন।
গত মাসের ২১ তারিখ কমলপুরের পানবোয়া এলাকার বাসিন্দা বেণু মুন্ডা (৩০) নামে এক ব্যক্তি বাইসাইকেল নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাবার সময় একটি কাঠের সেতু পার হবার সময় সেতুটির একটি ভাঙ্গা অংশে আটকে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হন। এর ফলে উনার কোমড়ের নিচের দিকে বাম পায়ের থাই-এর হাড় ভেঙ্গে যায়। এদিনই রোগীকে উদ্ধার করে ধলাই জেলা হাসপাতালের ইমারজেন্সীতে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তখন তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করে ভর্তি করেন। তারপর রোগীর এক্সরে রিপোর্টের ভিত্তিতে চিকিৎসকরা দেখেন যে উনার কোমড়ের নিচের থাই-এর বাম দিকের পায়ের হাড় ভেঙ্গে দুই টুকরো হয়ে রয়েছে। রোগীকে তৎক্ষনাৎ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগে স্থানান্তরিত করা হয়। তখন জেলা হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ রাজকুমার দেববর্মা রোগীর এক্সরে সহ পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেখে ভাঙ্গা থাই-এ ডান পায়ের হাড়ে অস্ত্রোপচারের কথা বলেন।
কিন্তু হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে তাঁর কোনও আত্মীয়পরিজন ছিলেন না এবং তিনি আর্থিক দিক দিয়ে অসচ্ছল ছিলেন। এদিকে উনার প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত জন আরোগ্য যোজনার কার্ডও ছিল না। এজন্য রোগী অস্ত্রোপচারের আনুষাঙ্গিক খরচের কোনও সংস্থান করতে পাচ্ছিল না। এই কারণে অস্ত্রোপচারের তারিখও পিছিয়ে যাচ্ছিল।
এদিকে রোগীর আত্মীয় পরিজন কেউ না থাকায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে স্থানীয় থানায় জিডি এন্ট্রি করা হয়। তখন জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ রাজকুমার দেববর্মা ও অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ অরূপ দাস এই রোগীর অস্ত্রোপচারের জন্য সামগ্রিক ভাবে বিভিন্ন খরচ বহন করার জন্য এগিয়ে আসেন। এদিকে অস্ত্রোপচারের জন্য রক্তের যোগান একান্ত আবশ্যক হয়ে পরে, কারণ রোগীর এ পজেটিভ রক্তে প্রয়োজন ছিল। কারণ জেলা হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে তখন এ পজেটিভ রক্ত ছিল না। এই পরিস্থিতে তখন রোগীর জন্য নিকটবর্তী যুব সংঘ ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ক্লাব সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা ডোনার অভিজিৎ দেবনাথ স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন।
এরপর জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন রোগীর এক্সরে সহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। গত ২৮ আগস্ট বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ রাজকুমার দেববর্মা নেতৃত্বে গঠিত একটি টিম রোগীর বাম পায়ের থাই-এ দুই টুকরো হয়ে যাওয়া হাড়ে সি-আর্ম মেশিনের মাধ্যমে ভাঙ্গা হাড়ের (ইন্টারলকিং নেইলিং (আইএলএন) অব ফিমিউর সফল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করেন। এই অস্ত্রোপচারে সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘন্টা। উক্ত অস্ত্রোপচার টিমে বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ রাজকুমার দেববর্মা-র সঙ্গে ছিলেন অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ অরূপ দাস, এনেসথিওলজিস্ট ছিলেন ডাঃ মহাশ্বেতা দাস, নার্সিং অফিসার ছিলেন শতরূপা দেব, সোমা দেববর্মা, শতরূপা আচার্য্য, ওটি টেকনিশিয়ান ছিলেন সুমিত চাকমা, সুব্রত দেববর্মা ও বিশাল দেববর্মা, প্লাস্টার টেকনিশিয়ান ছিলেন দুখিরাই দেববর্মা এবং অস্বাস্থ্যকর্মী ছিলেন তপন নমঃশূদ্র ও সীমা বিশ্বাস প্রমুখ। অস্ত্রোপচারের পর রোগী এখন জেলা হাসপাতালেই অর্থোপেডিক বিভাগে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছেন। উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত জন আরোগ্য যোজনার কার্ড না থাকায় আর্থিক দিক দিয়ে অসচ্ছল এই রোগীকে জেলা হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকদের সাহায্য সহযোগিতায় বিনামূল্যে এই অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়। ধলাই জেলা হাসপাতালেই এই ধরনের ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচার বিনামূল্যে পেয়ে চিকিৎসক সহ সকল স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রতি রোগী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এক প্রেস রিলিজে এই সংবাদ জানানো হয়েছে।