Hare to Whatsapp

রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, আগষ্ট ২৩, ২০২৪: রাজ্যে গত ৪ দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণের ফলে নদীসমূহের জলস্তর উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গোমতী, দক্ষিণ জেলা, ঊনকোটি এবং পশ্চিম জেলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২ জন নিখোজ রয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা উদ্ভুত এই পরিস্থিতি নিয়ে ২২ আগস্ট সচিবালয়ে মুখ্যসচিব ও অন্যান্য সচিবদের সাথে পর্যালোচনা করেছেন। পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেন। ২২ আগস্ট সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে এই সংবাদ জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের বন্যার পরিস্থিতির কথা জানিয়ে রাজস্ব সচিব জানান, রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় দক্ষিণ জেলার বকাফায় ৪৯৩.৬ মিমি, সিপাহীজলা জেলায় সোনামুড়ায় ২৯৩.৪ মিমি, পশ্চিম জেলার আগরতলায় ২৩৩ মিমি এবং গোমতী জেলার উদয়পুরে ১৫৫ মিমি বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজ্যের ধলাই, খোয়াই, দক্ষিণ, পশ্চিম জেলা, উত্তর ত্রিপুরা এবং ঊনকোটি জেলার নদীগুলির জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে।

রাজস্ব সচিব জানান, রাজ্যের প্রায় ১৭ লক্ষ মানুষ এই বিপর্যয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ৪৫০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এবং তাতে প্রায় ৬৫ হাজার ৪০০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে শিবিরগুলিতে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী যেমন- খাবার প্যাকেট, পানীয়জল এবং ঔষধ প্রদান করা হচ্ছে। গ্রামোন্নয়ন, জলসম্পদ, বিদ্যুৎ, আরক্ষা, আধাসামরিক বাহিনী, অগ্নিনির্বাপক ইত্যাদি দপ্তরের অফিসার এবং কর্মীরা গত ৪ দিন ধরে বন্যা বিধ্বস্ত জনগণের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যে নিয়োজিত রয়েছেন। রাজস্ব সচিব জানান, এই অভূতপূর্ব বিপর্যয় পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের নজরদারী করা হচ্ছে। রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি, বায়ুসেনা এবং এনডিআরএফও রাজ্য সরকারকে এই বিপর্যয় মোকাবিলায় সহায়তা করছেন। রাজস্ব সচিব জানান, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে এখন পর্যন্ত পরিকাঠামো এবং কৃষি ফসল সহ বাড়িঘর এবং গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্যে জানা গেছে বিদ্যুৎ দপ্তরের ৮৪৪টি খুঁটি ভেঙে পড়েছে, ১৫১টি ট্রান্সফরমার, ৩১০ কিমি কন্ডাক্টরস এবং ২টি সাব-স্টেশন সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাজ্যের ২ হাজার ৩২টি স্থানে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৭৮৯টি স্থানে ভূমিধস পরিষ্কার করা হয়েছে এবং বাকি জায়গাগুলির ভূমিধস সরানোর কাজ পুরোদমে চলছে।

১ হাজার ৯৫২টি স্থানে রাস্তা ভেঙে পড়েছে, যার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৭৯টি স্থানে পুনরুদ্ধারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করার জন্য রাজ্যজুড়ে মোট ১৫৩টি ড্রজার কাজে লাগানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পূর্ত দপ্তরের প্রায় ২০০ জন ইঞ্জিনিয়ার দিনরাত কাজ করে চলছেন। তিনি জানান, চন্দ্রপুর, নাগেরজলা এবং রাধানগর থেকে বাস পরিষেবা স্থগিত রাখা হয়েছে। আগরতলা থেকে সমস্ত রেল পরিষেবাও স্থগিত করা হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যের ৮টি জেলায় বন্যার কারণে খারিফ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অনুমান করা যাচ্ছে যে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর সব্জি ক্ষেত এবং ১ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর ধানের জমি এখনও জলের তলায় রয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে রাজ্যের সমস্ত বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গোমতী, দক্ষিণ ত্রিপুরা এবং অন্যান্য বন্যা বিপর্যস্ত এলাকায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মভাবে ব্যাহত হয়েছে। ঐ সব স্থানগুলিতে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুত চালু করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব সচিব জানান, সারা রাজ্যে ২৬টি এস ডি আর এফ টিম, ৪টি এন ডি আর এফ টিম উদ্ধার ও ত্রাণকার্যে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়াও অরুনাচল প্রদেশ থেকে ৪টি অতিরিক্ত এন ডি আর এফ টিম আগরতলায় অবতরণ করেছে, যাদের ইতিমধ্যেই গোমতী জেলায়, পশ্চিম ত্রিপুরা, সিপাহীজলা জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও ৪টি এন ডি আর এফ টিম আগেই দক্ষিণ ত্রিপুরা, পশ্চিম ত্রিপুরা, ঊনকোটি এবং খোয়াই জেলায় নিযুক্ত রয়েছে। পাশাপাশি সিভিল ডিফেন্স এবং আপদামিত্রের ২ হাজারেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবী ত্রাণ ও উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব সচিব জানান, গোমতী ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলায় আটকে পড়া ক্ষতিগ্রস্থ নাগরিকদের হেলিকপ্টারের মাধ্যমে উদ্ধারের জন্য রাজ্য সরকারের অনুরোধে কেন্দ্রীয় সরকার দুটি হেলিকপ্টার পাঠিয়েছে। এছাড়াও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে অমরপুরের রাঙামাটি, বামপুর, বাংকুরিয়া, মালবাসা এই ৪টি স্থানে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। রাজস্ব সচিব জানান, গোমতী জেলায় ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজ আরও গতিশীল করতে শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমারকে গোমতী জেলার বিশেষ জেলা শাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের কাজ দেখাশোনা করার জন্য খাদ্য দপ্তরের অধীনে ৫ জন টিসিএস অফিসারকে নিযুক্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ জনগণের উদ্ধার ও ত্রান কার্য রাজ্য সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত না হয়ে শান্ত থাকতে এবং রাজ্য ও জেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে আবহাওয়াবিদ ড. পার্থ রায় জানান, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুসারে রাজ্যের অনেক জায়গায় আজ এবং আগামীকাল ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ সারা রাজ্যে এবং আগামীকাল দক্ষিণ ত্রিপুরা, সিপাহীজলা, গোমতী এবং ধলাই এই ৪টি জেলায় 'রেড অ্যালার্ট' জারি করা হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে নগর উন্নয়নের দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং জানান, রাজ্যের বিভিন্ন শহর এলাকায় বন্যা দূর্গতদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৬৫টি শিবির খোলা হয়েছে। এই শিবিরগুলোতে ৭ হাজার ২৩২টি পরিবারের ২৮ হাজার ৯৯৪ জন আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে খাদ্য, পানীয় জল, ঔষধপত্র সহ সমস্ত ধরণের সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও শহর এলাকায় বন্যাদূর্গতদের সাহায্যার্থে ৩টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। এই নম্বরগুলি হলো 8129901176/ 9863201665 (WhatsApp also Available) / 8118982040 (WhatsApp also Available) সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে এবং ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের স্টেট প্রজেক্ট অফিসার শরৎ কুমার দাস উপস্থিত ছিলেন।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.