Hare to Whatsapp
সমাজের বহুমুখী ক্ষেত্রে আপনার সৃষ্টিশীল অবদান নিঃসন্দেহে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে : মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ১১, ২০২৪: তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল যীষ্ণু দেববর্মাকে ১০ আগস্ট রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মান্দাইয়ের খরাঙ কমিউনিটি হলে এই নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, দেশের কোনও রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল পদে ত্রিপুরা থেকে যীষ্ণু দেববর্মাই প্রথম নিযুক্ত হয়েছেন। নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা, বনমন্ত্রী অনিমেষ দেববর্মা, সমবায়মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, ত্রিপুরা বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, ডিজিপি (ইন্টিলিজেন্স) অনুরাগ ধ্যানকর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল যীষ্ণু দেববর্মার হাতে শুভেচ্ছা স্মারক ও মানপত্র তুলে দিয়ে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন।
তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল যীষ্ণু দেববর্মাকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, “আপনি এ রাজ্যের ভূমিপুত্র এবং ত্রিপুর রাজ পরিবারের কৃতি সন্তান। আমরা গর্বিত যে, আপনি এই রাজ্যের প্রথম ব্যক্তি যিনি কোনও রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান রাজ্যপাল পদে আসীন হয়েছেন। ত্রিপুরা রাজ্যের জনগণের কাছে এটা অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। আপনি শুধু একজন প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ নন, আপনি একাধারে কবি, লেখক ও শিল্পী। পাশাপাশি রয়েছে আপনার মানবদরদী চিন্তাভাবনা। এই রাজ্যে জনজাতি সম্প্রদায়ের সামগ্রিক উন্নয়নে আপনার চিন্তাভাবনা ও কর্মকুশলতা নতুন দিশার সঞ্চার করেছে। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব স্বর্গত রাজকুমার রমেন্দ্র কিশোর দেববর্মা এবং বহুগুণের অধিকারী রাজকুমারী কমলপ্রভা দেবীর সুযোগ্য সন্তান আপনি। সমাজের বহুমুখী ক্ষেত্রে আপনার সৃষ্টিশীল অবদান নিঃসন্দেহে আমাদের গৌরবান্বিত করেছে। জনজাতি সমাজের উন্নয়নের পাশাপাশি রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আপনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ যা আজও আমাদের নতুন পথের দিশা দেখায়। প্রচারের অন্তরালে থেকে নীরবে নিভৃতে আপনি কাজ করে চলেছেন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত আপনি নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলের অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৩ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারেলের ত্রিপুরা চাপ্টারের দায়িত্বে থেকে আপনি এ অঞ্চলের শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।
১৯৯৩ সালে ত্রিপুরা থেকে বিজেপির ন্যাশনাল কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হন। এই অঞ্চলের শিল্পকলার চর্চা ও প্রসারে আপনার ভূমিকা দীর্ঘকাল আমাদের অনুপ্রাণিত করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে আশা রাখি। ২০১৮ সালে প্রথম বিজেপি শাসিত রাজ্য মন্ত্রিসভায় আপনি উপমুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন এবং অত্যন্ত দক্ষতার ও নিষ্ঠার সাথে অর্থ, পঞ্চায়েত, গ্রামোন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও পরিবেশ এবং পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তরের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ বছরের এই মন্ত্রিত্বের সময়কালে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে আপনার বহুমুখী সৃষ্টিশীল দৃষ্টিভঙ্গি রাজ্য প্রশাসনকে সমৃদ্ধ করেছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন নতুন পরিকল্পনা রূপায়িত হয়েছে। বিভিন্ন প্রশাসনিক সংস্কার এবং স্বচ্ছতার সঙ্গে গ্রামীণ মানুষের জীবন জীবিকার ক্ষেত্রকে আপনি সম্প্রসারিত করেছেন। আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে রাজ্যে বায়োভিলেজ ২০ প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর জাতীয়স্তরে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় মন কি বাত অনুষ্ঠানেও রাজ্যের সাফল্যের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে আগরতলার বাধারঘাটে বিজ্ঞান গ্রাম (সায়েন্স সিটি) স্থাপিত হয়েছে। রাজ্যের তরুণ যুব সম্প্রদায় এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বিজ্ঞান সচেতনতা এবং মনস্কতা গড়ে তুলতে এই বিজ্ঞান গ্রাম স্থাপন একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। ক্রীড়াক্ষেত্রেও আপনার অবদান অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। ভারতীয় ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশন শীর্ষ পদে আসীন ছিলেন এবং ব্যাডমিন্টন অ্যাসোসিয়েশনে রাজ্য শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও যীষ্ণু দেববর্মার সুদক্ষ নেতৃত্ব, বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দুরদৃষ্টি সম্পন্ন বিশ্লেষণ ক্ষমতা অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল। আমাদের বিশ্বাস তেলেঙ্গানা রাজ্যের চতুর্থ রাজ্যপাল হিসেবে আপনি আপনার দক্ষতা, নিষ্ঠা ও সৃজনশীল বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সেই রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন। রাজ্যপাল হিসেবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আপনার দূরদৃষ্টি দেশ ও রাজ্যকে সমৃদ্ধ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আপনার সাহিত্য সৃষ্টি সমাজ সচেতনতামূলক সুগভীর চিন্তাভাবনা আমাদের রাজ্যের অন্যতম সম্পদ। আজ আপনাকে এই রাজ্যের জনগণের পক্ষ থেকে নাগরিক সংবর্ধনা জানাতে পেরে আমরা নিজেরাই গর্বিত।'
অনুষ্ঠানে তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল হিসেবে নিজ রাজ্যে নাগরিক সংবর্ধনা পেয়ে আমি গর্বিত। রাজ্য থেকে প্রথমবারের মতো রাজ্যপাল পদে নিযুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগের ফলে ত্রিপুরার পরিচয়ের নতুন পথ খুলে গেছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের সময়কালে রাজ্য থেকে বেশ কয়েকজন পদ্মশ্রী পেয়েছেন, যা রাজ্যকে নিশ্চয়ই গৌরবান্বিত করেছে। রাজ্যপাল যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে তেলেঙ্গানা রাজ্যের উন্নয়নে কাজে লাগাবো। পাশাপাশি তেলেঙ্গানা রাজ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতাও ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়নে মতবিনিময় করবো। তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্য সরকার সমাজের অন্তিম ব্যক্তির নিকট বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের অর্থানুকুল্যে রাজ্যের জনজাতিদের উন্নয়নেও রাজ্য সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। বর্তমান রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ত্রিপুরায় এখন উন্নয়নের আন্দোলন চলছে। উন্নয়নের এই ধারাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখার উপরও তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল শ্রী দেববর্মা গুরুত্ব আরোপ করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী বিকাশ দেববর্মা বলেন, তেলেঙ্গানার রাজ্যপাল হিসেবে যীষ্ণু দেববর্মাকে নাগরিক সংবর্ধনা জানাতে পেরে আমরা গর্বিত। যীষ্ণু দেববর্মা রাজ্যে প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। রাজ্যের জনজাতিদের কল্যাণেও তিনি বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা।