Hare to Whatsapp
শাস্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়, গন্ডাতুইসা মহকুমার উন্নয়নে ২৩৯ কোটি ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুমোদন : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ৫, ২০২৪: মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ৪ আগস্ট গন্ডাতুইসা মহকুমায় সাম্প্রতিক হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর সাথে ছিলেন বিধায়ক নন্দিতা রিয়াৎ, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা ও রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন। এদিন গন্ডাতুইসা পরিদর্শনকালে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্যরা মৃত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের বাড়িতে যান এবং তার পরিবার ও অন্যান্য সদস্যদের সাথে আলোচনা করেন। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত নারায়ণপুর বাজার এলাকা, ৩৩ কেভি ও ৩০ কার্ড এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী গন্ডাতুইসা দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন। মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ শিবিরে অবস্থানরতদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং ছাত্রছাত্রীদের হাতে পঠন সামগ্রী তুলে দেন। হিংসায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা এক সাংবাদিক সম্মেলনে মৃত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের পরিবার ও ক্ষতিগ্রস্ত ১৪৫টি পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা সহ গন্ডাতুইসা মহকুমায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের আর্থিক বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, শান্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই এলাকায় জাতি, জনজাতিদের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে যারা চক্রান্ত করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামীদিনে এই ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে এবং এলাকায় শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এম জি দাশপাড়া ও রামনগরে নিরাপত্তা শিবির রয়েছে। নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ৩৩ কেভি ও ৩০ কার্ড এলাকাতেও দুটি নতুন স্থায়ী নিরাপত্তা শিবির স্থাপন করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী গন্ডাতুইসা মহকুমায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ২৩৯ কোটি ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক অনুমোদনের কথা ঘোষণা করেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মৃত পরমেশ্বর রিয়াংয়ের পরিবারকে ইতিমধ্যেই ৬ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এই পরিবারকে আরও ৪ লক্ষ টাকা সহায়তা দেওয়া হবে।
তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ১৪৫টি পরিবারের জন্য পূর্বে বরাদ্দকৃত ১ কোটি ১৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার সহায়তার পাশাপাশি আরও ২ কোটি ৩০ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। অর্থাৎ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে মোট ৩ কোটি ৪৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকার সহায়তা দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে যাদের ঘর সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এরকম ১০১টি পরিবারকে ইতিমধ্যে ১৫,০০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এখন পরিবার পিছু আরও ২.০৫ লক্ষ টাকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। অনুরূপভাবে গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে পূর্বে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। তাদের আরও পরিবার পিছু ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। তাছাড়া অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত যেসকল পরিবারগুলোকে যথাক্রমে ২৫ হাজার, ২০ হাজার, ১৫ হাজার, ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছিল তাদেরকেও পুনরায় সমপরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা জানান, গন্ডাতুইসা মহকুমার উন্নয়নে যে সমস্ত কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে তারমধ্যে রয়েছে নারায়ণপুর বাজারে ৩০টি মার্কেট শেডের জন্য ১ কোটি টাকা, দশরাম চৌধুরী সুপার মার্কেট রক্ষনাবেক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য ১ কোটি টাকা, গন্ডাতুইসা বাজারের রাস্তা, ড্রেইন, স্ট্রিট লাইট ইত্যাদির সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ১০ কোটি টাকা, ৫১ কিমি দীর্ঘ আমবাসা-গন্ডাতুইসা সড়ক উন্নয়নের জন্য ১৫০ কোটি টাকা, গন্ডাতুইসা মহকুমা হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণ ও পুরাতন ভবনের সংস্কারের জন্য ১৯ কোটি ২০ লক্ষ টাকা, ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ হাতিমাথা-দলপতি সড়ক উন্নয়নের জন্য ১২ কোটি টাকা, রইস্যাবাড়ি ব্লকের ৫ কিমি দীর্ঘ রঞ্জিতপাড়া- বুদ্ধজয়পাড়া সড়কের উন্নয়নের জন্য ৮ কোটি টাকা, ডুম্বুরনগর ব্লকের আমবাসা-গন্ডাতুইসা সড়ক থেকে জমাতিয়াপাড়া পর্যন্ত ৩ কিমি দীর্ঘ সড়কের উন্নয়নের জন্য ৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা, গন্ডাতুইসা দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় মাঠে সিন্থেটিক ফুটবল টার্ফ স্থাপনের জন্য ৬ কোটি টাকা, ডুম্বুর জলাশয়ে খাচা পদ্ধতিতে মৎস্য চাষের উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি টাকা অনুমোদনের ঘোষণা দেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, গন্ডাতুইসা মহকুমায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ড্রাগ অ্যাডিক্ট রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার স্থাপনের জন্য ৫ কোটি টাকা, মহকুমার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাস রুম, আসবাবপত্র ক্রয় ও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ৫ কোটি টাকা, রইস্যাবাড়ি ব্লকের আম চাষীদের জন্য একটি ১৫ মেট্রিকটন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরচালিত ক্ষুদ্র হিমঘর স্থাপনের জন্য ৩ কোটি টাকা, মৎস্য ব্যবসার জন্য কোল্ড স্টোরেজ ও কোল্ড চেম্বার গাড়ির জন্য ৩ কোটি টাকা, গন্ডাতুইসায় ইন্ডোর ব্যাডমিন্টন কোর্ট উন্নয়নের জন্য ২ কোটি টাকা, ১০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের জন্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা এবং গন্ডাতুইসা বাজার এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানোর জন্য ১০ লক্ষ টাকার অনুমোদনের ঘোষণা দেন। পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন ডিজিপি (ইন্টেলিজেন্স) অনুরাগ, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী, রাজস্ব সচিব ব্রিজেশ পান্ডে, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা দপ্তরের সচিব তাপস রায়, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, জনজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শুভাশিস দাস, পূর্ত দপ্তরের মুখ্য বাস্তুকার রাজীব দেববর্মা, ধলাই জেলার জেলাশাসক সাজু বাহিদ এ, পুলিশ সুপার অবিনাশ রাই এবং অন্যান্য রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ।