Hare to Whatsapp
‘লক্ষ্য-২০৪৭' বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হীরা প্লাস মডেলে যোগাযোগ বাবস্থার উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, জুলাই ২৮, ২০২৪: রাজ্যের সার্বিক বিকাশে ত্রিপুরা সরকার ‘লক্ষ্য-২০৪৭' পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিছু সূচক ধার্য্য করা হয়েছে। ‘লক্ষ্য-২০৪৭’ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হীরা প্লাস মডেলে যোগাযোগ বাবস্থার উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২৭ জুলাই নয়াদিল্লিতে নীতি আয়োগের জেনারেল কাউন্সিলের বৈঠকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। বৈঠকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘লক্ষ্য- ২০৪৭' বাস্তবায়নে বৰ্দ্ধিত মূলধনী খরচ, ব্যবসা-বানিজ্য ও জীবনযাত্রা সহজতর করার উদ্যোগ নেওয়া, গ্রাম পঞ্চায়েতস্তর পর্যন্ত ই-অফিস চালু করা, কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুবিধা দিতে বিএমএস-এ ডিবিটি ব্যবস্থা চালু করা, মুখ্যমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে আর্টিফিসিয়্যাল ইন্টেলিজেন্স/ইন্টারনেট/সাইবার নিরাপত্তা/৫ জি প্রযুক্তি/ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার, নীতি আয়োগের লক্ষ্য অনুসারে ‘গুড গভর্ন্যান্স ও স্টেট ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশন' স্থাপন করা হয়েছে।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘লক্ষ্য-২০৪৭’ পূরণে কৃষি ক্ষেত্রে শ্রমিক নির্ভরতা ৫০ শতাংশ হ্রাস করা, সেচের সুযোগ বৃদ্ধি করা, ৭৫% শস্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসা, সমস্ত প্রধান প্রধান শস্যগুলির উৎপাদন তিন গুণ বৃদ্ধি করা, কৃষকদের আয় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি করা, মৎস্য উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধি করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও বাংলাদেশ এবং দেশের অন্যান্য রাজ্যের মাধ্যমে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিমাণ ১ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া, ২০৪৭ সালের মধ্যে পর্যটন ক্ষেত্রের আয় জিএসডিপি'র ১৫% করা, রাজ্যের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার লেন সড়কের সুবিধা নিশ্চিত করা, বনজ উৎপাদন পাঁচ গুণ করা, গভীর জঙ্গলের আয়তন ৪০% করে জিএসডিপিতে যোগদান বাড়ানো, বন এলাকায় জলাশয়ের এলাকা ২.৫ গুণ বাড়ানো, আগর কাঠ ভিত্তিক অর্থনীতি ১০,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে সমস্ত বিদ্যালয়ে আইসিটি এবং ভোক্যাশন্যাল ল্যাব'র সুবিধা নিশ্চিত করা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়, গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছাত্রছাত্রীদের ইন্টার্ণশীপের ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্য পরিষেবায় স্পেশালিটি ও সুপার স্পেশালিটির স্বনির্ভরতা অর্জন করা, খেলাধুলায় সামনের সারির রাজ্যে পরিণত করা এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ডিজিট্যাল সোসাইটি তৈরি করার লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, নীতি আয়োগের ৮ম জেনারেল কাউন্সিল বৈঠকে আলোচিত বিষয়েও সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। সেজন্য ‘ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়্যাল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন ইনসেনটিভ স্কিম' চালু করা হয়েছে। ব্যবসা বানিজ্যের সুবিধার্থে ‘স্বাগত’ পোর্টাল চালু করা হয়েছে। পর্যটন ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট অংশীদায়িত্ব উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং পর্যটনের বিকাশে ‘স্বদেশ দর্শন’ ও ‘প্রসাদ' প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তাছাড়া পিএম-বিশ্বকর্মা ও দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামীণ কৌশল যোজনায় ১৯টি ইন্ডাস্ট্রিয়্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহিলা স্বশক্তিকরণের উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের চাকুরিতে ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ চালু করা হয়েছে। মহিলাদের স্টার্ট আপগুলিকে সহজ শর্তে বা বিনা শর্তে ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সরকারি মার্কেট স্টল বিতরণে ৫০ শতাংশ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে মহিলা উদ্যোগীদের, সরকারি ডিগ্রি কলেজে মেয়েদের জন্য বিনামূল্যে পড়ার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, ৮টি জেলায় ৯টি মহিলা থানা রয়েছে, ৪.৭১ লক্ষ গ্রামীণ মহিলাকে স্বসহায়ক দলের সথে যুক্ত করা হয়েছে। 'মুখ্যমন্ত্রী স্টেট ট্যালেন্ট সার্চ প্রোগ্রামে' প্রতিভাবান মহিলা খেলোয়াড়দের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ ও ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যে ৮৩,৪২৪ জন লাখপতি দিদি রয়েছেন।
তৃতীয় মুখ্যসচিবদের কনফারেন্সে গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর যেসকল পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে সে সম্পর্কে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, জলজীবন মিশনে এখন পর্যন্ত রাজ্যের ৮২% বাড়িতে পানীয়জলের সুযোগ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সমস্যাদীর্ণ এলাকায় পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৪৭১টি উদ্ভাবনী প্রকল্প চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এমবিবিএস-এ পড়ার সিট দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগরতলা গভার্ণমেন্ট ডেন্টাল কলেজ এবং আগরতলা গভার্নমেন্ট নার্সিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও আগরতলায় ৯টি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা, প্রথমবারের মত কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট পরিষেবা শুরু করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ সুবিধাভোগী আয়ুষ্মান ভারত কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন। তাছাড়া মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আওতায় ৪ লক্ষ সুবিধাভোগী সুবিধা পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত ২৫টি জনঔষধি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে এবং আরও ৮টি কেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে।
_শিক্ষাক্ষেত্র সম্পর্কে নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য বোর্ড পরীক্ষায় অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য চালু করা হয়েছে বছর বাঁচাও প্রকল্পের। মুখ্যমন্ত্রী সাথ (চিফ মিনিস্টার্স স্কলারশিপ ফর অ্যাচিভার্স টুয়ার্ডস হায়ার লার্নিং) প্রকল্পে ১০০ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের প্রত্যেক মাসে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। সুপার-৩০ স্কিমে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করা ছাত্রছাত্রীদের জন্য বিশেষ কোচিংয়ের ব্যবস্থা শুরু করা হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী নিপুণ, টিস্কারিং ল্যাব, বিদ্যালয়ে আইসিটি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা, ৮৫৪টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাসরুম শুরু করা হয়েছে। তাছাড়াও তিনি বলেন, রাজ্যে ১২৫টি বিদ্যালয়কে বিদ্যাজ্যোতি এবং ৮২টি স্কুলকে পিএম-শ্রী স্কুলে রূপান্তরিত করা হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা নীতি রাজ্যের প্রত্যেকটি স্কুলে গ্রহণ করা হয়েছে বলে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
রাজ্যে বিদ্যুৎ ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য 'ত্রিপুরা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন স্ট্রেংদেনিং অ্যান্ড জেনারেশন এফিসিয়েন্সি প্রোজেক্ট' রূপায়ণ করা হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, পিএম-জনমন প্রকল্পে এখন পর্যন্ত রিয়াং জনগোষ্ঠীর ৩,৬১৮টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ব্লু স্যাটেলমেন্ট প্রোগ্রামে ৪,৫১২টি বাড়িকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী ভূমি এবং সম্পত্তি ক্ষেত্রকে ডিজিটাইজড করার জন্য স্বামিত্ব, ভূ-নক্সা সফটওয়্যার, ডিজিট্যাল ই-স্ট্যাম্পিং সার্টিফিকেট এবং ল্যান্ড রেকর্ড মিউটেশন এবং ন্যাশনাল জেনারিক ডকুমেন্ট রেজিস্ট্রেশন সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে বলে সভায় জানান। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এবং দিশা নির্দেশনায় বিকশিত ভারত এবং এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্য অবশ্যই পূর্ণ হবে।