Hare to Whatsapp
বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে তিনটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে : সচিব ড: প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, জুন ৩০, ২০২৪: ভারতীয় ন্যায় সংহিতা-২০২৩, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা-২০২৩, ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম-২০২৩ নামে তিনটি নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে যা আগামী ১ জুলাই, ২০২৪ থেকে সারা দেশে কার্যকরী হবে। নতুন এই আইনের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ, বিচার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। ২৯ জুন সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব ড: প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী এ সংবাদ জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে এই তিনটি নতুন আইনের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সচিব শ্রী চক্রবর্তী জানান, নারী শিশু সহ সকলস্তরের জনগণের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ দূরীকরণকে অগ্রাধিকার দিয়ে ফৌজদারি বিচারের সংস্কার সাধন করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় দণ্ডবিধি - ১৮৬০কে প্রতিস্থাপিত করেছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, ফৌজদারি কার্যবিধি- ১৯৭৩ এর প্রতিস্থাপন করে এবং ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম, ভারতীয় সাক্ষ্য আইন-১৮৭২ এর পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য যে, ভারতীয় দন্ডবিধির ৫১১টি ধারার পরিবর্তে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় ৩৫৮টি ধারা রয়েছে। ৬ ধরণের অপরাধের জন্য কমিউনিটি সার্ভিসের শাস্তি চালু করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা-২০২৩ এ সাতটি নতুন অপরাধমূলক বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে নতুন ফৌজদারি আইনের প্রধান বিষয় সমূহ তুলে ধরে স্বরাষ্ট সচিব জানান, নতুন আইনের ১৭৩ ধারা মূলে একজন নাগরিক নির্ধারিত থানা এলাকার বাইরেও যে কোন স্থান থেকে এফআইআর দায়ের করতে পারবেন। নতুন এই আইনে নাগরিকদের ই-এফআইআর করার সংস্থান রয়েছে। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা- (বিএনএসএস) এর ৫৩০ ধারা অনুসারে সমস্ত ট্রায়াল, অনুসন্ধান এবং কার্যধারা ইলেকট্রনিক মুডে করার অনুমোদন রয়েছে। নতুন আইনে দূরবর্তী সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক উপস্থাপনাকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রনিক রেকর্ডগুলি কাগজের রেকর্ডের মতই একই আইনি প্রভাব থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। স্বরাষ্ট্র সচিব আরও জানান, নতুন আইন পুলিশকে কোন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তিকে যুক্ত করার ক্ষমতা দিয়েছে। ছোট ছোট অপরাধের ক্ষেত্রে বিশেষ করে যারা শারীরিকভাবে অক্ষম বা প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার থেকে রক্ষা পাওয়ার সংস্থান রয়েছে এই নতুন আইনে। মামলা নথিভুক্ত হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত মামলাকারীকে জানাতে হবে। চার্জশিট দেওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া, ট্রায়াল শুরু করা ইত্যাদি নিশ্চিত করার বিধান নতুন আইনে রয়েছে। বিচারের শুনানী শেষে ৪৫ দিনের মধ্যে রায় ঘোষণা করতে হবে। রায়ের অনুলিপি সাত দিনের মধ্যে অনলাইনে আপলোড করতে হবে। বিএনএসএস-এর ৬৫ (২) ধারা মুলে ১২ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ধর্ষণ অপরাধের দোষীদের মৃত্যুদন্ডের বিধান চালু করা হয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র সচিব আরও জানান, নতুন আইনে যেসব অপরাধের কারণে তিন বছরের কম জেল হয়, সেইসব অপরাধের দোষীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ পদমর্যাদার সম্পন্ন অফিসারের অনুমতি প্রয়োজন। নতুন ফৌজদারি আইনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সাক্ষী সুরক্ষার উপর যত্ন নেওয়ার বিধান রয়েছে। তিনটি নতুন আইন কার্যকর করার জন্য এখন পর্যন্ত পুলিশ, স্বরাস্ট্র (কারা), আইন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, প্রসিকিউশন দপ্তরের ও স্টেট ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটোরির ২,৩৪৭ জনকে অনলাইন ও অফলাইনে দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নতুন সংশোধিত সিসিটিএনএস অ্যাপ্লিকেশন পরিচালনার জন্য ২৮২ জন পুলিশ কর্মীকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রযুক্তগত উন্নয়ন, নতুন নিয়োগ, রুলস / এসওপি প্রনয়ণ ইত্যাদি সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকাসমূহ প্রয়োজন অনুসারে রাজ্যে পর্যায়ক্রমে সংশোধন করে কার্যকর করা হবে। রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে নতুন আইন সম্পর্কে অবগত করার জন্য সমস্ত জেলা পুলিশ সুপারগণ ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার অব্যাহত রেখেছে বলে সচিব সাংবাদিক সম্মেলনে জানান।
সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে আইন সচিব সঞ্জয় ভট্টাচার্য জানান, পুরোনো মামলাগুলি পুরোনো আইন মোতাবেক চলবে। ১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ থেকে যে সমস্ত ঘটনা ঘটবে তা নতুন আইন অনুযায়ী চলবে। নতুন প্রণীত আইনগুলো সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে রাজ্য আইনসেবা কর্তৃপক্ষ সচেতনতামুলক কর্মসূচিও চালিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও আইজি এল ডার্নং উপস্থিত ছিলেন।