প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ত্রিপুরা দ্রুত গতিতে উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে : কেন্দ্রীয় মৎস্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, মে ১৯, : কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন, দুগ্ধ ও পঞ্চায়েতীরাজ মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং ১৮ মে মাছ চাষের জন্য ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকুয়া পার্কের শিলান্যাস করেন। আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং প্রেক্ষাগৃহে বৈদ্যুতিন বোতাম টিপে ভার্চুয়ালি তিনি এই অ্যাকুয়া পার্কের শিলান্যাস করেন। তাছাড়া তিনি রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত মৎস্য উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এই ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকুয়া পার্কটি ঊনকোটি জেলার সতের মিঞার হাওরকে কেন্দ্র করে ৯৯ একর এলাকায় গড়ে উঠবে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২৩৯.৯৪ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে কেন্দ্ৰীয় সরকার ৩৮১৫.৯৫ লক্ষ টাকা এবং রাজ্য সরকার ৪২৩.৯৯ লক্ষ টাকা ব্যয় বহন করবে। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিঙ্কু রায়, মৎস্যমন্ত্রী সুধাংশু দাস বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকুয়া পার্কের শিলান্যাস করে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কেন্দ্রীয় মৎস্য, পশুপালন, দুগ্ধ ও পঞ্চায়েতরাজ মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিক প্রচেষ্টায় ত্রিপুরা দ্রুত গতিতে উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। শুধু ত্রিপুরা নয় সারা দেশেরই উন্নয়ন হচ্ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চল হল প্রধানমন্ত্রীর আত্মা। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি নিয়মিত পরিদর্শন করার। কোথাও ঘাটতি থাকলে তা যেন দ্রুত দূর করা যায়। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষির সাথে সাথে মৎস্য ক্ষেত্রের উন্নয়নে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এলক্ষ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা, মাছ চাষের পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রভৃতি প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে সারা দেশে মাছ চাষে ৩৮ হাজার ৫৭২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করা হয়েছে। ভারত আজ বিশ্বে মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। ভারতে মৎস্যচাষিদের আয় যেমন বেড়েছে তেমনি মাছ রপ্তানিও বেড়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালে ত্রিপুরায় মাছ উৎপাদন ছিল ৩.৭ লক্ষ টন। ২০২৩-২৪ এ হয়েছে ৬.৪ লক্ষ টন। এখনও কিছু ঘাটতি রয়েছে। এ লক্ষ্যে আজ অর্গানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার জন্য এই অ্যাকুয়া পার্কের শিলান্যাস করা হয়েছে। তিনি মাছ চাষিদের খাঁচায় মাছ চাষ, সুসংহত উপায়ে মাছ চাষ, অ্যাকুয়া, ইকো ও বৈজ্ঞানিক প্রথায় মাছ চাষ করার পরামর্শ দেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন এই পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করলে মাছ চাষিদের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হবে এবং তারা অদূর ভবিষ্যতে বহি:রাজ্যে মাছ রপ্তানী করতে পারবেন। তিনি বলেন, সারা দেশের ১১টি স্থানে ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকুয়া পার্ক গড়ার মঞ্জুরী দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরা, আসাম, নাগাল্যান্ড ও অরুণাচল প্রদেশে ৪টি রয়েছে। উদ্দেশ্য, রাজ্যগুলোকে মাছ উৎপাদনে স্বয়ম্ভর করে তোলা। এ পার্কে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ সহ সবরকমের ব্যবস্থা থাকবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪৭ সালের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভারত গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে এক সাথে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় মৎস্য, প্রাণীসম্পদ, দুগ্ধ ও সংখ্যালঘু কল্যাণ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগেই এই অ্যাকোয়া পার্ক প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় নারিকেল, সুপারি, রাবার, কাঁঠাল ইত্যাদি চাষ ভাল হয়। কেরালা রাজ্যের সাথে এর সামঞ্জস্য রয়েছে। তবে চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে মাছের উৎপাদনও বাড়াতে হবে। এলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা সহ অন্যান্য প্রকল্পের সুবিধা মৎস্যচাষিদের গ্রহণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী টিঙ্কু রায় বলেন, এই ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকুয়া পার্ক ঊনকোটি জেলা সহ রাজ্যের মৎস্যচাষিদের আর্থ সামাজিক মান উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। মৎস্যমন্ত্রী সুধাংশু দাস কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রজেক্ট অনুমোদন করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, এটা স্বপ্নের প্রজেক্ট। তিনি বলেন, রাজ্যে বার্ষিক প্রায় ৮৬ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। মাছের ঘাটতি পূরণে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মৎস্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. অভিলাস লিখি৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মৎস্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সাগর মেহেরা। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক জিতেন্দ্র মজুমদার, মৎস্য দপ্তরের সচিব ড. কে শশীকুমার, অধিকর্তা ড. নীরজ কুমার চঞ্চল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা, অন্যান্য প্রকল্প ও সাফল্য নিয়ে ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। ভার্চুয়ালি কৈলাসহর থেকে অনুষ্ঠানে অংশ নেন ঊনকোটি জিলা পরিষদের সভাপতি অমলেন্দু দাস, ঊনকোটি জেলার জেলাশাসক দিলীপ কুমার চাকমা প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ অতিথিগণ ৫ জন কেসিসি কার্ড সুবিধাভোগী, ২ জন স্টার্ট আপ সুবিধাভোগী, ৪ জন পিএমএমএসওয়াই সুবিধাভোগী, ২ জন এমএমএমবিওয়াই-এমএসওয়াই সুবিধাভোগী এবং ২ জন সুবিধাভোগীর হাতে এনডিআরএফ ফ্লাড রিলিফের চেক তুলে দেন। এছাড়া মেলাঘর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড, জতিয়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড, ধলাই ফিস ফার্মার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড ও বরন্দোশ ফিসারী ফেড ফার্মার্স প্রডিউসার্স কোম্পানী লিমিটেডকে পুরস্কৃত করা হয়। সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ন্যাশনাল ফিসারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ড-এর চিফ এক্সিকিউটিভ ড. বিজয় কুমার বেহেরা।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.