Hare to Whatsapp
শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে আইজিএম হাসপাতালকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, জুন ২৬, ২০২৪: রাজ্যের জনগণকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানে রাজ্য সরকার দায়বদ্ধভাবে কাজ করছে। এজন্য রাজ্যে মেডিকেল কলেজ স্থাপনসহ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নয়নে বেসরকারি স্বাস্থ্য- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও রাজ্যে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিগত দিনেও রাজ্যে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বেসরকারিস্তরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২৫ জুন সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যে প্রস্তাবিত শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরীর চিঠির প্রতিক্রিয়ায় পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে পর্যটনমন্ত্রী জানান, ন্যাশনাল মেডিকেল কাউন্সিলের সমস্ত আইন ও নিয়মনীতি মেনেই শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যে আইজিএম হাসপাতালকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। মন্ত্রী শ্রী চৌধুরী উল্লেখ করেন যে রাজ্য সরকার চায় রাজ্যের ছেলেমেয়েরা যাতে রাজ্য থেকেই চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশুনা করতে পারে এবং রাজ্যে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুফল পৌঁছে দিতে।
সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটন মন্ত্রী জানান, “স্বাধীন ট্রাস্ট’ ত্রিপুরায় শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য আইজিএম হাসপাতালকে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানায়। ‘স্বাধীন ট্রাস্ট’ আগরতলার পাশে নিজস্ব অর্থে জমি ক্রয় করে কলেজ ভবনের নির্মাণকার্য চালিয়ে যাচ্ছে। এজন্য রাজ্য সরকার তাদেরকে বিনামূল্যে সরকারি জমি বা বিল্ডিং কিছুই দেয়নি। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা তাদের জমিতে ৬০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করতে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য ন্যাশনাল মেডিকেল কাউন্সিল (NMC) এর নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালটি ৬০০ শয্যা বিশিষ্ট হওয়া প্রয়োজন। রাজ্য সরকার মেডিকেল কলেজ স্থাপনের মাধ্যমে জনগণের যাতে উপকার হয় সে লক্ষ্যে আইজিএমের শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক পরিকাঠামোগত উন্নয়ন করছে।স্বাধীন ট্রাস্ট’ এর পক্ষ থেকে জানিয়েছে যে, তাদের নিজস্ব হাসপাতাল স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত আইজিএম হাসপাতালকে শুধুমাত্র সাময়িককালের জন্য ব্যবহার করবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটনমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের প্রয়োজন যথেষ্ট। এর কারণ হল ত্রিপুরা সরকারের অধীনে বর্তমানে ১, ১৮৯ জন চিকিৎসক বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে পরিসেবা দিচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organisation) বিধান অনুসারে চিকিৎসকদের সঙ্গে জনসংখ্যার আনুপাতিক হার ১:১০০০। আমাদের রাজ্যের জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ সেই অনুপাতে রাজ্যে চিকিৎসক এবং জনসংখ্যার অনুপাত হল ১:৩৪৪৮। অর্থাৎ ৩৪৪৮ জনেরর জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক রয়েছেন। বর্তমানে রাজ্যে ২২৫ টি মেডিকেল সিট বরাদ্দ রয়েছে (আগরতলা গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজে ১২৫ টি এবং ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজে ১০০টি)। সুতরাং রাজ্যে এই মুহূর্তে চিকিৎসকের প্রয়োজন মেটাতে আরও মেডিকেল সিট থাকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
পাশাপাশি রাজ্য সরকার চিকিৎসকের অভাব দূর করতে আন্তরিক। সেক্ষেত্রে স্পেশালিস্ট এবং সুপার স্পেশালিস্টসহ চিকিৎসক নিয়োগ করার উদ্যোগ নিতে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সাংবাদিক সম্মেলনে পর্যটনমন্ত্রী আরও জানান, কেন্দ্রীয় সরকারও সরকারি হাসপাতালকে টিচিং হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করে প্রাইভেট সেক্টরে মেডিকেল কলেজ স্থাপনকে উৎসাহিত করছে। এস্টাবলিশমেন্ট অফ মেডিকেল কলেজ রেগুলেশন্স, ১৯৯৯ এর ধারা ২(৫) এ বিধান রয়েছে যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষর করার সাপেক্ষে কোনও ব্যক্তি/এজেন্সি/ট্রাস্ট/সোসাইটি/কোম্পানিকে রাজ্য সরকার মেডিকেল কলেজ স্থাপন করার ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতাল ব্যবহার
মেডিকেল কলেজ, ম্যাঙ্গালোর কিলপোক গভর্নমেন্ট হাসপাতালকে টিচিং হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে,সিন্ধুদূর্গ শিক্ষণ প্রসারক (এসএসপি) মন্ডল মেডিকেল কলেজ মহারাষ্ট্র, সিন্ধুদূর্গ গভর্নমেন্ট হাসপাতালকে টিচিং হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে, জেজেএম মেডিকেল কলেজ, দেবাংগিরি, কর্ণাটক চিগাতেরি জেনারেল হাসপাতালকে টিচিং হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে, ডাঃ ডি ওয়াই পাতিল মেডিকেল কলেজ, পিমপিরি, পুনের সঙ্গে যশবন্তরাও চতুন মেমোরিয়াল হাসপাতালকে টিচিং হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, পশ্চিমবঙ্গের বোলপুরে স্বাধীন ট্রাস্টের শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ, বোলপুর মহকুমা হাসপাতালকে টিচিং হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য মৌ স্বাক্ষর করেছে। কেরালায় প্রাইভেট মেডিকেল কলেজকে উৎসাহিত করতে রাজ্য সরকার সরকারি মেডিকেল কলেজে অটোপ্সি পরীক্ষার সময় প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিত থাকার অনুমতি দিয়েছে।সরকার ত্রিপুরায় সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিচ্ছে। মেডিক্যল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে এনএমসি যাবতীয় অনুমোদন দেবে। সরকারকে সিকিউরিটি মানিও জমা দেবে স্বাধীন ট্রাস্ট। আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজে-এর রেটে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ছাত্রছাত্রীদের জন্য যে ফি রয়েছে, ঠিক সেই হারে দশটি আসন সংরক্ষিত রাখবে। ভর্তির ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। পরবর্তী সময় স্বাধীন ট্রাস্ট এবং ত্রিপুরা সরকারের মধ্যে এই বিষয়ে একটি মৌ স্বাক্ষরিত হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে আইজিএম হাসপাতালের পরিষেবার ব্যহত হওয়ার প্রশ্ন ও অভিযোগকে নস্যাৎ করে পর্যটন মন্ত্রী বলেন, ক্লাশ হবে ত্রিপুরা শান্তিনিকেতন মেডিক্যাল কলেজে। আইজিএম হাসপাতালে মাঝে-মাঝে প্র্যাকটিক্যাল ক্লাশ ইত্যদি হবে।তাতে কোনও ক্ষতি হবে না। আইজিএম হাসপাতালের সম্পদ নষ্ট হলে সে অর্থ তারা মিটিয়ে দেবে। ২০০৬ সালে রাজ্য সরকারের জেলা হাসপাতাল (ডঃ বি আর আম্বেদকর মেমোরিয়াল হাসপাতাল)কে ব্যবহার করার জন্য জি নেট (GENET) গ্রুপকে ত্রিপুরা মেডিকেল কলেজের টিচিং হাসপাতাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জিনেট প্রতারণা করে পালিয়ে যায়।তাই জি-নেট কান্ডের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে তার জন্য রাজ্য সরকার সতর্ক বলে মন্ত্রী জানান। উল্লেখ্য, বিগত দিনে হাসপাতাল স্থাপনের স্বার্থে আইএলএস হাসপাতালকে রাজ্য সরকার প্রায় বিনামূল্যে জমি ব্যবহার করতে দিয়েছিল। এই সমস্ত বিষয়গুলি মাথায় রেখে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিসেবার উন্নয়নের স্বার্থে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের ক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্য সরকার সরকারি আইন কানুন মেনেই সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করেছে।