Hare to Whatsapp
সরকারের লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মার্চ ৬, ২০২৪: এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়তে হলে সবার জন্য সব কাজ সঠিকভাবে করতে হবে। বিধানসভায় পেশ করা বাজেটে রাজ্য সরকারের দায়বদ্ধতার কথাই ফুটে উঠেছে। দেখতে হবে আমাদের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি হচ্ছে কিনা। সরকারের লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও উন্নয়ন। ৫ মার্চ রাজ্য বিধানসভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য পেশ করা বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা এবং ছাটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। উল্লেখ্য, আজ বিধানসভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ২৭ হাজার ৮০৪ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে। বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যতের দিশারি। তাছাড়াও এই বাজেট প্রবৃদ্ধি অভিমুখী। বাজেটে সমাজের প্রতিটি অংশের মানুষের কথা ভাবা হয়েছে। বাজেটে ১,৭২১ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বরাদ্দ করা হয়েছে, যা বিগত বছরের বাজেট থেকে ১৯.৮৮ শতাংশ বেশি। বাজেটে জনজাতি কল্যাণে ট্রাইবাল সাব প্ল্যানের অধীনে ৩৯.৯৩ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাছাড়াও বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে ৫,৫০৮ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে, যা গত বছরের বাজেট বরাদ্দের চেয়ে ১১.৫৪ শতাংশ বেশি। পিএম-ডিভাইন প্রকল্পে এজিএমসি ও জিবি হাসপাতাল পরিসরে একটি ২০০ শয্যা বিশিষ্ট মাল্টিকেয়ার হেলথ ইউনিট নির্মাণ করা হবে।
বিধানসভা অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে বাজেটের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, বাজেটের উপর আলোচনায় বিধায়কগণ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। এজন্য তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এভাবেই গঠনমূলক আলোচনা হওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজকে অনুসরণ করেই আমাদের রাজ্যেও বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে। রাজ্যে পরিকাঠামোগত উন্নতি করতে পারলেই স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি হবে এবং আমরা জনগণের জন্য আরও ভালো পরিষেবা দিতে পারবো। রাজ্য সরকারের সব কাজের মধ্যেই স্বচ্ছতা রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাজেটে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে মহিলাদের জন্য ক্ষমতায়ন। যুবক যুবতীদের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, তপশিলি জাতি, তপশিলি জনজাতি, ওবিসি, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সহ সব অংশের জনগণের উন্নয়নের প্রতি নজর দেওয়া হয়েছে। সব অংশের জনগণের জন্যই এই বাজেট। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বাজেটের ফলে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। আলোচনা করতে গিয়ে তিনি জনজাতি কল্যাণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন, বিধায়কদের এলাকায় নতুন রাস্তা তৈরি করার জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা, ল্যান্ড ব্যাঙ্ক তৈরি করা, পিঙ্ক টয়লেট তৈরি করার কথাও উল্লেখ করেন। আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের বিধায়কদের সঠিক পরামর্শ রাজ্য সরকার অবশ্যই গ্রহণ করবে। সর্বস্তরের মানুষের কথা বিবেচনা করেই এই বাজেট তৈরি করা হয়েছে।
বিধানসভা অধিবেশনের প্রথমার্ধে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বিধায়ক কিশোর বর্মণ বলেন, উন্নত ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এই বাজেট পেশ করা হয়েছে। যুগান্তকারী হিসেবে এই বাজেট চিহ্নিত হয়ে থাকবে। বিধায়ক পিনাকি দাস চৌধুরী আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে জনমুখী বাজেট পেশ করা হয়েছে। মহিলাদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে ব্যাপক হারে তাদের বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এদিন বিধানসভায় বাজেট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক স্বপ্না দেববর্মা, বিধায়ক শৈলেন্দ্ৰ চন্দ্র নাথ এবং বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায়।
বিধানসভার দ্বিতীয়ার্ধে আজ 2024-25 অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের উপর বিরোধী দলের সদস্যদের আনা ৬২টি ছাটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনা হয়। বিরোধী দলনেতা অনিমেষ দেববর্মা সহ ৯ জন বিধায়ক ছাটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনা করেন। ছাটাই প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ কলই, বিধায়ক শৈলেন্দ্ৰ চন্দ্র নাথ, বিধায়ক জিতেন্দ্র চৌধুরী, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, বিধায়ক মানব দেববর্মা, বিধায়ক শ্যামল চক্রবর্তী, বিধায়ক গোপাল চন্দ্র রায় ও বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস। আলোচনার পর ছাটাই প্রস্তাবগুলি বাতিল হয়ে যায় এবং 2024-25 অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।