Share Whatsapp

রাজ্যের সমস্ত জনগণের কাছে স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবার সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, ফেব্রুয়ারি ১৬, : রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে আজ এক নতুন দিগন্তের সূচনা হল। মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা:) মানিক সাহা ১৫ ফেব্রুয়ারি চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা-২০২৩ এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। এ উপলক্ষ্যে আগরতলার নেতাজী সুভাষ বিদ্যানিকেতনের মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের সমস্ত জনগণের কাছে স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবার সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে আমাদের রাজ্যেও ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার সূচনা হয়েছিল। আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় দেশের অনেক সুবিধাভোগী উপকৃত হচ্ছেন। রাজ্যের প্রায় ৯ লক্ষ ৭৫ হাজার পরিবারের মধ্যে ৫ লক্ষ ১২ হাজার পরিবার এই প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। রাজ্যে এখন পর্যন্ত ২ লক্ষ ৯৪ হাজারেরও বেশী সুবিধাভোগী আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনাটি আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনার আদলে করা হয়েছে। শুধুমাত্র কার্ডের ক্ষেত্রে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় রাজ্যের যেসমস্ত পরিবার স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবার সুযোগ পাননি এমন প্রায় ৪ লক্ষ ১৫ হাজার পরিবারকে চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনার আওতায় আনা হবে।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগ আক্রান্ত মানুষ তার রোগের পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করতে গিয়ে অসহায়বোধ করেন। রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের এই অসহায়তার কথা বিবেচনা করে এই প্রকল্পটি গ্রহন করেছে। প্রকল্পের মুখ্য উদ্দেশ্য হল রাজ্যের প্রত্যেক নাগরিককে চিকিৎসা বিষয়ে সুরক্ষা প্রদান করা। রাজ্যে যেসমস্ত সুবিধাভোগী আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা, বিল্ডিং এন্ড আদার কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার, সেন্ট্রাল আর্মড পুলিশ ফোর্স প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী জনজাতি আদিবাসী ন্যায় মহা অভিযান প্রকল্পে অথবা অন্য কোন সরকারি বীমা প্রকল্পের আওতাভুক্ত নন, সেই সমস্ত নাগরিকগণ চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা ২০২৩ এর অধীনে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন। এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীরা রাজ্যের এবং বহির্রাজ্যের সমস্ত তালিকাভুক্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অন্তর্বিভাগের চিকিৎসা পরিষেবা গ্রহণ করতে পারবেন। এই প্রকল্পে হাসপাতাল থেকে ছুটির পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত ওষুধপত্রর ব্যবস্থা করা হবে। রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাটাগরির সরকারি কর্মচারিরাও এই যোজনার আওতায় আসতে পারবেন। তবে তাদেরকে মেডিক্যাল অ্যালাউন্স এবং মেডিক্যাল রি- এমবার্সমেন্ট সারেন্ডার করতে হবে। চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনায় যোগ্য পরিবারগুলি প্রতিবছর ৫ লক্ষ টাকার বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে সরকারের নিরন্তর প্রয়াস জারি রয়েছে। রাজ্যের পরিকাঠামো উন্নয়নে সম্প্রতি ডোনার মন্ত্রক ৫টি প্রকল্পে মোট ৭১৭ কোটি টাকার মঞ্জুরি দিয়েছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠোমার উন্নয়নে ৩টি প্রকল্প রয়েছে। আগরতলা সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং জিবিপি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৭২৭ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বাড়িয়ে ১৪১৩ করা হয়েছে। জি বি পি হাসপাতালে নবনির্মিত সুপার স্পেশালিটি ব্লকের উদ্বোধন করা হয়েছে। কার্ডিওলজি, সি টি ভি এস, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, প্লাস্টিক সার্জারি এবং নিউরো সার্জারি মতো সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু করা হয়েছে। একই সাথে নতুন সংস্কারকৃত শিশু ওয়ার্ড ও পি আই সি ইউ-র, জেরিয়াট্রিক ওয়ার্ড, সম্প্রসারিত ডায়ালিসিস ইউনিট এবং মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড-২ এর উদ্বোধনও করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যেই যাতে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট ও থ্যারাপি চিকিৎসা পরিষেবা শুরু করা যায় তার জন্য চিকিৎসক ও নার্সিং কর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নয়নে রাজ্য সরকার ১০০টি হেলথ সাব-সেন্টার নির্মাণের জন্য বাজেটে অর্থের সংস্থান রাখা হয়েছে। রাজ্যের প্রধান হাসপাতালগুলিতে রোগীর চাপ কমিয়ে আনতে জেলা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জেলায় ট্রমা সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। অটল বিহারী বাজপেয়ী রিজিওন্যাল ক্যান্সার হাসপাতালে চালু ‘মেরা হাসপাতাল' পোর্টালের মাধ্যমে ক্যান্সার রোগীরা চিকিৎসা পরিষেবার সুবিধা পাচ্ছেন। অতি কম সময়ে আগরতলায় ডেন্টাল কলেজ চালু হয়েছে। ডেন্টাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া আগরতলা ডেন্টাল কলেজের ব্যবস্থাপনার ভূয়সী প্রশংসা করেছে। এই কলেজকে আর্ট অফ এক্সিলেন্স হিসেবে গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেইসাথে রাজ্যে ই এস আই হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এর ভূমিপূজনও হয়ে গেছে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের সাথে জড়িয়ে আছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম। প্রধানমন্ত্রী অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়ন বিশেষ করে ত্রিপুরাকে হীরা মডেল উপহার দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই এনইসি বৈঠকে রাজ্যে আয়ুর্বেদিক ও হোমিওপ্যাথিক কলেজ স্থাপনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। তাছাড়া কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে রাজ্যে প্রায় এইমসের মতো একটি হাসপাতাল গড়ার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা ও পরিকাঠামো উন্নয়নের চিত্র তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহ রায় বলেন, রাজ্যের সমস্ত মানুষের কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ পৌঁছে দিতে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পে জাতি-শ্রেণী-ধনী-দরিদ্র বিভেদের কোন স্থান নেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গ দর্শন এবং মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার দূরদর্শী নেতৃত্বে রাজ্য সরকার প্রতিনিয়ত জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ার লক্ষ্যে সরকারের এটি অন্যতম পদক্ষেপ। অনুষ্ঠানে মুখ্য সচিব জে. কে. সিনহা চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনা প্রকল্পটিকে রাজ্য সরকারের একটি ঐতিহাসিক ও সাহসী পদক্ষেপ বলে আখ্যায়িত করেন।

অনুষ্ঠানে ভারত সরকারের ন্যাশনাল হেলথ অথরিটির অ্যাডিশন্যাল সিইও ড. বসন্ত গর্গ বলেন, এই ধরনের সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প গ্রহণে ত্রিপুরা দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য সচিব কিরণ গিত্যে। অনুষ্ঠানে পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়, সমবায় মন্ত্রী শুক্লাচরণ নোয়াতিয়া, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, বিশিষ্ট সমাজসেবী রাজীব ভট্টাচার্য্য প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ সুবিধাভোগীদের মধ্যে চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনার কার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনার লোগো উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা এবং চিফ মিনিস্টার জন আরোগ্য যোজনার বিষয়ের উপর একটি তথ্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ত্রিপুরা শাখার অধিকর্তা ডি কে চাকমা।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.