Share Whatsapp

রাজ্যের সার্বিক বিকাশে সরকার কৃষিক্ষেত্রের পরিকল্পিত উন্নয়নে গুরত্ব দিয়েছে : রাজ্যপাল

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, জানুয়ারি ২৭, : রাজ্যের সার্বিক বিকাশে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির উন্নয়নে রাজ্য সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। কৃষি নির্ভর ত্রিপুরায় ৭০ শতাংশ লোক কৃষিকাজের সাথে যুক্ত। তাই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে সরকার কৃষিক্ষেত্রের পরিকল্পিত উন্নয়নে গুরত্ব দিয়েছে। ২৬ জানুয়ারি আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লু একথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ এবং রাজ্য পুলিশের পদস্থ আধিকারিকগণ। আসাম রাইফেলস ময়দানে আয়োজিত ৭৫তম প্রজাতন্ত্র দিবসের মূল অনুষ্ঠানে রাজ্যপালকে অভিবাদন জানান বিএসএফ, সিআরপিএফ, আসাম রাইফেলস, টিএসআর, মহিলা টিএসআর প্ল্যাটুন, ত্রিপুরা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, ফরেস্ট গার্ড বাহিনী। তাছাড়াও কুচকাওয়াজে অংশ নিয়েছে এনসিসি'র সিনিয়র ডিভিশন বয়েজ, এনসিসি'র সিনিয়র ডিভিশন গার্লস, গার্লস গাইড, এনএসএস, সিভিল ডিফেন্স ও আসাম রাইফেলস পাবলিক স্কুল। কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন কমান্ডেন্ট কল্লোল রায়। কুচকাওয়াজে সিকিউরিটি বিভাগে প্রথম হয়েছে মহিলা টিএসআর বাহিনী। দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে আসাম রাইফেলস ও টিএসআর ১৪নং ব্যাটেলিয়ান। নন সিকিউরিটি ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে আসাম রাইফেলস পাবলিক স্কুল। দ্বিতীয়, তৃতীয় হয়েছে এনএসএস ও এনসিসি সিনিয়র ডিভিশন গার্লস।

অনুষ্ঠানে রাজ্যবাসীকে প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাজ্যপাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে রাজ্যের ২,৪৫,৩৩৯ জন কৃষকের অ্যাকাউন্টে ৬৪০.৪০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় এখন পর্যন্ত ১২.৭৬ লক্ষ কৃষকের জমি বীমার আওতায় এসেছে। রাজ্যপাল বলেন, ত্রিপুরা দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক রাবার উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। রাজ্যে বছরে প্রায় ৯০,৭১২ মেট্রিকটন রাবার উৎপাদিত হয় এবং বহু পরিবার রাবার চাষ ও সংশ্লিষ্ট কার্যকলাপ থেকে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। ত্রিপুরায় ২১টি প্রজাতির বাঁশ চাষ হচ্ছে। রাজ্যে বাঁশবেত শিল্পের প্রসারেরও বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। এক সময় দেশের আগরবাতি শিল্পের জন্য প্রায় ৭৫ শতাংশ ধূপকাঠির শলা ত্রিপুরা থেকেই সরবরাহ করা হত। রাজ্য সরকার ২০২১ সালে ত্রিপুরা আগর উড পলিসি চালু করে। তখন থেকে সংরক্ষিত বন এলাকার বাইরে আগর ও রাবার গাছ কাটার জন্য বিশেষ অনুমোদন নিতে হয় না। ৫০ কোটি টাকার আগরবাতি মিশন এই শিল্পের আধুনিকীকরণে সহায়ক হবে। তাছাড়া ধর্মনগরে একটি আগর ট্রেড এন্ড রিসার্চ সেন্টার গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে আগামী ৪-৫ বছরে এক্ষেত্রে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাজ্য সরকারের উদ্যোগের ফলে দুবাই, কাতারের মত আন্তর্জাতিক বাজারে ত্রিপুরার ক্যুইন আনারস রপ্তানি হচ্ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত প্রায় ১২,৫৫৫ মেট্রিক টন আনারস রাজ্যের বাইরে পাঠানো হয়েছে। কাঁঠাল, চালতা, তেঁতুল, আঁদা ইত্যাদিও বাংলাদেশ, ইউ কে, জার্মানি, দুবাই-এ রপ্তানি করা হচ্ছে। রাজ্যপাল বলেন, ত্রিপুরায় ইকো-ট্যুরিজম, রিলিজিয়াস ট্যুরিজমের পাশপাশি প্রত্নতাত্বিক ও সাংস্কৃতিক কারণেও পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন ক্ষেত্রের বিকাশের জন্য রাজ্য সরকার রাজ্যের সর্বশেষ প্রান্ত পর্যন্ত যোগাযোগের সুবিধা সম্প্রসারিত করছে।

রাজ্যপাল বলেন, সরকারের এই উদ্যোগের ফলে রাজ্যে পর্যটকদের আগমন বেড়েছে ও কর্মসংস্থানের সুযোগও বেড়েছে। ‘স্বদেশ দর্শন' প্রকল্পে গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানগুলির পরিকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে। নারিকেল কুঞ্জে একটি হেলিপ্যাড এবং উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের সামনে উইকেন্ড ট্যুরিস্ট হাবও চালু করা হয়েছে। ‘প্রসাদ’ প্রকল্পে মাতা ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরের উন্নয়নের কাজ চলছে। ডম্বুর, ছবিমুড়া ও জম্পুইহিলসে প্যারামটরিং, প্যারাগ্লাইডিং-এর মত অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম চালু হয়েছে। রাজ্যপাল বলেন, প্রশাসনে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গতবছর মে মাস থেকে ই-অফিস চালু হয়েছে। ডিজিট্যাল ইন্ডিয়া ল্যান্ড রেকর্ডস মর্ডানাইজেশন প্রোগ্রাম-এর মূল বিষয়গুলি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করায় ভারতের রাষ্ট্রপতি রাজ্যের ৭টি জেলাকে ‘ভূমি সম্মান’ পুরস্কারে সম্মানিত করেছে। চতুর্পাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী ৬,৯৫৯টি বাস্তুচ্যুত ব্লু পরিবারের স্থায়ী পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ১২টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সবগুলি পরিবার ইতিমধ্যে নির্ধারিত স্থানে চলে গেছেন। রাজ্যের জনজাতি, তপশিলি জাতি, ওবিসি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নেও রাজ্য সরকার একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলি প্রি ও পোস্ট মেট্রিক স্কলারশিপ, আর্থিক সহায়তা, শিক্ষা ঋণ, ব্যবসার জন্য ঋণ ইত্যাদি সহায়তা প্রদান করে চলেছে।

প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল রাজ্যের উন্নয়নে সবাইকে দেশের মহান নেতাদের জীবনী থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আয়তনে ছোট হলেও সংস্কৃতি, শিল্প, শিক্ষা ইত্যাদি বহু ক্ষেত্রে ত্রিপুরা বড় বড় রাজ্যগুলির সথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। এস ডি বর্মণ, আর ডি বর্মণ যেমন বিশ্ব দরবারে খ্যাতি অর্জন করেছেন তেমনি রাজ্যের বহু খেলোয়াড় খেলাধুলার ক্ষেত্রে খ্যাতি অর্জন করেছেন। এসব ক্ষেত্রে আরও বেশি সাফল্যের জন্য রাজ্য সরকার সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যপাল এই সুযোগকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলে, রাজ্য একটি এডুকেশন ও হেলথ হাব-এ পরিণত হয়েছে। আগামীদিনে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গেটওয়েতেও পরিণত হবে। চট্টগ্রাম বন্দর চালু হলে আমাদের রাজ্য লজিস্টিক হাবেও পরিণত হবে। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ১৫০টি নতুন পেট্রোল বাঙ্ক অনুমোদন করেছে। এগুলি এবছরই খুলে যাবে এবং প্রায় ২০০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সরকার জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি সংস্কৃতি সংরক্ষণের জন্যও কাজ করছে। গ্রামীণ এলাকায় বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। মেয়েদের জন্য স্নাতকোত্তর স্তর পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সমাজের সকল অংশের মধ্যে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের পরিবেশ তৈরি করে দেশের ঐক্য ও অখন্ডতা রক্ষার জন্য সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ২০২৪ সালের প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষে যেসকল পুলিশ অফিসার ও কর্মীগণ রাষ্ট্রপতির পদকে ভূষিত হয়েছেন তাদের নাম ঘোষণা করা হয়। এবার প্রেসিডেন্টস পুলিশ মেডেল পেয়েছেন ইন্সপেক্টর অব পুলিশ দেবব্রত পাল। তাছাড়া পুলিশ মেডেল পেয়েছেন ডেপুটি এসপি (ট্রাফিক) দীপক কুমার সরকার, ইন্সপেক্টর অব পুলিশ রাণা চ্যাটার্জি, সাব ইন্সপেক্টর পিন্টু মজুমদার সুবেদার কৌস্তব ভট্টাচার্য, নায়েক সুবেদার আব্দুল সহিদ, হাবিলদার বিনন্দা জমাতিয়া। অনুষ্ঠানে ২০২২-২৩ সালের রাজ্যপাল মনোনীত বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জ, সেকেন্ড বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জ ও থার্ড বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জকে পুরস্কৃত করা হয়। বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জের পুরস্কার পেয়েছে রাজনগর ওয়াইল্ড লাইফ রেঞ্জ, সেকেন্ড বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জের পুরস্কার পেয়েছে কাঞ্চনপুর রেঞ্জ, থার্ড বেস্ট ফরেস্ট রেঞ্জের পুরস্কার পেয়েছে দুর্গা চৌমুহনী রেঞ্জ। রাজ্যপাল ইন্দ্রসেনা রেড্ডি নাল্লুর হাত থেকে পুরস্কারগুলি গ্রহণ করেন যথাক্রমে সুকান্ত সরকার, অমিয় সূত্রধর ও জগৎ বাহাদুর দেববর্মা।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.