Share Whatsapp

কাঁটাতারের ওপাড়ে ত্রিপুরার ৩০০০ মানুষ নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন

By Our Correspondent

আগরতলা, এপ্রিল ১৩, : নিজের দেশে আসতে চাইলে বাধা সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া। লক ডাউনের পর থেকে পনের দিন ধরে সিল করে রাখা হয়েছে গেটও। সঙ্গে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অতন্দ্র প্রহরা। অন্য দিকে আন্তর্জাতিক সীমা রেখা, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর টহল। এর মাঝ খানে ভারতীয় ভূখণ্ডে বসবাস করছেন সোনামুড়ার যাত্রাপুর থানাধীন দক্ষিণ পাহাড়পুর গ্রামের পদ্মার পাড় এলাকায় বসবাস করছে কাশেম মিয়া, আনোয়ার হোসেন, এছাক মিয়া এবং সেলিম মিয়াদের চারটি পরিবার। গত পনের দিন ধরে এক প্রকার বন্ধী চারটি পরিবারের শিশু কিশোর পুরুষ মহিলা সবাই।ভারতীয় হয়েও তারা নিজের দেশে আসতে পারছেন না, অনাহারে, অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। কি তাদের অপরাধ, তা জানতে চাইছেন এছাক মিয়ারা। শুধু পদ্মার পাড় নয়, সিপাহী জলা জেলায় তিন হাজার লোক এভাবে কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে রয়েছে বলেও সোনামুড়া মহকুমা প্রশাসক সূত্রে খবর।

বাংলাদেশের লোক যাতে আসতে না পারে, সেই জন্য গত পক্ষ কাল ধরে কাঁটাতারের বেড়ার গেট বন্ধ করে দেয় বি এস এফ। প্রথম কিছু দিন কাঁটাতারের বেড়ার বাইরের লোকেরা বি এস এফের অনুমতিক্রমে আসা যাওয়া করতে পারতো। কিছু দিন পর বাংলাদেশের কিছু লোক এপারে ওঠে আসার ভুয়া খবর ভাইরাল হয় দিকে দিকে। তার পর থেকে চাপের মুখে কঠোর হয়ে যায় বি এস এফ । সিল করে দেওয়া হয় কাঁটাতারের বেড়ার গেট। তার আগে বেড়ার ওপাড়ের লোকদের এপারে চলে আসতে নির্দেশ দেয় বি এস এফ।কিন্তু হঠাৎ করে বাড়ী ঘর ফেলে তারা কোথায় যাবে, এই বিপদের দিনে কারা তাদের মাথা গুজার ঠাই তা তারা খোঁজে পায়নি। এর ফলে নিজ বাড়ীতেই থেকে যায় কাঁটাতারের ওপাড়ের লোকজন। প্রথম প্রথম তারা বাংলাদেশের হাট বাজার দোকানে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে নিয়ে আসতো । পরে বাংলাদেশেও করোনা ক্রমশ বিস্তার লাভ করায় সীমান্তে টহল বৃদ্ধি করে বিজিবি। সীমান্তে টহলের দায়িত্ব দেওয়া হয় বাংলাদেশ সেনা বাহিনীকেও । এর ফলে বাংলাদেশের হাট বাজার করা বন্ধ হয়ে যায় কাঁটাতারের ওপাড়ে বসবাস করা ভারতীয় লোকদের।

দুই দেশের মাঝ খানে এখন বন্ধী হয়ে আছে কয়েক হাজার মানুষ । বিশেষ করে ভবানীপুর , হিম্মতপুর, কালী কৃষ্ণ নগর, বিরাম পুর , দক্ষিণ পাহাড়পুর , উত্তর পাহাড়পুর, ধনপুর , মনারচক, কুলু বাড়ী, মতিনগর, কলম চৌড়া, বাঘবের, কলসী মুড়া, বক্স নগর , আশাবাড়ী , রহিম পুর প্রভৃতি এলাকায়। এন সি নগর, দূর্গাপুর, শ্রীমন্ত পুর, শাহপুর, সোনাপুর, বলেরডেপা প্রভৃতি এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া না হলেও রাস্তার মধ্যে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া ফেলে অতিরিক্ত টহল বাড়িয়ে সীমান্ত সিল করে রেখেছে বি এস এফ। এর ফলে এক দিকে কাঁটাতারের বেড়া আর বি এস এফ জওয়ানদের কঠোর ভূমিকার কারণে এপারে আসতে পারছে না ওপাড়ে থাকা ভারতীয় লোকেরা।

সোনামুড়ার দক্ষিণ পাহাড়পুর গ্রামের পদ্মার পাড় এলাকার চাষি এছাক মিয়া জানান পেটের ক্ষুধায় চাল ডাল আনতে ওপাড়ে যেতে হয়েছিল। স্থানীয় যশপুর বিওপির বিজিবির সুবেদার ধরে তাকে প্রচণ্ড মারধর করে। আগে তারা বাজার করতে দিতো , এখন সীমান্তের ধারে কাছেও যাওয়া যায় না। ঘরে যে চাল ডাল ছিল তা শেষ হয়ে গেছে, এখন ঘরে আর কোন খাবার নেই। কোথাও যাওয়ার অনুমতিও নেই। এই অবস্থায় মৃত্যু ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই বলেও আজ জানান চাষি এছাক মিয়া। তিনি আরও জানান, তার সংসার চলছিল এক মাত্র দুধ বিক্রয় করে। প্রতি দিন সাত আট লিটার দুধ বিক্রয় করতেন, এপারে সুযোগ না পেলে ওপাড়ে দুধ বিক্রয় করে সংসার চালাতেন। এপার ওপাড় দুই পাড়ই এখন বন্ধ। প্রতি দিন তার ছয় সাত লিটার দুধ নষ্ট হচ্ছে, গাভীর খাবারও আনা যাচ্ছে না বলেও তিনি জানান। এভাবে প্রশাসন তাদের অবহেলা করলে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আগেই তারা অনাহারে মারা যাবে বলেও জানান চাষি এছাক মিয়া। স্থানীয় এক মহিলা জানান, তাদের পদ্মার পাড়ে সরকারী কোন জলের উৎস নেই। বেড়ার এপার থেকে লম্বা কয়েল পাইপ লাগিয়ে আগে তারা কাঁটাতারের ওপাড়ে জল নিয়ে যেতো। গত কাল বি এস এফ তাদের তাদের জলের পাইপ লাইনটিও কেটে দেয় বলে অভিযোগ সেই মহিলার। এভাবে চাল, ডাল, পানীয় জল ছাড়া বেঁচে থাকা অসম্ভব বলেও তিনি জানান।

এব্যাপারের কথা বলা হলে কাঁঠালিয়া ব্লকের বিডিও প্রবাল কান্তি দে জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মোতাবেক কাঁটাতারের ওপাড়ে কোন লোক থাকার কথা নয় বলেও তিনি জানান। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো তাদেরকে এপারে এনে পুনর্বাসন দেওয়ার কাজ তিনি করেন নি বলেও জানান। এই সংকট জনক পরিস্থিতিতে তারা যাতে বাঁচতে পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে স্থানীয় পঞ্চায়েতকে বলা হবে বলেও তিনি জানান।

স্থানীয় কালী কৃষ্ণ নগর পঞ্চায়েতের সদস্য শ্যামল মুহুরি জানান কাঁটাতারের ওপাড়ের মানুষ নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। , “আমরা বলেছিলাম তাদের এপারে চলে আসার জন্য। কিন্তু তাদের জীবিকা নির্বাহের প্রশ্নে তারা আমাদের আবেদনে সাড়া দেয়নি। তাদের বাড়িঘর, চাষযোগ্য জমি, হাঁস-মুরগি এবং গবাদি পশু রয়েছে সেখানে। , তাই তারা তাদের পক্ষে চলে আসা করা সম্ভব নয় বলেও জানা শ্যামল মুহুরি। সোনামুড়ার মহকুমা শাসক সুব্রত মজুমদার জানান, সোনামুড়ায় কাঁটাতারের বাইয়ে কত লোক রয়েছে তা তিনি জানেন না। সয়লাব জলা জেলায় তিন হাজার লোক রয়েছে কাঁটাতারের বাইয়ে। এর মধ্যে প্রায় আশি শতাংশই সোনামুড়ায় পড়েছে বলেও জানান মহকুমা শাসক। তিনি আরও জানান তারা বাংলাদেশে যাওয়ার পথে কোন বাধা না থাকায় তারা অনায়াসেই সেই দেশে যায়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যাতে তারা এপারে আসতে না পারে সেই কারণে কাঁটাতারের বেড়ার গেট সিল করে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে তাদেরকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।

রাজ্যের মানবাধিকার সংগঠনের চেয়ারম্যান পুরুষোত্তম রায় বর্মণ জানান, কোন রাষ্ট্র মহামারী চলা কালে তার নিরপরাধ জনগণের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে না। এটা জঘন্য মানবাধিকার লঙ্ঘন। রাজ্যের লিগ্যাল সেল তাদের পাশে দাঁড়াবে বলেও তিনি জানান।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.