প্রধানমন্ত্রী সূর্যঘর মুফৎ বিজলী যোজনায় ২৬৬টি বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মে ৫, : প্রধানমন্ত্রী সূর্যঘর মুফৎ বিজলী যোজনায় ২০২৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ৫০ হাজার গ্রাহকের ঘরে সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। অনলাইনে ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণের জন্য ১৩,৫৩৬ জন রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এরমধ্যে ২৬৬টি বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হয়েছে। ৪ মে সচিবালয়ে নিজ অফিসকক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও উদ্যোগ সমূহ বৈঠকে তুলে ধরেন।
বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবনযাপন সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার ক্ষেত্র হিসেবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। তাই তিনি ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে পূনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তির উপর জোর দিয়েছেন। সৌরবিদ্যুতের ব্যবহারের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী সূর্যঘর মুফৎ বিজলী যোজনার সূচনা করেছেন। এই প্রকল্প রাজ্যেও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করে এখন পর্যন্ত রাজ্যে ১৮৪ জন ভোক্তা সরকারি ভর্তুকী পেয়েছেন। এই প্রকল্প স্থাপনে ৯৫ জন ব্যাঙ্ক থেকে ১ কোটি ৭৫ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা ঋণ পেয়েছেন। এই প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে নিজ বাড়িতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিদ্যুৎ বিলের অর্থ সাশ্রয় এবং অতিরিক্ত উৎপাদিত বিদ্যুৎ অনগ্রীডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিগমে প্রেরণ করে বাড়তি আয়ের সুযোগও গ্রহণ করতে পারবেন গ্রাহকরা। এরমধ্যে নিজেদের সোলারের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে আয় করেছেন ৭০ জন। ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম লিমিটেড এই ৭০ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৩০ হাজার ৯০২ টাকা প্রদান করেছে। ডোমেস্টিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১০ কিলোওয়াট পর্যন্ত এই প্রকল্প স্থাপন করার সুবিধা রয়েছে। এক্ষেত্রে ৩ কিলোওয়াট পর্যন্ত সরকারি ভর্তুকী পাওয়া যাবে। হাউজিং অ্যাপার্টমেন্ট/আবাসিক ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষেত্রে প্রতি পরিবার পিছু সর্বোচ্চ ৩ কিলোওয়াট হিসেবে ৫০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত প্ল্যান্ট স্থাপন করতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াটে সরকারি ভর্তুকী রয়েছে ১৯,৮০০ টাকা। এই যোজনার সুবিধা নেওয়ার জন্য তিনি সকলের কাছে আহ্বান জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, বর্তমানে রুখিয়া থেকে ১৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় সেখানকার ৬৩ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ওপেন সাইকেল গ্যাস টারবাইনকে ১২০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল গ্যাস টারবাইনে রূপান্তরিত করা হবে। এরফলে অতিরিক্ত গ্যাস না নিয়েই ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। খুব শীঘ্রই এই কাজ শুরু হবে। গোমতী জল বিদ্যুৎ প্রকল্পকে মেরামত এবং আধুনিকীকরণ করার জন্য এনএইচপিসি'র সাথে কথাবার্তা চলছে।
প্রকল্পটি চালু হলে তা থেকে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। মহারাণী মাইক্রো হাইডেল প্রকল্পটি গত ৩৫ বছর থেকে বন্ধ হয়ে আছে। এই প্রকল্পটিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষম করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি চালু হলে তা থেকে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। এছাড়াও রাজ্যের ১০টি স্থানে ক্ষুদ্র জল বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধলাই জেলার ছাওমনুতে ৮০০ মেগাওয়াট সম্পন্ন পাম্প স্টোরেজ নির্মাণের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আগরতলাস্থিত এসএলডিসির ব্যাক আপ হিসেবে কাজ করার লক্ষ্যে কুমারঘাটে আরও একটি স্টেট লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার (এসএলডিসি) স্থাপন করা হবে। তিনটি ৩৩ কেভি গ্যাস ইনসুলেটেড সাব স্টেশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিদ্যুৎমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল চার্জিং স্টেশন বসানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল লাইন কভার্ড কন্ডাক্টর, এলটি এবি ক্যাবল এবং স্মার্ট মিটার বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার যাদের মাসিক বিদ্যুৎ ব্যবহার ১০০ ইউনিটের কম এরকম ৮০ হাজার গ্রাহকদের ঘরে মোট ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানেও সৌরবিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, গরমকালে রাজ্যে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়ায় ৩৭০ মেগাওয়াট। এই চাহিদা মোকাবিলায় রাজ্যে ৩৭২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে।
আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ নিগমের জেনারেল ম্যানেজার স্বপন দেববর্মা, এজিএম কনকলাল দাস প্রমুখ।
আরও পড়ুন...