Hare to Whatsapp
সমাজের প্রতিটি মানুষের সার্বিক কল্যাণই হচ্ছে সরকারের মূল লক্ষ্য : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, ডিসেম্বর ১, : বর্তমান রাজ্য সরকার জনগণের সরকার। সমাজের প্রতিটি মানুষের সার্বিক কল্যাণই হচ্ছে সরকারের মূল লক্ষ্য। সমাজের সমস্ত অংশের মানুষের উন্নতি হলেই সমাজের প্রকৃত উন্নতি হয়। এই লক্ষ্যকে সফল করার উদ্দেশ্যে সরকারের সমস্ত জনকল্যাণমুখী প্রকল্পকে সমাজের অন্তিমব্যক্তি পর্যন্ত নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার সূচনা করেছেন। ৩০ নভেম্বর আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে তপশিলি জাতিভুক্ত লাভার্থীদের মধ্যে সেলাই মেশিন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান, উচ্চশিক্ষায় পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ঋণ প্রদান ও তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রী নিবাসগুলির মধ্যে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। তিনি বলেন, রাজ্যের সর্বস্তরের মানুষের সার্বিক উন্নয়নে রাজ্য সরকার দায়বদ্ধ। রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে রাজ্যে প্রতি ঘরে সুশাসনের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যে ২০১১ সালের জনগণনা অনুসারে প্রায় ৬ লক্ষ্যের উপর তপশিলী জাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। মোট ৩৪ টি তপশিলী জাতি সম্প্রদায় ত্রিপুরায় রয়েছে। রাজ্য সরকার তপশিলী জাতি সম্প্রদায়ের জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্বনির্ভরতা, এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক মান উন্নয়নের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। রাজ্যের এস সি অধ্যুষিত ৩২টি এলাকাকে চিহ্নিত করে সেই সব এলাকার সার্বিক বিকাশের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, তপশিলী জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ন করছে। এর মধ্যে রয়েছে ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য প্রি-মেট্রিক স্কলারশিপ প্রদান, ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য ড. বি আর আম্বেদকর মেরিট অ্যাওয়ার্ড, বৃত্তিমূলক কোর্সে পড়াশোনার জন্য তপশিলি জাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের এককালীন আর্থিক অনুদান, সরকারি এস সি হোস্টেলে আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য ছাত্রাবাস স্টাইপেন্ড, এসসি হোস্টেলে ছাত্রছাত্রীদের মূল বিষয়ের উপর স্পেশাল কোচিং, এস সি হোস্টেলের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং বিভিন্ন সামগ্রী প্রদান, এস সি ছাত্রাবাসগুলির সংস্কার, এস সি ছাত্রাবাসগুলির পরিকাঠামো উন্নয়ন, এস সি সম্প্রদায়ভুক্ত দুঃস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান, মুখ্যমন্ত্রীর স্ব-নির্ভর যোজনার মাধ্যমে সহায়তা প্রদান, তপশিলিজাতি সমবায় উন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে সহায়তা প্রদান ইত্যাদি। এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী আদর্শ গ্রাম যোজনা, মুখ্যমন্ত্রী স্ব-নির্ভর পরিবার যোজনা ইত্যাদি বিষয়ও তাঁর বক্তব্যে তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, তপশিলি জাতিভুক্ত সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রী যারা তপশিলিজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধীনে ৪০টি হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করছে তাদের বর্তমানে প্রতিদিন ৮০ টাকা করে স্টাইপেন্ড প্রদান করা হচ্ছে।
এস সি ছাত্রছাত্রীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আগরতলায় কোচিং-র ব্যবস্থা করা হয়েছে। তপশিলিজাতি কল্যাণ দপ্তর থেকে এস সি সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে প্রশিক্ষণের জন্য এককালীন আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুঃস্থ এস সি রোগীদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তার সংস্থানও রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের সঙ্গে রাজ্যও আজ সব ক্ষেত্রে এগিয়ে চলছে। সবার সম্মিলিত সহযোগিতার মাধ্যমেই এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠন করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে তপশিলিজাতি কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী সুধাংশু দাস বলেন, সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলি বর্তমানে সঠিকভাবে রূপায়িত হচ্ছে। মানুষ বর্তমানে সরকারের সমস্ত প্রকল্পগুলির সুযোগ নিতে পারছেন। জনগণ যাতে এইসব প্রকল্পগুলির সুবিধা নিতে পারেন তার জন্য প্রতিনিয়ত প্রচার এবং পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এরকম লাভ্যার্থীদের মধ্যে সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠান রাজ্যের বাকি ৭টি জেলাতেও করা হবে। তিনি বলেন, আজকে পশ্চিম জেলার তপশিলি জাতিভুক্ত লাভ্যার্থীদের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩০৭ জনকে সেলাই মেশিন, ২৬০ জনকে ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ঋণ প্রদান, ১৭ জনকে বাইসাইকেল বিতরণ, ৫০ জনকে ওজন পরিমাপক যন্ত্র, ১২টি এসটি হোস্টেলের জন্য ক্রীড়া সামগ্রী প্রদান, ৪ জনকে উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণ এবং ৬জনের একটি দলকে মাছ ও শুকনো মাছ ব্যবসার জন্য ঋণ প্রদান করা হবে।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আগরতলা পুর নিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, ত্রিপুরা তপশিলিজাতি সমবায় উন্নয়ন নিগম লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী, তপশিলিজাতি কল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিব বি এস মিশ্র। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তপশিলিজাতি কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা অসীম সাহা। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি হরিদুলাল আচার্য। অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা এবং উপস্থিত অতিথিগণ কয়েকজন সুবিধাভোগীর হাতে প্রতিকীস্বরূপ সেলাই মেশিন, ঋণের চেক, বাইসাইকেল ইত্যাদি তুলে দেন।