ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে মানব সম্পদের উন্নয়ন সম্ভব নয় : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মে ৩, : মানব সম্পদের উন্নয়নে শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাই গুণগত শিক্ষার প্রসারে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগেও গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। ২ মে আগরতলার রামনগর উচ্চতর মাধ্যমিক (ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের দ্বারোদঘাটন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী হেজামারাস্থিত বড়কাঠাল উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভবন, দারোগামুড়া (ইংরেজি মাধ্যম) উচ্চবিদ্যালয়ের নবনির্মিত বিদ্যালয় ভবন, রাণীরবাজারস্থিত সুকান্ত (ইংরেজি মাধ্যম) একাডেমির সম্প্রসারিত ভবন এবং আগরতলার ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। এই ভবনগুলি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮ কোটি ৬৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে মানব সম্পদের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব দিতে হবে। সময়ের প্রয়োজনে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন আনতে হবে যাতে করে শিক্ষার্থীরা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। বর্তমানে রাজ্যে শান্তির পরিবেশ বজায় থাকায় সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গরিব, মহিলা ও সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ প্রদান সহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে ডিজিটাল শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ৪৪টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আরও ৩০টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৬৪ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ১২৩টি বিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী প্রজন্মকে গুণগত এবং আধুনিক সময়োপযোগী শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রচেষ্টায় দীর্ঘ বছর পর দেশে জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করা হয়েছে। রাজ্যেও জাতীয় শিক্ষা নীতির নীতি নির্দেশিকা সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই লক্ষ্যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ভারত সরকারের নিপুণ মিশনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‘নিপুণ ত্রিপুরা’ কার্যকর করা হচ্ছে। ডিজিটাল শিক্ষার অঙ্গ হিসাবে রাজ্যের ৮৫৪টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাস চালু রয়েছে। এছাড়া সুপার ৩০ প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণ করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ জন শিক্ষার্থী আই.আই.টি., ৩ জন এন.আই.টি. এবং ৩ জন এম.বি.বি.এস. কোর্সে ভর্তি হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে চিফ মিনিস্টার্স স্কলারশিপ ফর অ্যাচিভার্স টুয়ার্ডস হায়ার লার্নিং নামক বৃত্তিমূলক প্রকল্পে ২০০ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ৬০ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ২৩ হাজার ছাত্রীকে বিনামূল্যে বাইসাইকেল প্রদান করা হয়েছে। ছাত্রীদের লেখাপড়ায় উৎসাহিত করতে টি.বি.এস.ই. এবং সি.বি.এস.ই. বোর্ডে ভালো ফলাফল অর্জনকারী ১৪০ জন মেধাবী ছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুটি প্রদান
করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, বর্তমানে রাজ্যে শিক্ষায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গুণগত শিক্ষা প্রদানে সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। রাজ্যের শিক্ষার্থীরা যাতে সর্বভারতীয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারে সে লক্ষ্যে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের কোচিং-এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজ্যে স্বচ্ছ নিয়োগনীতি প্রণয়ন করে বিভিন্ন দপ্তরে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। বিভিন্ন দপ্তরের পাশাপাশি শিক্ষা দপ্তরেও টেট পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীরা শিক্ষকতার পেশায় চাকরি পাচ্ছেন।
অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বৃষকেতু দেববর্মা বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে গৃহীত রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায়ও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। রাজ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসারের ফলে জনজাতি অধ্যুষিত এলাকার বিদ্যালয়গুলিতে পাশের হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আগরতলা পুরনিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার বলেন, রামনগর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ইংরেজি মাধ্যমে রূপান্তরিত হওয়ার ফলে এলাকার গরিব অংশের ছেলেমেয়েরা ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পাবে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা এন. সি. শর্মা। সভাপতিত্ব করেন রামনগর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ কুমার দেববর্মা।
আরও পড়ুন...