Hare to Whatsapp
সমাজকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে আরক্ষা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, অক্টোম্বর ২২, : সমাজদ্রোহী ও অপরাধীদের হাত থেকে সমাজকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে আরক্ষা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশ দিনরাত কাজ করছেন। ২১ অক্টোবর আগরতলার অরুন্ধতীনগরস্থিত পুলিশ লাইনের মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে পুলিশ শহীদ স্মৃতি দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সারা দেশব্যাপী ২১ অক্টোবর দিনটিকে পুলিশ শহীদ স্মৃতি দিবস হিসেবে পালন করা হয়। আজকের দিনটিতে সেইসকল বীর শহীদ জওয়ানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয় যারা দেশের সেবায় নিজেদের আত্মবলিদান দিয়েছেন। ১৯৫৯ সালের আজকের দিনে লাদাখের হটস্প্রিংস এলাকায় টহলরত ভারতীয় জওয়ানদের উপর চীনা সেনাবাহিনীর অতর্কিত হামলায় ১০ জন ভারতীয় জওয়ান শহীদ হন। সেই দিনটির স্মরণে পুলিশ শহীদ স্মৃতি দিবস পালন করা হয়।
_আজ সারা দেশের সাথে রাজ্যেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পুলিশ শহীদ স্মৃতি দিবস উদযাপিত হয়। আরক্ষা দপ্তর থেকে অরুন্ধতীনগরের পুলিশ লাইনের মনোরঞ্জন দেববর্মা স্মৃতি স্টেডিয়ামে রাজ্যের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা কর্তব্যরত অবস্থায় যে সমস্ত পুলিশ কর্মী ও সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতি স্মারকে পুষ্পার্ঘ অপর্ণ করেন। এরপর মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ পুলিশের অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ শ্রদ্ধাঞ্জলি অপর্ণ করেন। পুলিশ শহীদ স্মৃতি দিবস অনুষ্ঠানে ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ থেকে ৩১ আগস্ট ২০২৩ পর্যন্ত কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হয়েছেন এমন ১৮৮ জন পুলিশ ও সুরক্ষা বাহিনীর জওয়ানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশকে মানুষের সমস্যার কথা ধের্য্য সহকারে শুনে আন্তরিকভাবে সেই সমস্যা নিরসনে চেষ্টা করতে হবে। রাজ্য সরকার স্বচ্ছ নীতিতে বিশ্বাস করে। তাই স্বচ্ছতার সাথে এমন কাজ করে যেতে হবে যাতে মানুষের কাছে সেগুলি ভবিষ্যতে স্মরণীয় হয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। ‘নেশা মুক্ত ত্রিপুরা' অভিযানে মাদকের বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। মাদক সংক্রান্ত মামলায় তদন্তের জন্য এসআইটি গঠন করা হয়েছে। মাদক সংক্রান্ত সামগ্রী উদ্ধার ও ধ্বংসের দিক থেকে ত্রিপুরা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগরতলায় ক্রাইম ব্রাঞ্চ পুলিশ স্টেশন চালু করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়াস কর্মসূচি চালু রয়েছে। রাজ্য পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। টিএসআর বাহিনীতে এই প্রথম ১৩৭ জন মহিলা জওয়ানকে নিয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। সার্বিক অপরাধের দিক থেকে দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে ত্রিপুরা নীচের দিক থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। সম্পত্তিগত অপরাধের দিক থেকে ত্রিপুরা দেশের অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় সর্বনিম্ন স্থানে রয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং ঘটনাবিহীন রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন এবং সম্প্রতি দুটি উপনির্বাচন সকল স্তরের আরক্ষা কর্মীদের পরিশ্রমের ফলেই শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। মহিলা ও শিশুদের সুরক্ষায় সরকার নানাবিধ প্রকল্প জারি রেখেছে। এবছর রাজ্য পুলিশ প্রতিষ্ঠার ১৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রত্যেকটি পুলিশ স্টেশনকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্স ভিত্তিক সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভিডিও ডাটা বিশ্লেষনের জন্য ভিডিও এনালাইসিস সিস্টেম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। সমস্ত জেলায় জিপিএস ভিত্তিক ভ্যাহিকেল সিস্টেম, জাতীয় সড়কের টহলদারি ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১১টি পুলিশ আউটপোস্টকে পুলিশ স্টেশনে উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে রাজ্যে পুলিশ স্টেশনের সংখ্যা ১০১টি। আমবাসায় নতুন একটি মহিলা পুলিশ স্টেশন চালুর ফলে রাজ্যে এখন মহিলা পুলিশ স্টেশনের সংখ্যা ৯টি। রাজ্যের প্রত্যেক জেলায় একটি করে মহিলা পুলিশ স্টেশন রয়েছে। উত্তর- পূর্বাঞ্চল রাজ্যগুলির মধ্যে ত্রিপুরা একমাত্র রাজ্য যেখানে সবকটি জেলাতে একটি করে মহিলা পুলিশ স্টেশন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরা পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের দ্বারা ক্রিমিনাল গ্রুপ ও সিন্ডিকেট দমনের লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ‘বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছে। টিএসআর’র দুটি ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়ানে নবনিযুক্ত ১৪১৭ জন জওয়ানদের বিশেষ প্রশিক্ষণ শীঘ্রই শেষ হবে। ‘সুবর্ণ জয়ন্তী ত্রিপুরা নির্মাণ যোজনায় গোমতী জেলার উদয়পুরে পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টের অফিস বাড়ি নির্মাণ করা হবে। এরজন্য ১২ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল প্রশিক্ষণের গুণগতমানের ক্ষেত্রে কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমি দেশের শীর্ষ স্থানে রয়েছে। প্রথমবারের মত মণিপুর থেকে পুলিশ ট্রেনিং-এর জন্য রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে এবং তা অনুমোদিত হয়েছে যা রাজ্যের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় বলে মুখ্যমন্ত্ৰী উল্লেখ করেন।