চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, মে ১, : বাস্তবমুখী ও গুণগত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান রাজ্য সরকার। স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগনীতি প্রণয়ন করে রাজ্যে সরকারি চাকরি প্রদান করা হচ্ছে। দলীয় আনুগত্যকে প্রাধান্য না দিয়ে মেধা ও যোগ্যতাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে যোগ্য মেধাবীরা যাতে বঞ্চিত না হয় সেদিকেও নজর রেখে কাজ করে চলেছে রাজ্য সরকার। ৩০ এপ্রিল আগরতলা নজরুল কলাক্ষেত্রের প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দপ্তরে টেট উত্তীর্ণদের মধ্যে নিয়োগপত্র বন্টন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। উল্লেখ্য, আজকের অনুষ্ঠানে শিক্ষা দপ্তরের ৬৬ জন অস্নাতক এবং ১৬২ জন স্নাতক পদে মোট ২২৮ জনকে চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠান মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ প্রতীকি হিসেবে ১৫ জনের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রিমোটের বোতাম টিপে শিক্ষা দপ্তরের মাই স্কুল মাই প্রাইড (আমার বিদ্যালয় আমার গর্ব) নামক একটি কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, গুণগত শিক্ষা প্রদানে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বর্তমান রাজ্য সরকার। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু নিয়োগনীতি মেনে চাকরি প্রদান করা হচ্ছে। প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও গতি আনার লক্ষ্যে বিভিন্ন দপ্তরে যেমন নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে তেমনি পুরোনো পদগুলি পূরণের জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ প্রক্রিয়া জারি রেখে ২০২৫-এর মার্চ মাস পর্যন্ত ডাই-ইন-হারনেস সহ মোট ১৭ হাজার ৫৫৪ জনকে সরকারি চাকরি প্রদান করা হয়েছে। ডাই-ইন-হারনেস চাকরি প্রদানেও সরকার স্বচ্ছতার নীতি প্রণয়ন করে চলেছে। এক্ষেত্রে ডাই-ইন-হারনেস চাকরিতে নিয়মিতভাবে সরকারের নীতি নির্দেশিকা অনুসারে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নিয়োগ করা হচ্ছে। চলতি মাসের আরও নিয়োগপত্র দেওয়ার ফলে চাকরি প্রাপকদের সংখ্যা আরও বাড়বে। স্বচ্ছতার সাথে স্বচ্ছ নিয়োগনীতি মেনে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ফলে এখনও পর্যন্ত চাকরি নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ বা আদালতে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে সরকারি চাকরির পাশাপাশি ৫,৭০০-এর বেশি কন্ট্রাকচুয়াল এবং আউটসোর্সিং কর্মচারীও নিয়োগ করা হয়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৩,৫৫৪ জনকে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, রাজ্যের যুবক যুবতীরা যাতে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের শূন্যপদগুলিতে চাকরি পেতে পারে তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার চাকরির ক্ষেত্রে পি.আর.টি.সি. বাধ্যতামূলক করেছে। এটি রাজ্য সরকারের একটি বলিষ্ঠ ও সাহসী পদক্ষেপ। রাজ্যের কর্মসংস্থানের সার্বিক পরিবেশের উন্নতির ফলে নতুন নতুন ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থান দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সিকিউরিটি গার্ড ও অন্যান্য পরিষেবা ক্ষেত্রে বিভিন্ন এজেন্সি ২,৯০০ এর বেশি জনকে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করেছে। ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের মাধ্যমে গত তিন বছরে রাজ্যের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটগুলিতে ১,৬০০-এর বেশি এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন হয়েছে। ন্যাশনাল ক্যারিয়ার সার্ভিস প্রজেক্টের আওতায় আগরতলা, ধর্মনগর ও কৈলাসহরে তিনটি মডেল ক্যারিয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে নিয়মিতভাবে রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের স্বার্থে জব ফেয়ার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফলে বেকারদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া ১০টি ভোকেশনাল গাইডেন্স প্রোগ্রামে ২৭০-এর বেশি প্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।

তিনি আরও বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে ৮২টি ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম আয়োজিত হয়, যেগুলিতে ১২ হাজারের বেশি চাকরি প্রত্যাশী অংশগ্রহণ করেছেন। অগ্নিবীর প্রকল্পের জন্য ২৮টি ক্যারিয়ার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং মোট ৩ হাজারের বেশি চাকরি প্রত্যাশী অংশগ্রহণ করেছেন। কেন্দ্রীয় সরাকরের সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৮-১৯ সালে রাজ্যের বেকারত্বের হার জাতীয় গড়ের থেকে বেশি ছিলো। সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেকারত্বের হার কমিয়ে আনা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও দেশের বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের উপর গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের রাজ্য বাজেটে ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম, ভোকেশনাল গাইডেন্স প্রোগ্রাম এবং ক্যারিয়ার অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্রামসমূহ ধারাবাহিকভাবে আয়োজন করার সংস্থান রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চাকরি প্রস্তুতির প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার পাশাপাশি পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এক্ষেত্রে মেধার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেকে সুদক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে পেশাগত কাজে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়। ফলে কাজের মূল্যায়নও করা যায়। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ভারতে কর্মক্ষেত্রে এমপ্লয়িবিলিটির হার ছিলো ৩৩.৩৫ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় দক্ষতা উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়ার ফলে বর্তমানে এমপ্লয়িবিলিটির হার ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। আগামীদিনে তা আরও বাড়বে। এই দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়া, স্কিল ইন্ডিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে রাজ্যের ছেলেমেয়েরা দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ নিয়ে রাজ্য এবং রাজ্যের বাইরে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করছে। রাজ্যে এখন প্রায় ২ লক্ষের উপরে উদ্যোগী রয়েছেন। তিনি বলেন, শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড, তাই সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাস্তব ও কর্মসংস্থানমুখী করে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, সাইবার নিরাপত্তা, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং কৃষি প্রযুক্তির মতো বিষয়গুলির উপর নতুন পাঠ্যক্রম চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিধানসভার মুখ্যসচেতক কল্যাণী সাহা রায়, শিক্ষা সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন.সি. শর্মা।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.