Share Whatsapp

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই ছাত্রছাত্রীদের মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, সেপ্টেম্বর ১৩, : খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার। এই ধরণের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক বিকাশের সহায়ক হবে। ১২ সেপ্টেম্বর সেকেরকোট উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭৫ বছর পূর্তি উৎসব ও প্রাক্তণীদের মিলন মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আয়োজিত রক্তদান শিবির ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে যাদের অবদান ছিল তাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানানো উচিত। ইতিহাসকে ভিত্তি করে ভবিষ্যতের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, খেলাধুলা এবং পড়াশুনা সমানভাবে চললেই ভবিষ্যতে ছাত্রছাত্রীরা সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে। যেকোনো শিক্ষার্থীর শিক্ষা শুরু হয় তার ঘর থেকেই। মা হচ্ছেন ঘরের প্রথম শিক্ষক। আর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দেখে রাখার দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলীর। পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা যথাসময়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছেন কি না তা লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব অভিভাবকদের। তিনি বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই ছাত্রছাত্রীদের মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষাদান ও তাদের অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য শিক্ষার্থীদের মনের গভীরে রেখাপাত তৈরী করে। যা ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে যাওয়ার পথকে সুগম করে। শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, পড়াশোনার পদ্ধতি এবং বিষয় সমূহ সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গতানুগতিক শিক্ষাদানের পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত বিষয়গুলিকেও বিদ্যালয়ের পাঠদানে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় চালু হওয়া নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতির উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যেও এই শিক্ষানীতি পর্যায়ক্রমে কার্যকর করা হচ্ছে। এরফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ অনেকটাই কমবে। তিনি বলেন, রাজ্যের ছেলেমেয়েদের প্রতিভার অভাব নেই। রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য এবং শিক্ষায় সর্বোত্তম ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে রাজ্য সরকার এনসিইআরটি পাঠ্যক্রম চালু করা থেকে শুরু করে ‘বিদ্যাজ্যোতি' প্রকল্প চালু, বিদ্যালয়গুলির পরীক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন, বছর বাঁচাও প্রকল্প চালু, কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র তৈরী, বন্দে ত্রিপুরা নামে শিক্ষামূলক চ্যানেল চালু করেছে। এছাড়াও নবম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান মনস্কতা বৃদ্ধিতে রাজ্য সরকার ‘ত্রিপুরা সায়েন্স ট্যালেন্ট সার্চ এগজামিনেশন’ এবং ‘ম্যাথ ট্যালেন্ট সার্চ এগজামিনেশন' চালু করেছে।

প্রতি বছর রাজ্য সরকার ৩০ জন মেধাবী ছাত্রছাত্রীকে জেইই/এনইইটি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য জাতীয় মানের প্রতিষ্ঠানে কোচিং নেওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। তিনি জানান, ৪টি নতুন ডিস্ট্রিক্ট ইনস্টিটিউট অব ট্রেনিং এবং, ১টি বিটিটিই স্থাপন করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রতিষ্ঠানগুলির পরিকাঠামো এবং এসসিইআরটি-এর পরিকাঠামো উন্নত করা হচ্ছে। ককবরক, মণিপুরী, চাকমা, হালাম, মগ ইত্যাদি ৮টি জনজাতি ভাষায় পাঠ্যবই বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে। কলেজস্তর পর্যন্ত ছাত্রীদের টিউশন ফি মুকুব করা হয়েছে। নবম শ্রেণীতে পাঠরত প্রায় ১ লক্ষ ছাত্রীকে বিনামূল্যে সাইকেল বিতরণ করা হয়েছে। ‘নিপুন ত্রিপুরা’ প্রকল্পে ৩য় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মৌলিক দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। প্রথম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য তিন মাস মেয়াদী ‘বিদ্যা সেতু’ মডিউল তৈরি করা হয়েছে। ত্রিপুরায় ১৮০টি বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চলছে যেখানে ৮৮৩৩ শিশু তার সুফল পাচ্ছে। ব্লক এবং জেলা স্তরে স্বল্প মূল্যে তৈরি করা টিচিং লার্নিং মেটেরিয়াল-এর রাজ্যভিত্তিক প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রের শিশুদের জন্য রাজ্য সরকার ‘মুকুল’ নামক কর্মসূচি চালু করেছে। সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পের অধীনে ৭৫২টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাস চলছে এবং ৬০টি বিদ্যালয়ে স্মার্ট ক্লাস শীঘ্রই শুরু করা হবে। রাজ্যের ৬০৪টি বিদ্যালয়ে আইসিটি প্রকল্প চলছে এবং আরও ২৯৪টি বিদ্যালয়ে এই প্রকল্প শুরু করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে। রাজ্যের ১০৬টি বিদ্যালয়ে টিংকারিং ল্যাবেরোটরি স্থাপন করা হয়েছে এবং আরও ১০০টি বিদ্যালয়ে টিংকারিং ল্যাবেরোটরি স্থাপন করা হবে। সমগ্র শিক্ষা প্রকল্প বর্তমানে ত্রিপুরায় ২৯৫টি বিদ্যালয়ে বৃত্তিমুলক শিক্ষা চলছে।

জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পিএমশ্রী প্রকল্পে প্রতিটি ব্লকে একটি করে মডেল স্কুল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য ৫০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সমাজের দুর্বল ও অনগ্রসর ছাত্রছাত্রীদের অনলাইনে ভর্তির আবেদনের সুবিধার্থে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন পোর্টাল তৈরী করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী কন্যা আত্মনির্ভর যোজনা নামে নতুন পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্বাদশমান পরীক্ষায় প্রথম ১০০ জন স্থানাধিকারী মেয়েদের বিনামূল্যে স্কুটি প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পিএমশ্রী এবং বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পে ৪০০টি সরকারি বিদ্যালয়কে আধুনিকীকরণ করা হবে। ত্রিপুরায় শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নে আগামী পাঁচ বছরে দুই হাজার কোটি টাকা খরচ করা হবে। যুব সম্প্রদায়কে দেশ সেবায় উৎসাহিত করার জন্য রাজ্য সরকার প্রত্যেকটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ত্রিপুরা অগ্নিবীর কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে। দিব্যাঙ্গ দৃষ্টিহীন ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষা লাভে উৎসাহিত করতে ‘মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ বৃত্তি চালু করা হয়েছে। এর অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরে পাঁচ হাজার টাকা এবং ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য চার হাজার টাকা করে মাসিক বৃত্তি প্রদান করা হবে। ১১টি সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সহায়তায় বৃত্তিমূলক পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিপিপি মডেলে ২টি নতুন কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। এগুলি হচ্ছে জিরানীয়া আইন কলেজ এবং কাকড়াবন জেনারেল ডিগ্রি কলেজ। বর্তমানে রাজ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আরও ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অচিরেই স্থাপন করা হবে। ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নেতাজি সুভাষ মহাবিদ্যালয়ে ও ৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মহারাজা বীরবিক্রম কলেজে নতুন সায়েন্স বিল্ডিং এবং ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলার কুঞ্জবনস্থিত ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্স স্টাডিস ইন এডুকেশনের প্রাতিষ্ঠানিক এবং প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, রাজ্যে একটি এডুকেশনাল হাব তৈরী করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্ল্যাটিনাম জুবিলি উদযাপনের উদ্বোধনী পর্বে বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব বলেন, মনন, শক্তি ও একাগ্রতা ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে। এছাড়া বক্তব্য রাখেন, মধ্যশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন সি শর্মা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেকেরকোট উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সন্তোষ কুমার রায় চৌধুরী। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন এসএমসি কমিটির চেয়ারম্যান সুধীরচন্দ্র দাস। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডুকলি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান পরমা বর্মণ। অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় সপ্তম স্থানাধিকারী কৃষ্ণ দেবনাথকে বিদ্যালয়ের প্রাক্তনীদের পক্ষ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.