Hare to Whatsapp
মহারাজা বীরবিক্রম ছিলেন সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ২০, : মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য ছিলেন সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির প্রতীক। তাঁকে শুধুমাত্র আজকের দিনে স্মরণ করে শ্রদ্ধাঞ্চলি দিলেই চলবে না। নতুন ত্রিপুরা গড়ার তাঁর চিন্তাভাবনাকে আমাদের এগিয়ে চলার সোপানে পরিণত করতে হবে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্পর্কে মহারাজার দৃষ্টিভঙ্গী অনুসারেই বর্তমান রাজ্য সরকার কাজ করছে। ১৯ আগস্ট রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে মহারাজা বীরবিক্রমকিশোর মাণিক্য বাহাদুর দেববর্মণের ১১৫তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক এই অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ মহারাজার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আরও বলেন, রাজ্যের সকল জনগোষ্ঠীর প্রতি মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য সমান মনোভাব পোষণ করতেন। মহারাজা রাজ্যবাসীর শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছিলেন। তিনি নিজে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও সকল ধর্মের মানুষের জন্য আরাধনাস্থল নির্মাণ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিগত সরকারের সময়ে ত্রিপুরার রাজাদের সম্পর্কে সর্বদাই নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হতো। রাজ্যের মানুষকে রাজ পরিবারের ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞাত রাখার প্রয়াস করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজাদের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে রাজ্যবাসীকে অবগত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। মহারাজা বীরবিক্রমের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে আগরতলা বিমানবন্দরকে তাঁর নামে নামাঙ্কিত করা হয়েছে। তাছাড়াও মহারাজার জন্মদিবসকে আরও গুরুত্ব সহকারে উদযাপনের লক্ষ্যে আজকের দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। কামান চৌমুহনির নিকটবর্তী চৌমুহনিতে মহারাজা বীরবিক্রমের মর্মর মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে এটিকে বীরবিক্রম চৌমুহনি হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এসব করার উদ্দেশ্যই হলো আগামী সমাজ যেন রাজ্যের উন্নয়নে মাহারাজা বীরবিক্রমকিশোর মাণিক্যের ভূমিকা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা আরও বলেন, রাজ্যের একটি অংশ থেকে সবসময়ই কুৎসা রটানোর চেষ্টা চলছে যে ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থরাশি বাজেটে রাখা হয় না। কিন্তু এবারের বাজেটেও রাজ্য সরকারের ৩৯টি বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে এডিসি এলাকার জন্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জাতি, জনজাতি সকল অংশের মানুষকে রাজ্যের সার্বিক কল্যাণে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান। অনুষ্ঠান উপলক্ষে মহারাজা বীরবিক্রমের জীবন ও দর্শন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, মহারাজার জন্মদিবসটি হলো ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাসে একটি গৌরবের দিন। মহারাজা সকল জাতি ধর্ম ও জনজাতিদের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। রাজ্যবাসী হিসেবে ত্রিপুরা রাজ্যের উন্নয়নকল্পে তাঁর অবদানকে সর্বদাই স্বীকার করতে হবে। ইউরোপ, আমেরিকা ভ্রমণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন। প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের আসল সম্পদ হলো এর ইতিহাস ও মিশ্র সংস্কৃতি। রাজ্যের রাজারা যেমন রাজ্যের লোকসংস্কৃতির কদর করতেন তেমনি শাস্ত্রীয় সংগীতেরও পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এখানকার রাজারা সর্বদাই রাজ্যবাসীর কল্যাণে উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তাই এই রাজ্যে সংকীর্ণ মানসিকতার কোনও স্থান নেই।
অনুষ্ঠানে রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, বাঙালি উদ্বাস্তুদের মহারাজা বীরবিক্রমকিশোর মাণিক্য যেভাবে এই রাজ্যে থাকার জন্য সাহায্য করেছিলেন তা ইতিহাসে বিরল। এছাড়াও বক্তব্য রাখতে গিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী বলেন, মহাজারা বীরবিক্রম ছিলেন প্রজাবৎসল ও সংস্কারবাদী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য বলেন, মহারাজা বীরবিক্রমের চিন্তাভাবনা ও দর্শনকে ভাবী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই হলো আজকের অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে একটি সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হয়।