Hare to Whatsapp
রাজ্য সরকার সামগ্রিকভাবে সকল অংশের মানুষের উন্নয়নে বহুমুখী কর্মধারা অব্যাহত রেখেছে : মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ১৬, : জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকার দায়বদ্ধতার সাথে সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৫ বছরে রাজ্যে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা সাথ, সবকা বিকাশের মন্ত্রকে পাথেয় করে রাজ্য সরকার সামগ্রিকভাবে সকল অংশের মানুষের উন্নয়নে বহুমুখী কর্মধারা অব্যাহত রেখেছে। ১৫ আগস্ট সকালে আসাম রাইফেলস ময়দানে ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে জনকল্যাণে রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে বলেন, ইতিমধ্যেই ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জনকল্যাণমুখী বাজেটে ১৩টি নতুন প্রকল্প চালুর ঘোষণা করা হয়েছে। জনজাতি, সংখ্যালঘু, তপশিলী জাতিগোষ্ঠী সহ সকল অংশের মানুষের উন্নয়নের রূপরেখার একটি সঠিক পথ নির্দেশিকা এই বাজেটে রয়েছে।
জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে মুখ্যমন্ত্রী সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। কুচকাওয়াজে সিকিউরিটি ও নন সিকিউরিটি বিভাগে ১৬টি প্ল্যাটুন অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে রাজ্য পুলিশ বাহিনীর যে সমস্ত আধিকারিক ও কর্মীগণ কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য পদক পেয়েছেন তাদের পদক পরিয়ে দেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর, ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদ এবং যুব বিষয়ক ও ক্রীড়া দপ্তরের পরিচালনায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এতে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন এবং রাজ্য প্রশাসন ও আরক্ষা প্রশাসনের পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের মূল অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্য সরকার বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে যে বাজেট পেশ করেছে তার প্রায় ২৫ শতাংশ ধার্য্য করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রে। ২০২২-২৩ সালের তুলনায় এবছরে নগর উন্নয়নের বাজেটে প্রায় ৭০ শতাংশ, জনজাতি কল্যাণে প্রায় ৪৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ পরিষেবায় প্রায় ২৮ শতাংশ, শিল্পক্ষেত্রে প্রায় ৫৪ শতাংশ এবং কৃষিক্ষেত্রে প্রায় ২৫ শতাংশ অর্থ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জনজাতিদের অর্থনৈতিক বিকাশ সহ কৃষ্টি সংস্কৃতির বিকাশের প্রতি রাজ্য সরকারের সদর্থক প্রয়াস গত ৫ বছরে প্রতিফলিত হয়েছে। আগরতলার মহিলা কলেজ, ফটিকরায়ে আম্বেদকর কলেজ এবং গন্ডতুইসা ডিগ্রী কলেজে জনজাতিদের জন্য তিনটি নতুন হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। আগরতলার কুমারী মধুতী রূপশ্রী এবং সাব্রুমের কলাছড়ায় ট্রাইবেল রেস্ট হাউস চালু করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ১৭টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের অনুমোদন দিয়েছে। আমবাসার নালিছড়াতে একটি নতুন একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে এবং তা চালু করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১২টি নতুন একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের নির্মাণ কাজ চলছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এডিসি-র জন্য ৬১৯ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা বাজেট বরাদ্দ বাড়িয়ে ৬৫০ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এডিসি-র জন্য গত বছর থেকে বাড়িয়ে ৬৭২ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা বাজেটে সংস্থান রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষির বিকাশ রাজ্য সরকারের একটি অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। রাজ্য সরকার ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যের প্রতিটি কৃষি মহকুমায় ১টি করে ‘কৃষক বন্ধু কেন্দ্র' স্থাপন করার পরিকল্পনা নেয়। এখন পর্যন্ত ৩২টি কৃষক বন্ধু কেন্দ্র চালু হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে কৃষকরা এক ছাদের তলায় কৃষি সম্পর্কিত সমস্ত ধরণের তথ্য ও প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পে ২ লক্ষ ৩৩ হাজার কৃষককে ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১৪৮ কোটি টাকা সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার কৃষকের প্রিমিয়ামের ৯৫ শতাংশ অর্থ রাজ্য সরকার বহন করেছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৬০ হাজার ২৭১ জনকে ৩৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা শিক্ষা দপ্তরের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, এবারের বাজেটে শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সরকার আগামী ৫ বছরের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৪০০টি সরকারি বিদ্যালয়কে পিএম-শ্রী ও বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পের অধীনে আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীদের মধ্যে ৪৪ হাজার ৬০০টি বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে। বাজেট অনুসারে সাইকেল টু গার্ল স্টুডেন্টস এই প্রকল্পটি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষেও চালু রয়েছে, যার জন্য ব্যয় বরাদ্দ আছে ৯ কোটি টাকা। রাজ্য সরকার স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরে পাঠরত সমস্ত ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের ফিস যেমন ভর্তি ফি, কলেজ ডেভেলপমেন্ট ফি এবং পরীক্ষার ফি মকুব করেছে। উদয়পুরে নেতাজি সুভাষ মহাবিদ্যালয়ের নতুন সায়েন্স বিল্ডিং, মহারাজা বীরবিক্রম কলেজের সায়েন্স বিল্ডিং এবং কুঞ্জবনস্থিত ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডিসের প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিল্ডিং নির্মাণের জন্য ১২৭ কোটি টাকা বাজেটে বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ থেকে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার ৪২০ জনকে টেটের মাধ্যমে শিক্ষা দপ্তরে নিয়োগ করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে 2022 ও 20২৩ সালে রাজ্য সরকার তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে 2023-28 শিক্ষাবর্ষ থেকে টেকনো ইন্ডিয়া এবং আর্যভট্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। ধম্মদীপা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে।