Share Whatsapp

কর্পোরেটরা যাতে দেশকে অবাধে লুঠ করতে পারে, তার সুযোগ করে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী: জীতেন্দ্র চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, আগষ্ট ১০, : নরেন্দ্র মোদীর সরকার গোটা দেশের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ কর্পোরেটদের কাছে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ৯ আগস্ট বিকেলে আগরতলায় প্যারাডাইস চৌমুহনীতে আয়োজিত ট্রেড ইউনিয়নসমূহ ও সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা আয়োজিত সভায় উপরোক্ত মন্তব্য করেন সি পি আই এম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। ট্রেড ইউনিয়নসমূহ ও সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার উদ্যোগে সর্বভারতীয় কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে গতকাল আগরতলায় একটি মিছিল ও সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। সারা দেশব্যাপী আয়োজিত এই কর্মসূচির প্রধান শ্লোগান ছিলো, 'কর্পোরেট ভারত ছাড়ো, কৃষি ছাড়ো'। প্যারাডাইস চৌমুহনীতে আয়োজিত সভার পূর্বে আগরতলায় একটি মিছিল হয়। সারা ভারত কৃষক সভা, ত্রিপুরা ক্ষেত মজুর ইউনিয়ন, গণমুক্তি পরিষদ, সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা, সি আই টি ইউ সহ বিভিন্ন শ্রমিক ও কৃষক সংগঠন এই মিছিলে অংশগ্রহণ করে। প্যারাডাইস চৌমুহনীতে আয়োজিত সভায় সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন সি আই টি ইউ-এর ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির সভাপতি মানিক দে, ভানুলাল সাহা ও রাসবিহারী ঘোষ। সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ৯ আগস্ট দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪২ সালের এই দিনে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে দেশের মানুষ জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ইংরেজদের এ দেশ থেকে তাড়াতে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আজকের বিজেপি-র শ্রষ্টা আর এস এস সেদিন বৃটিশের দালালী করতে গিয়ে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের পেছন থেকে ছুুুরি মেরেছিলো। বৃটিশরা যে জুলুম চালিয়েছিলো সেদিন তাকে রক্ষা করেছে আর এস এস। জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, আজ ৮১ বছর পর আর এস এস-এর তৈরি করা বিজেপি এখন দেশের ক্ষমতায়। বৃটিশদের কায়দায় কর্পোরেটদের লুণ্ঠনের সুযোগ করে দিচ্ছে তাদের নেতা নরেন্দ্র মোদি। বিজেপি দেশের মানুষকে ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করে দেশের সম্পদ অবাধে লুণ্ঠন করতে কর্পোরেটদের দালালী করছে। তিনি বলেন, লোকসভায় যখন মোদি সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবের উপর আলোচনা চলছে, তখন বৃটিশের দালালরা নির্লজ্জের মতো গণতন্ত্রের মন্দিরকে কলুষিত করে আদানী-আম্বানীদের পক্ষে কথা বলছে। মণিপুরের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে জিতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, সেখানে অত্যাচারিত মায়েদের নিয়ে বিজেপি কিছু বলছে না। অথচ যারা সেখানে দাঙ্গা করছে তাদের সাহায্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ৯ আগস্ট দিনটিকে শুধু প্রতীকী আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নানা মত নানা পথ যেভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে বৃটিশদের দেশ থেকে তাড়িয়েছে, ঠিক সেভাবেই ৪২-এর মন্ত্র নিয়ে আবারও বিজেপি ও তাদের মিত্র কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

সভায় সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ত্রিপুরা রাজ্য আহ্বায়ক পবিত্র কর বলেন, ১৯৪২ সালে আজকের দিনে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে ডাক উঠেছিলো, ইংরেজ ভারত ছাড়ো। আজ ৮১ বছর পর স্বাধীন ভারত থেকে বিজেপি-র পৃষ্ঠপোষক কর্পোরেটদের বিরুদ্ধে সারা দেশে আওয়াজ উঠেছে, লুঠেরা কর্পোরেট ভারত ছাড়ো, কৃষি ছাড়ো। তিনি বলেন, ২০১৯-২০ সালে ঝড় বৃষ্টি রোদ তীব্র গরম ও প্রবল শীত উপেক্ষা করে ৩৮৪ দিন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা কর্পোরেটদের স্বার্থে আনা তিনটি কৃষি বিলের বিরুদ্ধে একটানা আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলো। বহু চেষ্টা করেও এই আন্দোলন থেকে কৃষকদের নড়াতে পারেনি। নরেন্দ্র মোদি কৃষক আন্দোলন নিয়ে সেদিন একটিও কথা বলেননি। সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার অনমনীয় আন্দোলন ৫৬ ইঞ্চির অহমিকা ও ঔদ্ধত্যকে বাধ্য করেছিলো তিনটি কৃষি বিল প্রত্যাহার করে নিতে। পবিত্র কর জানান, আজ দেশের সবকয়টি জেলার জেলা শাসকের মাধ্যমে দাবিসনদ মাননীয়া রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরণ করা হবে। এছাড়াও আগামী ২৬, ২৭ ও ২৮ নভেম্বর দেশের সবকয়টি রাজ্যের রাজধানীতে শ্রমিক ও কৃষকরা যৌথভাবে তিনদিনব্যাপী আন্দোলন সংগঠিত করবেন। শ্রী কর বলেন, মণিপুরে মায়েরা বোনেরা যখন নির্যাতিতা হচ্ছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশ ভ্রমণে ব্যস্ত। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় শত আক্রমণের পরও আমরা রাস্তা ছাড়িনি। রাস্তায় দাঁড়িয়েই আমাদের লড়াই-আন্দোলন জারি থাকবে।

সভায় সি আই টি ইউ-এর রাজ্য সম্পাদক শংকর প্রসাদ দত্ত বলেন, বৃটিশরা ভারতকে জরাজীর্ণ করে দিয়ে সমস্ত সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যাবার প্রতিবাদে এবং জনগণের স্বার্থ বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে ১৯৪২ সালে 'ইংরেজ ভারত ছাড়ো' শ্লোগান উঠেছিলো। আজ দেশের মানুষের স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে না, শুধু কর্পোরেটদের স্বার্থই রক্ষিত হচ্ছে। দেশের অগনিত গরিব মেহনতি শ্রমজীবী অংশের মানুষের শ্রমে গড়া সম্পদ লুঠ করে নিয়ে যাচ্ছে কর্পোরেটরা। দেশের বর্তমান শাসক কর্পোরেটদের দেশের সম্পদ লুণ্ঠনের জন্য সাহায্য করছে। শ্রী দত্ত বিজেপির এই বন্ধ্যা নীতির বিরুদ্ধে বিপন্ন ভারতবর্ষকে রক্ষা করতে সকল দেশপ্রেমিক মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.