Hare to Whatsapp
বিদ্যুৎ অপচয়ে নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে হবে : মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ১০, : রাজ্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের যে প্রকল্পগুলি হাতে নেওয়া হয়েছে তা দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবার মান উন্নত করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ৯ আগস্ট সচিবালয়ের কনফারেন্স হলে বিদ্যুৎ দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে পর্যালোচনাসভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। পর্যালোচনাসভায় মুখ্যমন্ত্রী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানের জন্য উন্নত ট্রান্সফরমার বসানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ গ্রাহকদেরও বিদ্যুৎ অপচয়ের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বাড়িতে অধিক বিদ্যুৎ ব্যবহার করার আগে অবশ্যই দপ্তরকে অবগত করতে হবে। এবিষয়ে দপ্তরের আধিকারিকদেরও উদ্যোগী হতে হবে ও নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দপ্তরকে সময় বিশেষে নজরদারির উপর জোর দিতে হবে। বিলিং এজেন্সি এবং কালেকশন এজেন্সিগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে হুকলাইন ছিন্ন করতে তথা অনাদায়ী বিল আদায় করতে কড়া পদক্ষেপ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পর্যালোচনাসভায় বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, রাজ্যের ৮টি জেলায় চিহ্নিত ৮টি গ্রামকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এনআইটি, ইকফাই ইউনিভার্সিটি, বিশালগড়ের জেলখানা, দূরদর্শন কেন্দ্রকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। বিদ্যুৎমন্ত্রী জানান, আগামীতে রাজ্যের সবকটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
সভায় বিদ্যুৎ দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং জানান, ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগম রাজ্যে বিদ্যুৎ পরিষেবা প্রদানে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। তিনি সচিত্র প্রতিবেদনের মাধ্যমে রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচি এবং আগামী দিনের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনার উপর আলোকপাত করেন। তিনি জানান, রাজ্যের মোট বিদ্যুতের প্রাপ্যতা রয়েছে ৫০৫ মেগাওয়াট এবং মোট চাহিদা রয়েছে ৫০৫ মেগাওয়াট। এবছর একদিনে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের চাহিদা ৩৬২.২০ মেগাওয়াট লক্ষ্য করা গেছে। রাজ্যে গড়ে বিদ্যুতের চাহিদা দিনে প্রায় ৩৩০ মেগাওয়াট। মোট গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে ৯ লক্ষ ৭১ হাজার ২১০। প্রতিদিন এই গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে প্রায় ২ লক্ষ ২৫ হাজার গ্রাহক বেড়েছে। তিনি রাজ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার উপর আলোকপাত করেন। তিনি জানান, বর্তমানে রাজ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার তুলনায় কিছুটা বেশি রয়েছে। আগামীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য দপ্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।
পর্যালোচনাসভায় সচিব আগামী পাঁচ বছরে দপ্তরের বিভিন্ন পরিকল্পনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের সহায়তায় রুখিয়াতে ১২০ মেগাওয়াট ক্লোজ সাইকেল পাওয়ার প্রজেক্টের পরিকল্পনা রয়েছে। এরজন্য ব্যয় হবে ৮৪৫.৩৬ কোটি টাকা। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ত্রিপুরার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অনেকটা উন্নতি হবে বলে সচিব আশা ব্যক্ত করেন। এছাড়াও তিনি গোমতী জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের উন্নতিকরণ, মহারাণী মাইক্রো হাইডাল যা পিপিপি মডেলে তৈরি করা হবে, ৮৪ মেগাওয়াট বড়মুড়া সিসি পাওয়ার প্রজেক্ট যা এতদিন ওপেন ছিল তাকে ক্লোজ সাইকেলে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জিবি, আইজিএম এবং টিএমসি হাসপাতালকে সৌরবিদ্যুৎ-এর আওতায় আনার জন্য দপ্তরকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কার্যকরি ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তী সময় জেলার অন্যান্য হাসপাতালগুলিও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থার আওতায় আনতে হবে। তাছাড়াও সচিব ডম্বুরে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদার সময় সৌরশক্তি ব্যবহারের জন্য ব্যাটারি স্টোরেজ স্থাপনের কথাও উল্লেখ করেন।
পর্যালোচনাসভায় ইলেক্ট্রিক যানবাহনের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে সচিব জানান, আগামীতে ইলেক্ট্রিক যানবাহনের চার্জিং স্টেশন রাজ্যের সবকটি জেলায় তৈরির জন্য দপ্তরের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। পর্যালোচনা সভায় সচিব রাজ্যে শক্তিশালী সাব স্টেশন নির্মাণ, বর্তমান সাব-স্টেশনগুলির উন্নিতকরণ, স্মার্ট প্রিপেইড মিটার স্থাপন, আগরতলায় আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল স্থাপন, দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামজ্যোতি যোজনা, সৌভাগ্য যোজনা ইত্যাদির উপরও বিস্তারিত আলোচনা করেন। এছাড়াও তিনি জানান, আগামীতে ‘১৯১২’ গ্রাহক পরিষেবার সুযোগ যাতে সারা রাজ্যে পৌঁছানো যায় দপ্তরের সেই লক্ষ্য রয়েছে। সভায় ট্রেডার ডিজি মহানন্দ দেববর্মা ট্রেডার উল্লেখযোগ্য সাফল্যগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
পর্যালোচনা সভায় মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, শিল্প দপ্তরের সচিব অভিষেক চন্দ্ৰা, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়, ত্রিপুরা রাজ্য বিদ্যুৎ নিগমের চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস সরকার সহ দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।