Hare to Whatsapp
সমাজের অন্তিম ব্যক্তির কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে : মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, আগষ্ট ২, : সমাজের অন্তিম ব্যক্তির কাছে স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। সে লক্ষ্যে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক সহ সকলস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীদের সমস্যা সমাধানেও সরকার আন্তরিক। ১ আগস্ট আগরতলা গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজের কার্ল ল্যান্ডস্টেনার অডিটোরিয়ামে আগরতলা সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ১৯তম প্রতিষ্ঠা দিবসের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই কলেজ স্থাপিত হয়েছে আজ তাদেরকে স্মরণ করার দিন। তাদের অবদানকেও আজ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। রাজ্যের গর্ব এই মেডিক্যাল কলেজের আসন সংখ্যাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে রাজ্য সহ বহিরাজ্যের ছেলেমেয়েরাও এর সুফল পাচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রতিভার কোনও অভাব নেই। রাজ্যের বহু ছেলেমেয়ে দেশ বিদেশে স্বাস্থ্যক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুনামের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি রাজ্যের ছেলেমেয়েরা এইমসেও পড়াশুনা করার সুযোগ পাচ্ছে, যা রাজ্যের জন্য নিশ্চয়ই একটা ভালো দিক। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নের লক্ষ্যে স্পেশালিটি, সুপার স্পেশালিটি পরিষেবাও চালু করেছে। জিবি হাসপাতাল ও আইজিএম হাসপাতালে রেফারেল রোগীর চাপ কমানোর উদ্দেশ্যে জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে দ্রুত ও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে ট্রমা কেয়ার সেন্টার স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের মৌলিক স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে শক্তিশালী করার জন্য ১০০টি নতুন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এরজন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৩০ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে উন্নত করার জন্য রাজ্য সরকার নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সে লক্ষ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের জন্য ১,৭৫৬ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। রাজ্যের উত্তর ত্রিপুরা, ধলাই এবং গোমতী জেলার ব্লু পুনর্বাসন এলাকায় ১১টি হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্যের প্রতিটি জেলায় ১টি করে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট নেশামুক্তি কেন্দ্র স্থাপন করারও উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে মেরা হাসপাতাল পোর্টাল চালু করা হয়েছে। এই পোর্টালটি ই-হাসপাতাল প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, যা ক্যান্সার পীড়িত রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানে সহায়ক হবে। এছাড়াও আগরতলা গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও জিবিপি হাসপাতাল সহ সমস্ত মহকুমা হাসপাতালগুলিতে ই-রেডিওলজি এবং টেলি-রেডিওলজি পরিষেবা চালু করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টায় চালু দেশের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনায় রাজ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ আয়ুষ্মান কার্ড সুবিধাভোগীদের প্রদান করা হয়েছে। ২ লক্ষের উপর সুবিধাভোগী এই প্রকল্পের সুযোগ লাভ করেছেন। আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনায় রাজ্যের যে সমস্ত পরিবার আওতাভুক্ত হতে পারেনি তাদের জন্য রাজ্য সরকার মুখ্যমন্ত্রী জনআরোগ্য যোজনা নামে একটি নতুন প্রকল্প চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরজন্য চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে ৫৯ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। তাতে রাজ্যের অবশিষ্ট ৪.৭৫ লক্ষ পরিবার উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানে এজিএমসি ও জিবিপি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারিনটেনডেন্ট ডা. শংকর চক্রবর্তী বলেন, ২০০৫ সালে ১০০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে এই কলেজের পথচলা শুরু হয়। বর্তমানে কলেজের আসন ও কোর্সের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অনেকগুলি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবাও চালু হয়েছে। অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর (ডা.) ভবতোষ বিশ্বাস বলেন, সীমিত সম্পদের মধ্যেও ত্রিপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যথেষ্ট এগিয়ে যাচ্ছে। ত্রিপুরার স্বাস্থ্য পরিষেবাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে দুটি মেডিক্যাল কলেজেই আসন সংখ্যা আরও বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে। সেরকম পরিকাঠামো গড়ে তোলার উপরও সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গঙ্গা প্রসাদ প্রসাইন, মেডিক্যাল এডুকেশনের অধিকর্তা ডা. হরপ্রসাদ শর্মা, ডা. সঞ্জীব দেববর্মা প্রমুখ। অনুষ্ঠান মঞ্চে এমবিবিএস প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষ এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছে এমন ছাত্রছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হয়। পুরস্কার স্বরূপ তাদের হাতে ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও ট্রফি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ।