Hare to Whatsapp
বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্যে এনডিআরএফ'র ব্যাটেলিয়ন রাখার অনুরোধ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, জুন ১৪, : ভূমিকম্প প্রবণ এলাকার ৫ নম্বর জোনে ত্রিপুরা অবস্থিত হওয়ায় রাজ্যে ভূমিকম্প ও অন্যান্য বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্য সরকার এই বিপর্যয় মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বন্যা, খরা ও অন্যান্য দুর্যোগ সম্পর্কিত পর্যালোচনা সভাও করা হচ্ছে। ২০১৮ এবং ২০১৯-এর ভয়ানক বন্যার পর বড় ধরনের বিপর্যয় না ঘটলেও রাজ্যে সরকারি কর্মচারি ও আধিকারিকদের বিপর্যয় লাঘব করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৩ জুন নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত এক সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপর্যয় মোকাবিলায় রাজ্যে এনডিআরএফ'র একটি ব্যাটেলিয়ন স্থায়ীভাবে রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই সভায় সভাপতিত্ব করেন। তাছাড়াও দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীগণ এই সভায় উপস্থিত ছিলেন।
নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে অনুষ্ঠিত এই সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে গত এক বছরে ১২ কোটির বেশি কমন প্রোটোকল সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে রাজ্যবাসীর কাছে। সামাজিক মাধ্যমের দ্বারাও সতর্কবার্তা জারি করা হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে স্টেট ডিজাস্টার মিটিগ্যাশন ফান্ড (এসডিএমএফ)-এর দ্রুত ব্যবহার করা দরকার। মুখ্যমন্ত্রী বিপর্যয় লাঘব করার বিষয়ে রাজ্য সরকারের আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি জানান, রাজ্যে মোট ৫৫২ জনকে নিয়ে স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স-এর (এসডিআরএফ) চারটি কোম্পানি তৈরি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৪০৪ জনকে মৌলিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বাকিদের প্রশিক্ষণের জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যারা মৌলিক পর্যায়ের প্রশিক্ষণ লাভ করেছেন সেই সমস্ত এসডিআরএফ বাহিনীর সদস্যদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের সহায়তা প্রয়োজন। রাজ্যের বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে আরও শক্তিশালী করতে সরকার আরও ২০টি স্থায়ী পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া নির্দেশিকা অনুযায়ী সেন্ডাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন প্রকল্পও রূপায়িত হচ্ছে রাজ্যে।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মডেল ফায়ার বিল অনুসারে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ত্রিপুরা ফায়ার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস অ্যাক্ট ২০২২ প্রণয়ন করেছে। ২০২১ সালের ১১ জুন ফায়ার অ্যাডভাইজরি কাউন্সিলের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ত্রিপুরার জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি টাকা৷ কেন্দ্ৰীয় সরকারের বিপর্যয় সংক্রান্ত সমস্ত প্রকল্প রাজ্যে ভালোভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং ন্যাশনাল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের পোর্টালও আপডেট করা হচ্ছে। বর্তমানে রাজ্যে ১ হাজার জন প্রশিক্ষিত আপদা মিত্র রয়েছেন। রাজ্যের প্রতি ৫০ জন নাগরিকের জন্য কমপক্ষে ১ জন আপদা মিত্রের সংস্থান রাখতে এই কর্মসূচি জারি রাখা হবে।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও রাজ্য বোর্ডের অন্তর্গত বিদ্যালয়গুলিতে বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা শেখানো হচ্ছে। আগে সিভিল ডিফেন্সের কর্মপরিধি অনুযায়ী ৫০ জন ভলান্টিয়ার আগরতলাতে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু তার গুরুত্ব উপলব্ধি করে ২০২১ এর জুলাই মাস থেকে সিভিল ডিফেন্সের কর্মপরিধি সমস্ত জেলায় সম্প্রসারিত করা হয়েছে। ভলান্টিয়ারদের মিশন মুডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এবং দুই বছরের মধ্যে ৩ হাজার ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপর্যয় মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনা পরিকাঠামো উন্নয়ন ও উন্নত সরঞ্জাম সংগ্রহের জন্য এককালীন অনুদান দিয়ে একটি বিশেষ প্রকল্প রূপায়ণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।