Hare to Whatsapp
রাজ্যে শিল্পের বিকাশে অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মে ১৮, : রাজ্যে শিল্পের বিকাশের অফুরন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। তাই শিল্পের বিকাশে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। শিল্প উদ্যোগীরা যাতে রাজ্যে বিনিয়োগে আরও বেশী আকৃষ্ট হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে নতুন পরিকল্পনা নিতে হবে। ১৭ মে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের এক পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে এমন একটি শিল্পনীতি তৈরী করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সুপরিকল্পিত শিল্পনীতি তৈরী হলে দেশ বিদেশের শিল্প উদ্যোগীরা উৎসাহিত হবেন। সচিবালয়ের ২নং সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এই পর্যালোচনা সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা, ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান নবাদল বণিক, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা, ত্রিপুরা হস্ততাঁত ও হস্তকার উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বলাই গোস্বামী, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের প্রধান সচিব কে এস শেঠি, মুখ্যমন্ত্রীর সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচিগুলির পর্যালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী ডা. সাহা রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে চালু ‘ স্বাগত’ পোর্টালকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেন, রাজ্যে গড়ে উঠা পরিকাঠামোগত শিল্প সহায়ক সুযোগ সুবিধাগুলি বিনিয়োগকারীদের কাছে পৌছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে আরও উদ্যোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন উত্তর পূর্বাঞ্চল গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিটকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজ্যে অনুষ্ঠেয় রোডশো গুলিতে রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলিকে বিশেষভাবে তুলে ধরতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের উৎপাদিত চা সহ কারুশিল্পীদের তৈরী হস্ততাঁত হস্তকারু ও রেশম শিল্পের পন্য সামগ্রীগুলি রাজ্যেই যাতে বিক্রি করা যায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দপ্তরের সাথে সমন্বয় রেখে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করার জন্য তিনি পরামর্শ দেন। সভায় মুখ্যমন্ত্রী জে কে সিনহা বলেন, শিল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়লে রাজ্যের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে। তাই ‘স্বাগত' পোর্টালকে দক্ষতার সাথে পরিচালনা করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের জন্য উৎসাহিত করতে তিনি শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরকে আরও বেশী উদ্যোগী হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন।
সভায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি দপ্তরের সর্বশেষ সভায় গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সমূহের প্রেক্ষিতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশানের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী গতিশক্তি কর্মসূচিতে রাজ্যে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি প্রকল্প রূপায়িত হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে আরও ২টি প্রকল্প রূপায়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পর্যালোচনা সভায় অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি আরও জানান, রাজ্যে আগরবাতি শিল্প ক্ষেত্রের উন্নতিকল্পে মিনি মিশন গ্রহণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং বর্তমানে তা অর্থ দপ্তরের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। দপ্তরের অধিকর্তা জানান, বিলোনীয়া আইটিআইতে ড্রোন প্রযুক্তি বিষয়ের উপর কোর্স চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া দপ্তর ২০২২ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ৪টি সম্মেলন আয়োজন করেছে। আসন্ন উত্তর পূর্বাঞ্চল গ্লোবাল ইনভেস্টরস সামিটকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজ্যে রোড শো আয়োজনের কথা ও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এডিবি'র অর্থানুকুল্যে রাজ্যে রূপায়িত বিভিন্ন প্রকল্পগুলির সফলভাবে বাস্তবায়ণের জন্য ৪ জন পরামর্শদাতা নিযুক্ত করা হয়েছে। রাজ্যে ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম পরিচালিত ১৯টি শিল্পাঞ্চল রয়েছে। এই শিল্পাঞ্চলগুলিতে ১৬০টি শিল্প কারখানা চালু রয়েছে। আরও ৮২টি শিল্প কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এই শিল্প কারখানাগুলিতে এখন পর্যন্ত ৫২৪৭ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। এই শিল্প সংস্থাগুলিতে এখন পর্যন্ত ৯০১.৪৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে।
পর্যালোচনা সভায় অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি জানান, পিএম গতিশক্তি প্রকল্প রূপায়ণে ত্রিপুরাকে ফার্স্ট মুভার রাজ্য হিসেবে ক্যাটাগরাইজড করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজ্যে স্বাবলম্বন প্রকল্পে ১৩২৪ জন এবং প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন কর্মসূচিতে (পিএমইজিপি) ৬৯৮ জনকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। আগরতলায় ১টি ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট সহ রাজ্যে মোট ৮টি ল্যান্ড কাস্টম স্টেশন রয়েছে। শ্রীমন্তপুর ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনকে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টে (আইসিপি) উন্নীত করা হয়েছে। রাজ্যে শ্রীনগর এবং কমলাসাগরে বর্ডার হাট রয়েছে। তাছাড়া কমলপুর এবং রাগনায় বর্ডার হাট স্থাপনের অনুমোদন পাওয়া গেছে। এছাড়াও আরও ৮টি জায়গায় বর্ডার হাট স্থাপনের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। অধিকর্তা বিশ্বশ্রী বি জানান, কুমারঘাট শিল্পাঞ্চলকে আগরবাতি সেক্টরের হাব হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। ত্রিপুরা ব্যাম্বু মিশনে ১১৫০ জন আর্টিজানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যে ১৯টি সরকারি এবং ২টি বেসরকারি আইটিআই রয়েছে। এই আইটিআইগুলিতে বিভিন্ন ট্রেডের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ত্রিপুরা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন ইনসেন্টিভ স্কিম ২০২২ রাজ্যে চালু রয়েছে।
সভায় স্কিল ডেভেলপমেন্ট অধিদপ্তরের অধিকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে জানান, প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনায় স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩৭০৯ জন যুবক যুবতী ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থায় নিযুক্তি পেয়েছেন। ১০১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিককে স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জল জীবন মিশনের সফল রূপায়ণের জন্য ৯৩৮ জন কলমিস্ত্রি এবং ১০৫৮ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেকট্রিসিয়ানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়াও স্কিল ডেভেলপমেন্ট দপ্তরের বিভিন্ন সাফল্য ও নতুন উদ্যোগ সমূহ নিয়েও আলোচনা করেন অধিকর্তা। সভায় হস্ততাঁত ও হস্তকারু ও রেশম শিল্প অধিদপ্তরের অধিকর্তা তরুণ দেববর্মা বলেন, রাজ্যে হস্ততাঁত ক্লাস্টার রয়েছে ৬৫টি। তাছাড়া হস্তকারু এবং রেশম শিল্প ক্লাস্টার রয়েছে যথাক্রমে ১৯ এবং ২১টি। তিনি এই শিল্পের সাথে জড়িত আর্টিজেনদের জন্য গৃহিত রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি এবং কর্মপরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।