Hare to Whatsapp
প্রাণীপালনের মাধ্যমে রাজ্যে দুধ, ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণে দপ্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে : প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সুধাংশু দাস
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মে ১৭, : মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তর থেকে গত অর্থ বছরে রাজ্যে ৩৫ হাজার ৪৪টি পরিবারকে প্রাণীপালনে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এই প্রকল্পে বর্তমান অর্থবছরে ৫১,০৬০টি পরিবারকে প্রাণীপালনে সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ১৬ মে সচিবালয়ের ৩ নং সভাকক্ষে এক সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী সুধাংশু দাস এ সংবাদ জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের বিভিন্ন কর্মসূচির সাফল্যের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি জানান, রাজ্যের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ প্রাণীপালনের সাথে যুক্ত। তাদের প্রাণী প্রতিপালনের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। পাশাপাশি প্রাণী প্রতিপালনের মাধ্যমে দুধ, ডিম, মাংসের চাহিদা পূরণেও দপ্তর নানা কর্মসূচি রূপায়ন করছে। প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তর পশুপাখীর চিকিৎসা, পশুর খাদ্য উৎপাদন এবং রাজ্যের দুধ, ডিম, মাংসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনা রাজ্যে ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে শুরু হয়েছে এবং তা চলতি অর্থবছর পর্যন্ত রূপায়িত হবে। মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী জনগণের আর্থিক অবস্থার মানোন্নয়নে দপ্তর ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ৩০,৫২৬টি পরিবারকে প্রাণীপালনে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে শুকর পালনে ৫৪৮৭টি পরিবারকে, ছাগল পালনে ২৭৪৩টি, হাঁস পালনে ৩৯৪৫টি পরিবারকে ও মোরগ পালনে ১৬,৩০২ টি পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এজন্য ১০.৫৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছাড়াও এই যোজনায় গত অর্থ বছরে শূকর পালনে ৫,৬৪৪টি পরিবারকে, ছাগল পালনে ২,৮৮২টি পরিবারকে, হাঁস পালনে ৬,৭১০টি পরিবারকে এবং ১৯,৮০৮টি পরিবারকে মোরগ পালনে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনায় চলতি অর্থ বছরে শূকর পালনের জন্য প্রতি পরিবারকে ১টি করে শূকর দেওয়া হবে এবং ছাগল পালনের জন্য প্রতি পরিবারকে ১টি করে ছাগল দেওয়া হবে। এজন্য প্রতি পরিবার পিছু ৭৫০০ টাকা করে ব্যয় হবে। তাছাড়াও হাঁস পালনে প্রতি পরিবারকে ১০টি করে হাঁস এবং মোরগ পালনের জন্য প্রতি পরিবারকে ১০টি করে মোরগ দেওয়া হবে। এরজন্য ১৩০০ টাকা করে ব্যয় করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাণীসম্পদ বিকাশমন্ত্রী জানান, রাজ্যকে দুধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে মুখ্যমন্ত্ৰী উন্নত গোধন প্রকল্প চালু করা হয়। এই প্রকল্পে হিমায়িত লিঙ্গ নির্ধারিত বীর্য দ্বারা কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে স্ত্রী বাছুরের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই বীর্যের ব্যবহারে প্রায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত স্ত্রী বাছুর ও ১০ শতাংশ পুরুষ বাছুরের জন্ম হচ্ছে। এই প্রকল্পে প্রতি ডোজ হিমায়িত লিঙ্গ নির্ধারিত বীর্যের জন্য সরকারী ভর্তুকীর পরিমাণ হচ্ছে ৫০৪ টাকা। ভর্তুকী বাবদ সরকার এই প্রকল্পে মোট ১৫ কোটি ৭২ লক্ষ ৪৮ হাজার টাকা ব্যয় করবে। প্রকল্প রূপায়নের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৩, ১২,০০০ ডোজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্ৰা নেওয়া হয়েছে, যা কৃত্রিম প্রজননের জন্য ব্যবহৃত হবে।এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পে রাজ্যে ১,৯৮,৪২৪টি গাভীকে কৃত্রিম প্রজননের জন্য ১,৮১,৩৯৪টি ডোজ হিমায়িত লিঙ্গ নির্ধারিত বীর্য ব্যবহৃত হয়েছে। তাতে ৩২,০৫০ টি বাছুর জন্ম নিয়েছে, যার ৯০ শতাংশই স্ত্রী বাছুর।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রাণীসম্পদ বিকাশমন্ত্রী জানান, নর্থ-ইস্টার্ন কাউন্সিল প্রকল্পে ধলাই জেলার নালিছড়াস্থিত মিশ্র শূকর প্রজনন খামারে আইসিএআর-এনআরসিপি-র ডিজাইন করা ডিপ ফ্রিজার এবং বিক্রয় কেন্দ্র সহ ছোট একটি শূকরের কসাইখানা স্থাপন করা হয়েছে। এরজন্য ১৪ লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ধলাই জেলার সালেমা ব্লকের অধীনে ১০০ জন নির্বাচিত সুবিধাপ্রাপকদের মধ্যে উন্নতমানের শূকর ছানা এবং শূকরের খাবার সরবরাহ করার কাজ চলছে। এছাড়াও এই প্রকল্পে প্রত্যেক সুবিধাভোগীকে একদিনের প্রশিক্ষণ ও ৩টি করে শূকর ছানা (২টি স্ত্রী এবং ১টি পুরুষ) এবং ৩০৬ কে. জি. শূকরের খাদ্য ও ঔষধপত্রাদি দেওয়া হবে। তাতে প্রত্যেক সুবিধাভোগীদের জন্য ৩৩ হাজার টাকা করে ব্যয় করা হবে।
প্রাণীসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী আরও জানান, পশুপাখিদের চিকিৎসা পরিষেবা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্যের ভেটেরিনারি কলেজকে আরও উন্নত ও আধুনিকীকরণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। রাজ্যে উৎপাদিত দুধ বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে রাজ্যের প্রতিটি জেলায় দুধ বিক্রয় কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও নিয়েছে দপ্তর। সাংবাদিক সম্মেলনে এছাড়াও প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের সচিব বি এস মিশ্র ও অতিরিক্ত অধিকর্তা ডা. বি কে দাস উপস্থিত ছিলেন।