Share Whatsapp

মানুষের কল্যাণে সরকারের নিরন্তন প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, মে ১৭, : বর্তমান রাজ্য সরকার জনমুখী সরকার। মানুষের কল্যাণে সরকারের নিরন্তর প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। রাজ্য সরকার সমস্যাকে জিইয়ে রাখার সরকার নয়। এই সরকার সমস্যা নিরসনের সরকার। ১৬ মে আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে গণবন্টন ব্যবস্থায় গুঁড়ো মশলা সুলভ মূল্যে সরবরাহ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। এখন থেকে ভর্তুকীতে ন্যায্যমূল্যের দোকানের মাধ্যমে ভোক্তাদের প্যাকেটজাত চার ধরনের গুঁড়ো মশলা সরবরাহ করা হবে। খাদ্য জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তর আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে জনস্বার্থে ধারাবাহিকভাবে কাজ করছে। সরকার যেকোন সমস্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তার সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করছে। রাজ্যের রেশনশপগুলিতে গুঁড়ো মশলা সরবরাহের জন্য ই-টেন্ডারের মাধ্যমে স্থানীয় যে উদ্যোগপতি এর সুযোগ পেয়েছেন তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভোকাল ফর লোকাল ভাবনারই প্রতিফলন। তিনি বলেন, রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থারও শিল্প পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ও সরকারের সঠিক নীতির ফলে রাজ্য এবং বহির্রাজ্যের শিল্প উদ্যোগীরা রাজ্যে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন। সাব্রুমে মৈত্রী সেতু দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হলে ত্রিপুরার অর্থনৈতিক চেহারা পাল্টে যাবে। আগামীদিনে ত্রিপুরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বার হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সড়ক, বিমানপথ, ইন্টারনেটসহ সবদিকেই রাজ্যের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ‘এক ত্রিপুরা - শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা' গড়ার লক্ষ্যে ত্রিপুরা এগিয়ে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সমস্ত অংশ বিশেষ করে গরীব অংশের মানুষকে ন্যায্য মূল্যের দোকানের মাধ্যেম নিত্যপ্রয়োজনীয় রেশন সামগ্রী পৌছে দিতে রেশনিং ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কোভিড অতিমারি সময়ে রেশনশপের মাধ্যম সাধারণ ভোক্তাদের কাছে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে রেশনশপ ডিলাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, রাজ্যে মোট রেশনশপ রয়েছে ২০৫০টি। এরমধ্যে মহিলা পরিচালিত রেশনশপের সংখ্যা ২৯০টি। তিনি বলেন, রাজ্যের ৫৯টি স্থানে ১৩৭টি খাদ্য গুদাম রয়েছে। এই গুদামগুলির ধারণ ক্ষমতা ৭৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন। রাজ্যে এফ সি আই-এর ডিপো রয়েছে ৭টি স্থানে। বর্তমানে গণবন্টন ব্যবস্থায় চাল, গম, আটা, আয়োডিনযুক্ত লবণ, মসুর ডাল, চিনি এবং কেরোসিন তেল দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সাল থেকে রাজ্যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান কেনা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ১.৭১ লক্ষ মেট্রিকটন ধান কেনা হয়েছে এবং এর সহায়ক মূল্য ৩২৭ কোটি টাকা। ভারত সরকার এক দেশ এক রেশনকার্ড কর্মসূচি চালু করেছে যার মাধ্যমে দেশের যেকোন ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে ভোক্তারা প্রাপ্য রেশন সামগ্রী সংগ্রহ করতে পারেন।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ৭ হাজার মেট্রিকটন ক্ষমতা সম্পন্ন ১১টি খাদ্য গুদাম স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়াও গত ৫ বছরে রাজ্যে ২৪৩টি নতুন ন্যায্যমূল্যের দোকান খোলা হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ জনগণের সম্পূর্ণ পুষ্টি নিশ্চিত করতে মিড-ডে মিল এবং আই সি ডি এস প্রকল্পের অধীনে ফর্টিফাইড চাল বিতরণ শুরু করা হয়। প্রথম ধাপে গত বছর এপ্রিল মাস থেকে ধলাই জেলায় এই প্রকল্প চালু হয়। এবছর ১ এপ্রিল থেকে রাজব্যাপী এই প্রকল্পে ফর্টিফাইড চাল বিতরণ শুরু করা হয়েছে। তাছাড়া ব্লু রিয়াং শরণার্থী পরিবারকে অন্ত্যোদয় রেশনকার্ড দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১.২ লক্ষ মেট্রিকটন ক্ষমতা সম্পন্ন আই ও সি এল'র একটি নতুন এল পি জি বটলিং প্ল্যান্ট জিরানীয়া মহকুমার বোধজংনগরে চালু করা

হয়েছে।

অনুষ্ঠানে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, আজ রাজ্যের গণবন্টন ব্যবস্থায় আরও একটি নতুন পালক যুক্ত হলো। গণবন্টন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় এবং শক্তিশালী করা সরকারের প্রধান লক্ষ্য। গণবন্টন ব্যবস্থা হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের দৌড়গোড়ায় খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানো যায়। আর রেশনশপ ডিলাররাই হচ্ছে এর চালিকা শক্তি। এক্ষেত্রে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রেশনশপের মাধ্যমে গরীব সাধারণ মানুষের কাছে সুলভ মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌছে দিতে সরকার বহুমুখী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার পুরনো রেশন কার্ডের পরিবর্তে স্মার্ট রেশনকার্ড দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি রেশনশপ ডিলার ও তার পরিবারের সদস্য/সদস্যাদের স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনার জন্যও আলোচনা চলছে। সরকার রেশন ডিলারদের যেকোন সমস্যা সমাধানে সবসময় আন্তরিক।

অনুষ্ঠানে খাদ্য জনসংভরণ ও ক্রেতা স্বার্থবিষয়ক দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভাল হেমেন্দ্র কুমার বলেন, রাজ্যের গণবন্টন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে দপ্তর বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য ত্রিপুরা ১৪টি বিশেষ ক্যাটাগরি রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম এবং সারাদেশে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে নির্বাচিত রাজ্যের মেসার্স অন্নদা স্পাইসেস ইন্ডাস্ট্রি রেশনশপের মাধ্যমে ৪ ধরণের গুঁড়ো মশলা সরবরাহ করবে। সরবরাহকৃত মশলাগুলো হল হলুদ, জিরা, ধনিয়া এবং লঙ্কার গুঁড়ো। এক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম হলুদের মূল্য ১৬ টাকা, জিরার মূল্য ২২ টাকা, ৫০ গ্রাম ধনিয়া ১৩ টাকা এবং ৫০ গ্রাম লঙ্কার গুঁড়োর মূল্য হবে ১৭ টাকা। খোলা বাজারের তুলনায় এই মসলাগুলির মূল্য অনেক কম রয়েছে। এর ফলে ভোক্তারা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি রেশনশপ ডিলারাও লাভবান হবেন বলে দপ্তরের বিশেষ সচিব অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে প্রতিকী রূপে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত সাধারণ ভোক্তাগণ এবং রেশনশপ ডিলারদের হাতে গুঁড়ো মশলার প্যাকেট তুলে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রেশনশপ ডিলাররা তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথাও এদিনের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্য রাখেন খাদ্য জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের অধিকর্তা নির্মল অধিকারী। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মেসার্স অন্নদা স্পাইসেস ইন্ডাস্ট্রিস - এর কর্ণধার রতন দেবনাথ।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.