Hare to Whatsapp
রাজ্যের ৭৬৫টি রেশনশপকে মডেল রেশনশপে উন্নীত করা হবে : খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক মন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, মার্চ ৩০, : সারা রাজ্যের ২ হাজার ৪৮টি রেশনশপের মধ্যে ৭৬৫টি রেশনশপকে মডেল রেশনশপে উন্নীত করা হবে। এই কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য রাজ্যের ৮টি জেলা থেকে ৭৫টি করে রেশনশপকে চিহ্নিত করা হবে। তাছাড়া সমবায় পরিচালিত ১৬৫টি রেশনশপকে যুক্ত করা হবে মডেল রেশনশপের জন্য। ২৯ মার্চ সচিবালয়ের প্রেস কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী এ কথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, চিহ্নিত মডেল রেশনশপগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে দপ্তর থেকে এককালীন ১০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গণবন্টন ব্যবস্থায় এই রেশনশপগুলি আরও শক্তিশালী হবে বলে খাদ্যমন্ত্রী জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী আরও জানান, বর্তমানে সারা রাজ্যে ৯ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪৫৫ টি রেশন কার্ড রয়েছে। খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এই কার্ডগুলিকে রেশন স্মার্ট কার্ডে রূপান্তরিত করা হবে। তিনি জানান, এই ধরণের স্মার্ট কার্ড তুলনামূলকভাবে অনেক মজবুত, টেকশই হবে ও নষ্টও হবে দেরিতে এবং বহন করাও সহজ হবে। তিনি জানান, সারা রাজ্যের ২ হাজার ৪৮টি রেশনশপের ডিলার রয়েছে। এই প্রত্যেকটি রেশনশপের ডিলার এবং তাদের পরিবারকে ভবিষ্যতে বীমার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এতে রাজ্যের গণবন্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী এবং সুদৃঢ় হবে বলে মন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, দপ্তরের উদ্যোগে আগামীতে ‘রেশন মিত্র’ চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। গরিব, রোগগ্রস্থ, অসুস্থ সবাই যাতে রাজ্যের রেশনিং ব্যবস্থার সুযোগ নিতে পারেন এবং রেশন সামগ্রী সময়ে সময়ে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যই এই উদ্যোগ।
সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী জানান, খুব শীঘ্রই সারা রাজ্যে রেশনশপগুলির মাধ্যমে সরিষার তেল প্রদান করা হবে। এই প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকারের সংকল্প পত্র অনুযায়ী খুব শিঘ্রই রেশনশপগুলির মাধ্যমে রাজ্যবাসী ভূর্তুকির মাধ্যমে সরিষার তেল পাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই বিষয়ে দপ্তর থেকে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে রেশনশপগুলির মাধ্যমে চাল, চিনি, ডাল, আটা ইত্যাদি সামগ্রী দেওয়ার পাশাপাশি মিলেটও যাতে প্রদান করা যায় সেই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী দেশের গরিব অংশের মানুষ যাতে অধিক ভিটামিন তথা মিনারেল যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করতে পারে সেই কারনেই এই মিলেট প্রদান করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী জানান, আগামীতে যাতে জেলা ভিত্তিক খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তরের পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায় সেই বিষয়ে দপ্তর উদ্যোগ গ্রহণ করবে। খাদ্য মন্ত্রী আরও জানান, সুষম আহার জনগণের মধ্যে প্রদান করার উদ্দেশ্যে বিশেষ পুষ্টিগুণযুক্ত ফর্টিফায়েড চাল রেশনশপগুলির মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রথম পর্যায়ে এপ্রিল, ২০২২ থেকে এসপিরেশনাল জেলা হিসাবে রাজ্যের ধলাই জেলাতে ফর্টিফায়েড চাল বিতরণ করা হচ্ছে। আগামী এপ্রিল মাস থেকে রাজ্যের বাকি ৭ জেলাতেও এই চালের বিতরণ করা শুরু হবে। তিনি জানান, খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তর থাকার পাশাপাশি আগামীতে করপোরেশন গঠন করাও সরকারের চিন্তাভাবনা রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রী বর্তমানে রাজ্যে দপ্তরের খাদ্য সামগ্রি মজুত সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান বর্তমানে ফর্টিফায়েড চাল রাজ্যে মজুত রয়েছে ৬৩ হাজার ১৯৮ মেট্রিকটন।। গম রয়েছে ৫ হাজার ৩৮৪ মেট্রিকটন। চিনি রয়েছে ৮৫৭ মেট্রিকটন। মুসুর ডাল রয়েছে ৬৭৬ মেট্রিকটন। লবন রয়েছে ১ হাজার ৭ মেট্রিকটন। পেট্রোল রয়েছে ১ হাজার ৫৬৪ কিলোলিটার। ডিজেল রয়েছে ১ হাজার ৯৩৭ কিলোলিটার, কেরোসিন রয়েছে ৩৩১ কিলোলিটার এবং এল পি জি রয়েছে ৩৪ হাজার ৭৬২ টি।
সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী আরও জানান, রাজ্যে মোট রেশন কার্ড রয়েছে ৯ লক্ষ ৫৯ হাজার ৪৫৫ টি। এর মধ্যে ১ লক্ষ ৮ হাজার ৮৪০ টি হল অন্ত্যোদয় কার্ড। প্রায়োরিটি গ্রুপ কার্ড রয়েছে ৪ লক্ষ ৯২ হাজার ২৯২টি। রিয়াং গ্রুপদের মধ্যে অন্ত্যোদয় কার্ড দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৮৮২টি। এপিএল কার্ড রয়েছে ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৪৪১টি। বর্তমানে সারা রাজ্যের খাদ্য সামগ্রী সঠিক পরিমানে মজুত রয়েছে। কোথাও কোনও কালোবাজারি তথা কৃত্তিম মজুত বরদাস্ত করা হবে না। এরকম পরিস্থিতি নজরে এলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১৫৩টি রেশনশপ পরিদর্শন করা হয়েছে। মার্চ মাসের ২৮ তারিখ একদিনে ২৫৯টি রেশনশপ দপ্তরের উদ্যোগে আধিকারিকগণ পরিদর্শন করেছেন। খাদ্যমন্ত্রী জানান, মানুষ যাতে কোন প্রকার হয়রানির শিকার না হন সেই উদ্দেশ্যে দপ্তর সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের সচিব রাভাল হেমেন্দ্র কুমার, অধিকর্তা নির্মল অধিকারী এবং সহ অধিকর্তা অনিমেষ দেববর্মা।