সরকার মানুষের স্বার্থে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ করছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, এপ্রিল ১২, : সবকা সাথ, সবকা বিকাশের নীতিতে রাজ্যের সর্বত্র উন্নয়নমূলক কাজ রূপায়িত হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য হলো এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলা। ১১ এপ্রিল কল্যাণপুর দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নবনির্মিত দ্বিতল ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন। অনুষ্ঠানে দ্বিতল ভবনটির উদ্বোধন করা ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী পতাকা নেড়ে খোয়াই জেলা হাসপাতাল ও শান্তিরবাজার জেলা হাসপাতালের রক্ত সরবরাহকারী ভ্রাম্যমান গাড়ির উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে তিনি ৫৫ লক্ষ ৪১ হাজার ৬০০ টাকা ব্যয়ে নির্মিত কল্যাণপুর ব্লক আধিকারিকের আবাস গৃহের (কোয়ার্টার), ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বীরচন্দ্রপুর দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নতুন পাকা বাড়ির ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার মানুষের স্বার্থে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু একটা শ্রেণি নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে চলায় রাজ্যের উন্নয়ন তাদের নজরে আসে না। সকল স্তরের জনপ্রতিনিধি এবং সবার সহযোগিতায় সারা বছর ধরেই উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে রাজ্য সরকার শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ গুণগত শিক্ষার ব্যাপক প্রসারের জন্য কাজ করছে। রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষকদের যে ঘাটতি রয়েছে তা পূরণ করার চেষ্টা হচ্ছে। বাজেটে শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। চলতি বর্ষে প্রতিটি মহকুমায় বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের উপর কোচিং সেন্টার চালু করা হবে। এগুলিতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা কোচিং নিতে পারবে। আমবাসা, কাকড়াবন ও করবুকে ৩টি ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করা হবে। জনজাতি শিক্ষার্থীদের জন্য সুপার ১০০ প্রোগ্রাম চালু করা হবে। হাপানিয়াতে একটি কম্পিউটারভিত্তিক অনলাইন পরীক্ষা কেন্দ্র চালু করা হবে। ৭টি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট জনজাতি হোস্টেল গড়ে তোলা হবে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা নামে একটি যোজনা চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে রাজ্যে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অন্ত্যোদয়ভুক্ত পরিবারে প্রতিটি কন্যা সন্তানের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে বিনিয়োগ করা হবে। ঐ সন্তানের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর তারা সেই টাকা নগদে তুলতে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে জল জীবন মিশনের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ মানুষের কাছে পানীয়জল পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তেলিয়ামুড়া থেকে খোয়াই পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার জাতীয় সড়ক এবং মুঙ্গিয়াকামী থেকে চম্পকনগর পর্যন্ত ৪ লেনের জাতীয় সড়কের প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। যা এক সময় ভাবা যেতো না। খোয়াইয়ের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের সর্বত্র জাতি জনজাতি উভয় অংশের মানুষ সম্প্রীতি বজায় রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকাতেই বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি বজায় রাখার জন্য রাজ্য সরকার নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় রাজ্যে ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। শহরাঞ্চলে গড়ে তোলা হয়েছে ৭০ হাজার ঘর।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাধারঘাট স্টেডিয়ামে ফুটবল, হকি এবং অ্যাথলেটিক্সের সিন্থেটিক ট্র্যাক নির্মাণ করা হয়েছে এবং সম্প্রতি এগুলির উদ্বোধন করা হয়েছে। তেলিয়ামুড়া জেলা পরিবহণ কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। খোয়াই পুরান বাজারে পার্কিং কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হয়েছে। খোয়াই সরকারি দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ে সিন্থেটিক ফুটবল মাঠের উদ্বোধন হয়েছে। এছাড়াও খোয়াই সরকারি ইংরেজি মাধ্যম দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের, সিঙ্গিছড়া শরৎচন্দ্র দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের আশারামবাড়ি উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম এবং ল্যাবরেটরির উদ্বোধন করা হয়েছে। একই সঙ্গে রামদয়ালবাড়িতে হোস্টেল তৈরি করা হয়েছে। তেলিয়ামুড়ায় বৈদ্যুতিক চুল্লি এবং বর্জ্য টার্শিয়ারি সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে। জেলাশাসক ও মহকুমা শাসকের নতুন আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। বেহালাবাড়ি দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ে জনজাতিদের জন্য ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হোস্টেল নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। এছাড়াও অতিরিক্ত জেলাশাসকের আবাসন নির্মাণের কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান৷

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা বলেন, মানুষের কল্যাণে রামচন্দ্রঘাটে নানা উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। এলাকায় শান্তি সম্প্রীতি বজায় রেখে উন্নয়নমূলক কাজে সহযোগিতা করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান। কল্যাণপুর দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিধায়ক পিনাকী দাস চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি অপর্ণা সিংহ রায় (দত্ত), স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, খোয়াই জেলার জেলাশাসক রজত পন্থ, জেলার পুলিশ সুপার রণদিত্য দাস, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা এন.সি. শর্মা, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা প্রফেসর ডা. তপন মজুমদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কল্যাণপুর পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান সৌমেন গোপ।

আরও পড়ুন...


Post Your Comments Below

নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।

বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।

Free Download Avro Keyboard

Fields with * are mandatory





Posted comments

Till now no approved comments is available.