Hare to Whatsapp
কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে রাজ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, জানুয়ারি ১২, : কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলেই রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাজ্যকে হীরা মডেলে পরিণত করার যে আহ্বান রেখেছিলেন তার বাস্তবায়নও সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে রাজ্য সরকার জলপথের উন্নয়নেও পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রকও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ১১ জানুয়ারি প্রজ্ঞাভবনে ‘স্কুল অব লজিস্টিক, কমিউনিকেশন এন্ড ওয়াটারওয়েজ'-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। এই ‘স্কুল অব লজিস্টিক, কমিউনিকেশন এন্ড ওয়াটারওয়েজ প্রতিষ্ঠানটির' ভার্চুয়লী উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ, জলপথ এবং আয়ুষ মন্ত্রকের মন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল। প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি চালু হওয়ার ফলে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোগীরাও লাভবান হবেন। আগামী দিনে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজ্যের ব্যবসায়ীদের মত বিনিময়েরও সুযোগ ঘটবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যে কোনও রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে রাজ্যে সড়ক, বিমান ও রেল যোগাযোগের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে রাজ্যে বর্তমানে ৬টি জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া আরও ৭টি জাতীয় সড়ক এবং ৪টি রোপওয়ে নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পাশাপাশি ধর্মনগর-আগরতলা জাতীয় সড়ককে চার লেন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১০ হাজার ২২২ কোটি টাকার মঞ্জুরী দিয়েছে। রাজ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে বর্তমানে আগরতলা থেকে ১১টি এক্সপ্রেস ট্রেন দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে চলাচল করছে। শুধু তাই নয় আগরতলা রেল স্টেশনটিকে দেশের অন্যতম আধুনিক রেলস্টেশনে পরিণত করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্যে জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ জলপথের উন্নয়ন হলে পণ্য রপ্তানি-আমদানীর ক্ষেত্রে খরচ যেমন কম হবে তেমনি সময়েরও সাশ্রয় হবে। বাংলাদেশের সাথে জলপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা শুরু হলে ত্রিপুরা দক্ষিণ-এশিয়ার প্রবেশদ্বারে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে রাজ্য সরকার সেই দিশায় কাজ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যকে নিয়ে অষ্টলক্ষী গড়ার কথা বলেছেন। আর এই অষ্টলক্ষীর সার্বিক উন্নয়ন হলে দেশের উন্নয়নেরও গতি পাবে বলে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন। প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮টি রাজ্যই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
উদ্বোধকের ভাষণে কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ ও জলপথ এবং আয়ুষ মন্ত্রকের মন্ত্রী সর্বানন্দ সানোয়াল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই উত্তর-পূর্বাঞ্চল আজ উন্নতির দিশায় চলছে। প্রধানমন্ত্রী ‘লুক ইস্ট’ পলিসির পরিবর্তন করে ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ পলিসি গ্রহন করায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন ঘটছে। আগামীদিনে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর দেশকে বিশ্বের একটি অন্যতম বিকশিত দেশ গড়ার সংকল্প নিয়েছেন। এই লক্ষ্যে গত ৮ বছরের নতুন নতুন নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিগত কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে দেশের যে সব অঞ্চলকে উন্নতির ক্ষেত্রে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল সেগুলিকে উন্নতর পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সচিবদের নিয়মিতভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি পরিদর্শনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় জাহাজমন্ত্রী বলেন, আজ ত্রিপুরায় যে প্রতিষ্ঠানটির উদ্বোধন করা হয়েছে তা রাজ্যের যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উপকারে লাগবে। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্যের ব্যবসায়ীসহ শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে পারবে। ফলে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। পাশাপাশি রাজ্যের উৎপাদিত পণ্য দেশ-বিদেশে বাজারজাতকরণ করার ক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কিভাবে উন্নতি করা যেতে পারে সে বিষয়েও ব্যবসায়ীরা এই প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার বর্তমান সরকার রাজ্যকে দেশের মধ্যে একটি সর্বশ্রেষ্ঠ রাজ্য বানানোর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে কাজ করছে। এই লক্ষ্যে ত্রিপুরা সরকার বহু পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করে যাচ্ছে। ফলে যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, পর্যটন সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ত্রিপুরা আজ উন্নতি পথে এগুচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণে পরিবহন দপ্তরের সবিব উত্তম কুমার চাকমা বলেন, অরুন্ধতীনগরস্থিত সিপার্ডে ৫ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে “স্কুল অব লজিস্টিক, কমিউনিকেশন এন্ড ওয়াটারওয়েজ' প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান গঠনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধিতে অধ্যয়ন, গবেষণা, প্ৰশিক্ষণ ও নানা শাখার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের কর্মশালার আয়োজন করা। তাতে ব্যবসায়ী, স্থানীয় উদ্যোগী, পর্যটন পরিচালকরা উপকৃত হবেন।
অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে. কে. সিনহা, বন্দর, জাহাজ ও জলপথ মন্ত্রকের সচিব সঞ্জীব রঞ্জন, কেভিআইসি-র সিইও বিনীত কুমার প্রমুখ।