জনজাতিদের উন্নয়নে রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, এপ্রিল ১০, : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা সাথ, সবকা বিকাশ ও সবকা বিশ্বাস নীতিতে রাজ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ রূপায়ণ করা হচ্ছে। সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের রাজ্য ত্রিপুরা। রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হলো এক ত্রিপুরা, শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে তোলা। ৯ এপ্রিল ধর্মনগরের কালাছড়া ব্লকের অন্তর্গত ইচাইলালছড়াতে নবনির্মিত জেলা পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টারের দ্বারোদঘাটন করে এই কথাগুলি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। জেলা পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টার প্রাঙ্গণে আয়োজিত দ্বারোদঘাটন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী উত্তর ত্রিপুরা জেলায় বিভিন্ন দপ্তরের উদ্যোগে রূপায়িত আরও ৪০টি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সূচনা করেন এবং ৪টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
দ্বারোদঘাটন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নেতিবাচক মানসিকতার কারণে একটা শ্রেণি রাজ্যের উন্নয়ন দেখতে পায় না। রাজ্য সরকার ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ করছে। জনজাতিদের উন্নয়নে বর্তমান সরকার গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও জনজাতিদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেটে মুখ্যমন্ত্রী শস্য শ্যামলা যোজনা নামক একটি নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প উচ্চফলনশীল শস্যের উৎপাদনে সহায়ক হবে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৫ কোটি টাকা। রাজ্যে চিফ মিনিস্টার্স রাবার মিশনের আওতায় ২০ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে রাবার চাষ করা হবে। ১০টি রাবার প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। ৩টি ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জনজাতি হোস্টেল নির্মাণ করা হবে এবং ৭টি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট জনজাতি হোস্টেল নতুনভাবে স্থাপন করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা নামক একটি যোজনা চালু করা হয়েছে বলেও জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পে ত্রিপুরায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অন্ত্যোদয় পরিবারভুক্ত প্রতিটি কন্যা সন্তানের জন্য ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা হবে। ১৮ বছর বয়স হলে সেই টাকা নগদে তোলা যাবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে রাজ্যের প্রতিটি মহকুমায় বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের উপর কোচিং সেন্টার চালু করা হবে। এই কোচিং সেন্টারে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ১০০ জন করে শিক্ষার্থী কোচিং নিতে পারবে। রাজ্যের নতুন তিনটি ডিগ্রি কলেজ স্থাপন করা হবে। ১০০ শয্যার একটি সুপার স্পেশালিটি চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্বসহায়ক দলের সংখ্যাও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগে ৪ হাজারের কাছাকাছি স্বসহায়ক দল ছিলো, যা বর্তমানে প্রায় ৫৬ হাজার। তাদের রিভলবিং ফান্ড দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের মাথাপিছু গড় আয়ও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় মুখ্যমন্ত্রী মাদকাসক্তি সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুব সমাজ যাতে নেশার দিকে ধাবিত না হয়, তারজন্য গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এদিনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষামন্ত্রী টিংকু রায় বলেন, এক সময় উত্তর ও ঊনকোটি জেলা উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে ছিলো, কিন্তু বর্তমানে এই দুটি জেলায়ও ব্যাপকভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। রাজ্যের আগরচাষীদের সুবিধার জন্য কদমতলায় আগর মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে।
এদিনের অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক যাদবলাল নাথ, উত্তর ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক ও সমাহর্তা চাঁদনী চন্দ্রন, সমাজসেবী কাজল কুমার দাস, সমাজসেবী বিকাশ নাথ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ও ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন উত্তর ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি অপর্ণা নাথ।
উল্লেখ্য যে, জেলা পঞ্চায়েত রিসোর্স সেন্টারের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ২৫ আগস্ট। ২০২৪ সালের অক্টোবরে কাজ শেষ করা হয়। ব্যয় হয় ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। এদিনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) কদমতলা ও কালাছড়া দুটি ব্লককে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ১০০ শতাংশ ঘর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রী কদমতলা ও কালাছড়া ব্লকের বিডিও সঞ্জীব দেবনাথ ও অমিত চন্দের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন।
আরও পড়ুন...