Share Whatsapp

শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধি করাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন

আগরতলা, জানুয়ারি ১০, : আমাদের রাজ্য বাঁশ, রাবার, প্রাকৃতিক গ্যাস সহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। রাজ্যের এই সমস্ত নিজস্ব প্রাকৃতিক সম্পদকে ভিত্তি করে ছোট বড় শিল্প স্থাপনে রাজ্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। কারণ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধি করাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। আর এক্ষেত্রে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক অন্যতম ভূমিকা পালন করতে পারে। ৯ জানুয়ারি প্রজ্ঞা ভবনে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের উদ্যোগে এমএসএমই-র টেকসই উন্নয়নের উপর দু'দিনের আঞ্চলিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা একথা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে ছোট বড় অনেক শিল্প কারখানা রয়েছে। সেগুলিকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে উন্নয়ন করে রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যে রাজ্য সরকার কাজ করছে। বিগত দিনে দেখা গেছে আন্দোলনের নামে রাজ্যের শিল্প কারখানাগুলিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। শিল্প স্থাপনেও সে সময় সঠিক কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। বর্তমান রাজ্য সরকার রাজ্য শিল্প বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলেছে। ফলে রাজ্য বহু ছোট বড় শিল্প ইউনিট নতুনভাবে চালু হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের অর্থনীতি মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল। রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৪৪ শতাংশ সরাসরি কৃষি এবং কৃষি সম্পর্কিত কাজের উপর নির্ভরশীল। রাজ্যের মোট জমির প্রায় ২৬ শতাংশ কৃষি উৎপাদনের উপযোগী। আগামী দিনে কৃষিকে কেন্দ্র করে রাজ্যের জিডিপি কিভাবে আরও বাড়ানো যেতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাবার উৎপাদনে ত্রিপুরা দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। রাবারকে কেন্দ্র করে রাজ্যে শিল্প স্থাপনেও সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করছে। এছাড়াও রাজ্যের বিখ্যাত আনারস, আগর, বাঁশ ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে রাজ্যে শিল্প স্থাপনে সরকার উদ্যোগীদের বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের বিগত সাড়ে ৪ বছর সময়কালে রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিক উদ্যোগের ফলে রাজ্যে ৬টি জাতীয় সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এছাড়া আরও ৭টি জাতীয় সড়ক এবং ৪টি রোপওয়ে নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন দিয়েছে। এর জন্য ১০ হাজার ২২২ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট পরিষেবার উন্নতির ক্ষেত্রে রাজ্য বর্তমানে দেশের মধ্যে তৃতীয় শ্রেষ্ঠ রাজ্য। উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবাকে ব্যবহার করে রাজ্যের যুবক যুবতীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। রেল যোগাযোগের ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে রাজ্য থেকে বর্তমানে ১১টি এক্সপ্রেস ট্রেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করছে। পাশাপাশি আগরতলা রেল স্টেশনটিকে দেশের অন্যতম আধুনিক রেল স্টেশনে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে জিডিপি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে।

সম্মেলনে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নারায়ণ রানে বলেন, ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে আর্থিক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক কিভাবে সহযোগিতা প্রদান করতে পারে সে বিষয়কেই সম্মেলনে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রতিটি ক্ষেত্রের উন্নয়নে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্ৰক সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নের জন্য ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করতে বার বার বলেছেন। তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ত্রিপুরা আজ উন্নতির পথে এগুচ্ছে। আর এই উন্নয়নকে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক-এর মাধ্যমে কিভাবে আরও গতি দেওয়া যেতে পারে সে লক্ষ্যেই এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। ত্রিপুরার সার্বিক উন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার চায় প্রতিটি রাজ্যেরই মাথাপিছু গড় আয় বৃদ্ধি পাক। এর জন্য প্রতিটি রাজ্যেই রোজগার বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপি বৃদ্ধি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করছে। তিনি বলেন, ত্রিপুরায় প্রাকৃতিক গ্যাস, আনারস, বাঁশ, রাবার ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। সেগুলিকে ভিত্তি করে রাজ্যের জিডিপি বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারকে আরও প্রয়াস নিতে হবে। এছাড়া ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন ক্ষেত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। কারণ পর্যটন হল এমন একটি ক্ষেত্র যা কম সময়ে দেশ বা রাজ্যের আর্থিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আত্মনির্ভর ভারত গড়ার কথা বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে ত্রিপুরা সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকেও সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। দেশের গরিব, মধ্যবিত্ত সহ প্রত্যেক জনগণের কল্যাণে কেন্দ্রীয় সরকার বহু প্রকল্প চালু করেছেন। এই সমস্ত জনকল্যাণমুখী প্রকল্পগুলির সুবিধা জনগণের মধ্যে ১০০ শতাংশ পৌঁছানোর লক্ষ্যে ও রাজ্যগুলিকে সচেষ্ট থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের রাজ্য প্রতিমন্ত্রী ভানুপ্রতাপ সিং ভার্মা বলেন, ২০১৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর পূর্বাঞ্চলের সার্বিক উন্নতির জন্য ‘লুক ইস্ট' পলিসিকে পরিবর্তন করে 'অ্যাক্ট ইস্ট' পলিসি গ্রহণ করেছে। এই পলিসির মাধ্যমে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছানো হচ্ছে। ফলে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি ক্রমশ উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছে। আর উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রকৃত উন্নয়ন হলেই দেশের উন্নতির গতি তরান্বিত হবে। তিনি বলেন, জিডিপি বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক অন্যতম ভূমিকা নিচ্ছে। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রক-এর যে সমস্ত প্রকল্প রয়েছে সেগুলির সুবিধা গ্রহণ করার জন্য উত্তর পূর্বাঞ্চলের উদ্যোগীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, কেভি আইসি-র চেয়ারম্যান মনোজ কুমার, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের সচিব বি বি সোয়াইন, রাজ্য সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব অভিষেক চন্দ্র প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব মার্সি ইপাও, কে ভি আইসি-র সিইও বিনীত কুমার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজ মন্ত্রকের মন্ত্রী নারায়ণ রানে র‍্যাম্প পোর্টাল, গোমতী সিটি গ্যাস প্রকল্প, স্ফুর্তি প্রকল্পে পশ্চিম ত্রিপুরা ব্যাম্বু ম্যাট ক্লাস্টারের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। এছাড়া পি এম ই জি পি প্রকল্পে ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সুবিধাভোগীদের জন্য মার্জিন মানি সাবসিডি প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠান মঞ্চে পিএমইজিপি প্রকল্পে ১০ জন সফল উদ্যোগীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনাস্বরূপ তাদের হাতে ট্রফি তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিগণ।


You can post your comments below  
নিচে আপনি আপনার মন্তব্য বাংলাতেও লিখতে পারেন।  
বিঃ দ্রঃ
আপনার মন্তব্য বা কমেন্ট ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষাতেই লিখতে পারেন। বাংলায় কোন মন্তব্য লিখতে হলে কোন ইউনিকোড বাংলা ফন্টেই লিখতে হবে যেমন আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড (Avro Keyboard)। আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ডের সাহায্যে মাক্রোসফট্ ওয়ার্ডে (Microsoft Word) টাইপ করে সেখান থেকে কপি করে কমেন্ট বা মন্তব্য বক্সে পেস্ট করতে পারেন। আপনার কম্পিউটারে আমার বাংলা কিংবা অভ্রো কী-বোর্ড বাংলা সফ্টওয়ার না থাকলে নিম্নে দেয়া লিঙ্কে (Link) ক্লিক করে ফ্রিতে ডাওনলোড করে নিতে পারেন।
 
Free Download Avro Keyboard  
Name *  
Email *  
Address  
Comments *  
 
 
Posted comments
Till now no approved comments is available.