সংস্কৃতির সান্নিধ্যে থাকলে যুব সমাজ নেশার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত থাকবে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, এপ্রিল ৬, : রাজ্যের আধুনিক ভাস্কর্যের পথিকৃৎ হলেন বিপুল কান্তি সাহা। তিনি এই রাজ্যের অন্যতম কৃতি সন্তান। যার অশেষ পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের ফলে এখানকার ভাস্কর্য শিল্প বিশ্বপটে সমাদৃত হয়েছে। এই ধরনের ব্যক্তিত্বকে কখনোই বিস্মৃত হতে দেওয়া যায় না। তারাই আগামী প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা যোগাবে। ৫ এপ্রিল লিচুবাগানস্থিত সরকারি চারু ও কারু কলা মহাবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী প্রথম বিপুল চারু ও কারু কলা উৎসবের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা। এই উৎসব আগামী ৭ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। উৎসব উপলক্ষ্যে থাকবে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রাজ্যের শিল্প জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আলোচনা সভা। তিনদিনব্যাপী এই উৎসব উপলক্ষ্যে ললিত কলা একাডেমি, ফাইন আর্টস, সরকারি চারু ও কারু কলা মহাবিদ্যালয় সহ ১০টি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে প্রদর্শনী স্টল খোলা হয়েছে। প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই উৎসব চলবে। উল্লেখ্য, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা বলেন, রাজ্যের যে সকল কৃতি সন্তানেরা এই রাজ্যের নাম খ্যাতির শিখরে নিয়ে গেছেন তাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। বর্তমান সরকার প্রচেষ্টা করছে এই সকল ব্যক্তিত্বদের প্রাপ্য সম্মানটুকু প্রদান করার। কালের নিয়মে তারা হারিয়ে গেলেও তাদের কর্ম, মনন, চিন্তা-চেতনা আগামী প্রজন্মকে বহুলভাবে রাজ্যের শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশে প্রেরণা যোগাতে পারে। ত্রিপুরা রাজ্যের রাজ পরিবারে শিল্পের বিভিন্ন ধারার চর্চা হলেও তা জনসাধারণের নাগালের বাইরে ছিলো।
বিপুল কান্তি সাহার মতো বরেণ্য ব্যক্তিত্বগণ এসব শিল্প সংস্কৃতিকে রাজ্যের সাধারণ জনগণের নিকট সহজভাবে তুলে ধরেছেন। প্রযুক্তি ছাড়াও রাজ্যের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্বগণ যেভাবে তাদের শিল্প, সংস্কৃতিকে সৃষ্টি করেছেন তা এককথায় অভাবনীয়। এই ধরনের ব্যক্তিত্বদের সম্মান প্রদানের মাধ্যমে একটি আত্মতৃপ্তি অনুভব করা যায়। এক্ষেত্রে কিছুদিন পূর্বে বাধারঘাটে নবনির্মিত বিভিন্ন ক্রীড়া পরিকাঠামো রাজ্যের স্বনামধন্য তিনজন ক্রীড়াবিদের নামে উৎসর্গ করার কথাও মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যে কোনও জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের মধ্যে বাঁচার রসদ লুকিয়ে রয়েছে। নিজেদের মেধা সম্পর্কে সচেতন হলেই রাজ্যের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উৎকর্ষতা আরও বাড়বে। সংস্কৃতির সান্নিধ্যে থাকলেই যুব সমাজ নেশার করাল গ্রাস থেকে মুক্ত থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর গত অর্থবছরে ১২২টি বিষয়ের উপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ১০১টি সাংস্কৃতিক সংস্থা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে। এই সকল অনুষ্ঠানগুলিতে ১০ হাজারের উপর শিল্পী যুক্ত হয়েছেন। প্রায় ৩৩০ জন শিল্পীকে বহিরাজ্যের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজ্যব্যাপী জনজাতিদের বাদ্যযন্ত্র কর্মশালার জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তাছাড়া যাত্রা, পুতুল নাচ, কীর্তনের মতো হারিয়ে যেতে বসা লোকসংস্কৃতিকে আবার সাধারণ জনগণের কাছে নতুন রূপে উপস্থাপন করার জন্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের বিশেষ সচিব দেবপ্রিয় বর্ধন বলেন, নবীন প্রজন্মকে শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে এ ধরনের অনুষ্ঠান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা বিম্বিসার ভট্টাচার্য তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের বছরব্যাপী কাজকর্মের রূপরেখা তুলে ধরেন। তাছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাজ্যভিত্তিক সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত চক্রবর্তী, সরকারি চারু ও কারু কলা মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিজিৎ ভট্টাচার্য এবং বিশিষ্ট ভাস্কর তথা বিপুল কান্তি সাহার সহধর্মিনী দীপিকা সাহা।
আরও পড়ুন...