Hare to Whatsapp
গামছাকে পরিষ্কার করে নাক মুখের উপর জড়িয়ে ফেলুন, এতে মাস্কের কাজ অনেকটাই হয়ে যাবে: মুখ্যমন্ত্রী
By Our Correspondent
আগরতলা, মার্চ ২৮, : করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায়, রাজ্যে জারি থাকা লকডাউন এর চতুর্থ দিন রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। বাড়িতে থেকে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা প্রতিরোধ করার জন্য সবাইকে আহবান জানালেন তিনি। বলেন অত্যন্ত প্রয়োজন না হলে কেউ যেন বাড়ি থেকে বের না হয়।
আজ মাস্ক এর ব্যবহার সম্পর্কে এক নতুন কৌশল শেখালেন মানুষকে। তিনি বলেন রাজ্যের প্রত্যেকের জন্য এত দ্রুত মাস্কের ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। এই অবস্থায় বাড়িতে থাকা গামছাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নাক মুখের উপর জড়িয়ে ফেলার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এতে মাস্কের কাজ অনেকটাই হয়ে যায় এবং এই প্রক্রিয়াটি সহজলভ্যও।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ২২৯ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বিপিএল এবং অন্তদ্বয় পরিবারগুলোর পাশাপাশি এপিএল ভুক্ত ৫০ হাজার গরিব পরিবারদের চিহ্নিত করে তাদের হাতে সুবিধাগুলি পৌঁছে দেয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। তিনি বলেন শনিবারের মধ্যেই এই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন পঞ্চায়েত, জনপ্রতিনিধি ও ভিডিও দের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিন রাজ্য পুলিশের এক অভিনব উদ্যোগের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন এখন থেকে রাজ্যের প্রধান হাসপাতালগুলি, যেমন জি বি, আই জি এম, টি এম সি ও জেলা হাসপাতাল, মহাকুমা হাসপাতাল গুলিতে দিনে দুইবার রান্না করা খাবার পৌঁছে দেবে পুলিশ। এই প্রক্রিয়া আজ থেকে ধর্মনগরের শুরু হয়ে গেছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন সবজি বা বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী যাতে মানুষ সহজেই পেতে পারে, এ জন্য মানুষের বাড়ির সামনে গিয়ে ফেরি করার ব্যবস্থা করা হবে। যার ফলে বাজারে এসে মানুষ যাতে জমায়েত না হয়, সে বিষয়টি এড়ানো সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বাজারগুলোতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট করে আধিকারিকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী শ্রী দেব পরামর্শ দেন যে, এই লকডাউন চলাকালীন মানুষ যাতে তার জীবনের সুন্দর স্মৃতি গুলি ডায়েরিতে লিখে রাখে। তাহলে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে এক আমূল পরিবর্তন আসবে। প্রত্যেকের জীবনের ভাল দিকগুলি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন তিনি ফের উল্লেখ করেন যে গুজব যেন কিছুতেই না ছড়ায়। পুলিশ যে ব্যবস্থা নিয়েছে তা সবার ভালোর জন্যই নেয়া হয়েছে। পুলিশ সারাদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন যে আমাদের জন্যই কাজ করছেন পুলিশ, ডাক্তার। এদের সহায়তা আমাদের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে বলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন।
করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তিনি বলেন করোনা মোকাবেলায় গরিবদের সুবিধার্থে, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকার রিলিফ প্যাকেজ ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় সরকার।প্রতিটি কৃষককে দুই হাজার টাকা করে এপ্রিল থেকে তিন মাস ধরে প্রদান করা হবে। এতে রাজ্যের ২লক্ষ ২১ হাজার কৃষক উপকৃত হবেন।
আগামী তিনমাস দেশের ৮০ কোটি গরিব মানুষকে প্রত্যেক মাসে বিনামূল্যে ৫ কেজি করে গম বা চাল এবং ১ কেজি করে ডাল দেওয়া হবে।
এমজিএনরেগায় দৈনিক মজুরি ১৮২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০২ টাকা করা হয়েছে। এর ফলে রাজ্যের ৬ লক্ষাধিক জব কার্ড হোল্ডার উপকৃত হবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে এমজিএন রেগা বাবদ কেন্দ্রের কাছে ৭২ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। তা পরিশোধ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এম জি এন রেগা শ্রমিকদের ১০ দিনের কাজ দেওয়ার জন্য ত্রিপুরা সরকার ব্যবস্থা করেছে বলে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন যে বিভিন্ন সামাজিক ভাতা অগ্রিম দুই মাসের দিয়ে দেয়া হবে। এছাড়া কেন্দ্র গরিব, গ্রামীন, বিকলাঙ্গদের অতিরিক্ত এক হাজার টাকা করে পাঠাবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি নির্মাণ শ্রমিকদের আগামী তিন মাসে অতিরিক্ত এক হাজার টাকা করে দেয়া হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে প্রায় ৪০ হাজার নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন।
জনধন একাউন্টে মহিলাদের ৫০০ টাকা করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আগামী তিন মাসে তিনটি করে উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে সিলিন্ডার দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বেসরকারি ক্ষেত্রে যেখানে কর্মচারিদের সংখ্যা ১০০ এর কম ও বেতন মাসিক ১৫০০০ টাকার নিচে, সেখানে কর্মচারীদের চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে।
আগামী তিন মাস পর্যন্ত এমন কর্মচারিদের মাসিক বেতনের ২৪ শতাংশ তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড একাউন্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন রাজ্য সরকার আরও ৩৩৮ কোটি টাকার প্যাকেজ চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রের কাছে। তিনি বলেন এই সময়ের মধ্যে মৌলিক কিছু অসুবিধা হবে। ২১ দিন যদি সবাই সঠিকভাবে পালন করতে পারে, তবে আমরা ২১ বছর এগিয়ে যাব। করোনা ঠেকাতে তিনি সমস্ত রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য আহবান জানান। বলেন লকডাউনের সময়সীমা বৃদ্ধি পেলেও, সবাই যেন তা সঠিকভাবে পালন করে।
এদিন তিনি ফের বাংলাদেশ সীমান্ত সম্পর্কে তার সতর্কতার কথা ব্যক্ত করেন। বলেন বর্ডার কারফিউ চলাকালীন যাতে কেউ সীমান্তের এপারে আসতে না পারে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।