Hare to Whatsapp
শিক্ষাই হচ্ছে একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটানো যায় : উপরাষ্ট্রপতি
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, নভেম্বর ৩০, : ত্রিপুরার উন্নয়ন এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্র তার মধ্যে একটি। শিক্ষাই হচ্ছে একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে পরিবর্তন ও উন্নয়ন ঘটানো যায়। ২৯ নভেম্বর আগরতলার মহারাজা বীরবিক্রম কলেজের রবীন্দ্র হলে ‘ত্রিপুরায় শিক্ষার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত' শীর্ষক এক আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় একথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপরাষ্ট্রপতির পত্নী ড. সুদেশ ধনখড়, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা, শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ। আলোচনাচক্রের উদ্বোধনের আগে উপরাষ্ট্রপতি রবীন্দ্র হলের একতলায় ‘ত্রিপুরার ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য' শীর্ষক প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন।
আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, ত্রিপুরায় এসে তার সবচেয়ে যে তিনটি বিষয় ভালো লেগেছে সেগুলি হলো, এখানকার মানুষের আন্তরিক অভ্যর্থনা, রাজ্যের উন্নয়নচিত্র ও ভগবান প্রদত্ত ত্রিপুরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। তিনি বলেন, এ রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রের এখন দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। জাতীয় পর্যায়েও ভারতের অগ্রগতি হচ্ছে এবং দেশের এই উন্নয়ন অপ্রতিরোধ্য। ভারত এখন আন্তর্জাতিক স্তরে ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতির স্থান পেয়েছে এবং এই দশক শেষ হতে হতে এই আর্থিক উন্নয়ন আরও অনেকটা এগিয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী চিন্তাধারার প্রশংসা করে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, দীর্ঘ ৩৪ বছর পর প্রধানমন্ত্রী পুরনো শিক্ষানীতি বাতিল করে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করেছেন। উপরাষ্ট্রপতি জানান, তিনি নিজেও এই নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি গঠন প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকেও পরামর্শ নিয়েই এই নীতি তৈরি করা হয়েছে। এই শিক্ষানীতি সরকারের এক মাইলস্টোন সাফল্য বলে বর্ণনা করেন তিনি। এই নীতির ফলে সবাই যার যার মেধার বিকাশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির কারণে এখন উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রভূত উন্নয়ন হচ্ছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিকাশে পৃথক মন্ত্রক রয়েছে। উন্নয়নের শর্ত এবং সূচকও বদলেছে। এই উন্নয়নমূলক প্রক্রিয়ায় ত্রিপুরা নিজের জন্য এক আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। এই উন্নয়নে শিক্ষার এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে। এক সময়ে উদ্ভাবনী ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো খুবই কঠিন ছিল। কিন্তু এখন সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এই সুযোগ তৈরি হয়েছে। নতুন নতুন স্টার্ট আপ তৈরি হচ্ছে। ২০২২ সালে ভারতের বহু কোম্পানি ইউনিকর্ন কোম্পানির মর্যাদা লাভ করেছে। ভারতে যে গতিতে উন্নতি হচ্ছে আর কোনও দেশে সেভাবে হচ্ছে না। কোভিডের সময়েও ভারতের মানবিক উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছে।
আলোচনাচক্রে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্বের এমন কোনও শিল্প নেই যেখানে ভারতীয়রা নেই। তাই আমরা গর্বিত আমাদের সাফল্যকে নিয়ে। ত্রিপুরায়ও কৃষিক্ষেত্রে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রিপুরার প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহার নেতৃত্বে ত্রিপুরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ এখন বহু ক্ষেত্রেই শীর্ষ স্থানে রয়েছে। এই প্রথম বিশ্বের দরবারে ভারতের বক্তব্যকে সবাই গুরুত্ব দিচ্ছে। জি- ২০-এর বৈঠকেও ভারত পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছে যে, যুদ্ধ কোনও সমস্যারই সমাধান নয়৷ এটাই ভারতীয় গণতন্ত্রের প্রতীক। আমাদের বিদেশ নীতি শুধুমাত্র ভারতকেন্দ্রিক অর্থাৎ শুধুমাত্র দেশের স্বার্থেই পরিচালিত।
উপরাষ্ট্রপতি দেশের নতুন ইকো-সিস্টেমে সবাইকে বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়কে নতুন সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নতিতে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি সংবিধানের মৌলিক দায়িত্বের কথা উল্লেখ করে ছেলেমেয়েদের ভারতের সুনাগরিক হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি ত্রিপুরাকে ভগবানের ভূমি তথা মা ত্রিপুরাসুন্দরীর স্থান বলে অভিহিত করেন এবং মাতা ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদ নিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন। তিনি ত্রিপুরা এবং দেশের উন্নতির জন্যও ত্রিপুরাসুন্দরীর আশীর্বাদ কামনা করেন।
আলোচনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে উপরাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, যার কাছে নলেজ আছে সেই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা ছাড়া কেউ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে না। শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রেই নয় ত্রিপুরা সবক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার ত্রিপুরার উন্নয়নে যৌথভাবে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে। জাতীয় সড়কের উন্নয়ন, নতুন জাতীয় সড়ক তৈরি করা, মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দরের উন্নয়ন, ইন্টারনেট পরিষেবার সঠিক ব্যবহার প্রভৃতির কথা তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, সারুমে মৈত্রী সেতু ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। এই সেতু চালু হলে ত্রিপুরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রবেশদ্বারে পরিণত হবে। রাজ্যে ডেন্টাল কলেজ চালু হয়ে যাবে। আমবাসায় আরেকটি মেডিক্যাল কলেজ তৈরি করার জন্য ইতিমধ্যেই জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল আগরতলায় ত্রিপুরা ফিল্ম এবং টেলিভিশন ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়ে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত গঠন করতে রাজ্যেও বিকাশের কাজ চলছে। বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রাজ্যে সিবিএসই পাঠ্যক্রম চালু করা হয়েছে। শিক্ষার উন্নতিতে ভোকেশনাল ট্রেনিং, বছর বাঁচাও অভিযান, স্মার্ট ক্লাস, ডিজিটাল লাইব্রেরি, বন্দে ত্রিপুরা চ্যানেল চালু করা, নতুন দিশা, কম্পিউটার শিক্ষা চালু করার কথাও তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ত্রিপুরা পিজিআইতে গ্রেড ওয়ানে উঠে এসেছে। রাজ্যে আইন বিশ্ববিদ্যালয়, বুদ্ধিস্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে। ত্রিপুরা ধীরে ধীরে এডুকেশনাল হাব হয়ে উঠছে। রবীন্দ্র হলে আলোচনাচক্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ত্রিপুরায় শিক্ষা ব্যবস্থার অগ্রগতি বিষয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। আলোচনাচক্রে সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এমবিবি কলেজের অধ্যক্ষ ড. নির্মল ভদ্র।
উল্লেখ্য, আজ একদিনের রাজ্য সফরকালে সস্ত্রীক উপরাষ্ট্রপতিকে আগরতলার এমবিবি বিমানবন্দরে স্বাগত জানান রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইন আর্য, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা, কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। সকাল ১০টা নাগাদ বায়ুসেনার এক বিশেষ বিমানে আগরতলায় এসে তিনি বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে সরাসরি উদয়পুর চলে যান ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির দর্শনে। বিকেল ৩টা নাগাদ তিনি বিমানে রাজ্য ত্যাগ করেন। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সত্যদেও নারাইন আর্য, মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা ও মুখ্যসচিব জে কে সিনহা।