Hare to Whatsapp
বিজ্ঞানসম্মত প্রথায় চাষাবাদের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উপর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, নভেম্বর ১৫, : বিজ্ঞানসম্মত প্রথায় চাষাবাদের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির উপর সরকার অগ্রাধিকার দিয়েছে। সরকারের লক্ষ্য কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে কৃষক জ্ঞানার্জন কেন্দ্র ও কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র কৃষকদের খুবই উপকারে আসবে। ১৪ নভেম্বর অমরপুরের রাংকাং এলাকায় গােমতী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের দ্বিতল প্রশাসনিক ভবনের দ্বারােদঘাটন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডাঃ) মানিক সাহা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই নতুন কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে এখন থেকে নানাভাবে উপকৃত হবেন কৃষকগণ। কৃষকদের আত্মনির্ভর করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে রাজ্য সরকার খুবই আন্তরিক। কৃষক জ্ঞানার্জন কেন্দ্রে সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বীজ রােপণ থেকে শুরু করে ফসলের রক্ষণাবেক্ষণ এবং অধিক ফলন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। এরপর যারা প্রশিক্ষিত হবেন তারা আবার অন্য কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দিতে পারবেন।
উদ্বোধকের বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা আরও বলেন, ২০১৮ সালের আগে রাজ্যে কৃষকদের আয় ছিল ৬ হাজার টাকার মতাে। বর্তমানে সেটা বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। আগামীতে সেই অঙ্ক ১৪ হাজার টাকায় পৌঁছানাের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষক বন্ধু কেন্দ্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির একটা স্বপ্নের প্রকল্প। সেই দিশায় সব জায়গায় কাজ চলছে। কৃষকদের আত্মনির্ভর করে তােলার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কৃষকরা ধান জাতীয় ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি উদ্যানজাত ফসলও ফলিয়ে যাচ্ছেন। রাজ্যের উৎপাদিত উদ্যানজাত ফসল দুবাই, কাতার সহ বিভিন্ন দেশে এখন রপ্তানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার। ফুল চাষেও আত্মনির্ভর হয়েছে রাজ্য। আগে ফুলের জন্য বাইরের রাজ্যের মুখাপেক্ষী হয়ে। থাকতে হতাে। সেই জায়গায় ত্রিপুরাতে এখন বিভিন্ন জায়গায় বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ফুলের ভালাে ফলন হচ্ছে এবং বাইরের রাজ্যে চলে যাচ্ছে। এতে রাজ্যের ফুল চাষীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি সকলের মুনাফা হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি গুয়াহাটিতে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী নীতিন গড়করির উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ত্রিপুরার জাতীয় সড়ক উন্নয়নের প্রশ্নে বড়সড় সিদ্ধান্ত হয়। আগে রাজ্যে চারটি জাতীয় সড়ক ছিল। বর্তমানে আরাে ৭টির কাজ চলছে। এরমধ্যে চুরাইবাড়ি থেকে আগরতলা পর্যন্ত চার লেন সড়কের জন্য ঘােষণা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী। আগে ত্রিপুরাতে দূরপাল্লার ট্রেন চালু স্বপ্নের মতাে ছিল।
কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখন ত্রিপুরা থেকে বিভিন্ন রাজ্যে নিয়মিত দূরপাল্লার ট্রেন চলাচল করছে। আগামীদিনে বাংলাদেশ পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে। মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, বর্তমান সরকার জনজাতি অংশের মানুষের সার্বিক বিকাশে বিশেষ নজর দিয়েছে। এখন রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী গড়িয়া পুজোয় দুদিনের সরকারি ছুটি দেওয়া হয়। ১৯ আগস্ট মহারাজা বীর বিক্রম কিশাের মানিক্য বাহাদুরের জন্মদিনে সরকারি ছুটি ঘােষিত হয়েছে। এই রাজ্যের তিনজন জনজাতি ব্যক্তিত্ব পদ্মশ্রী সম্মান পেয়েছেন। জাতি জনজাতিদের মধ্যে মৈত্রীর বন্ধন সুদৃঢ় করার অঙ্গিকার নিয়েই কাজ করছে এই সরকার। প্রকৃত অর্থে মানুষের সার্বিক বিকাশের জন্যই কাজ করছে সরকার। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছে রাজ্য। খুব সহসাই একটি ডেন্টাল কলেজ চালু করা হবে। সেই সাথে এডিসি এলাকায় আমবাসায় আরও একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সব জায়গায় সবার উন্নয়ন করতে চায় এই সরকার।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথির বক্তব্যে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায় বলেন, রাজ্যের ৮টি জেলাতেই একটি করে কৃষি বিজ্ঞান স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আজকের এই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র পঞ্চম। আগামীতে কৃষকদের উন্নয়নে এটি কাজে আসবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেই দিশায় কাজ করছে রাজ্য সরকারও। কৃষকদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তােলাই সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। পাশাপাশি বিজ্ঞান ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে কৃষকদের কল্যাণে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস। তিনি বলেন, আজ গােমতী জেলার মানুষের কাছে একটি খুবই স্মরণীয় ও আনন্দের দিন। এই কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের মাধ্যমে উপকৃত হবেন আপামর কৃষক সমাজ। এই নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনজাতি কল্যাণ মন্ত্রী রামপদ জমাতিয়া, বিধায়ক রঞ্জিত দাস, বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘােষ, গােমতী জেলার জেলাশাসক গােভেকর ময়ূর রতিলাল, জেলা পুলিশ সুপার অজিত প্রতাপ সিং প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের মধ্যে ধান কাটার মেশিন ও পাওয়ারটিলার প্রদান করেন।