Hare to Whatsapp
প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানে রাজ্যের অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত সুশাসন পৌছে দেওয়া সরকারের মূল লক্ষ্য : তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদন
আগরতলা, অক্টোম্বর ২১, : অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত সুশাসন পৌছে দেওয়া রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য। রাজ্য সরকার তাই প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযান চালু করেছে। ২০ অক্টোবর সচিবালয়ে এক সাংবাদিক সম্মলনে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী একথা জানান। সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী এবং দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সাম্প্রতিক কাজকর্মের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিঘরে সুশাসন অভিযান শুরু হয়েছে এবং তা চলবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জন কল্যাণমূলক প্রতিটি প্রকল্প ও পরিষেবা একেবারে গ্রাম পঞ্চায়েত বা এডিসি ভিলেজ থেকে শুরু করে ব্লক, শহর বা নগর উন্নয়ন সংস্থা, জেলা পর্যায় এবং আগরতলা পুর নিগম পর্যন্ত সম্পন্ন করছে। সরকারের প্রতিটি নির্বাচিত সংস্থা এবং বিভিন্ন দপ্তর এ সমস্ত প্রকল্প ও পরিষেবা ১০০ শতাংশ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য এই অভিযানে অংশ নিয়েছে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী জানান, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এই প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের নােডাল দপ্তর। আদর্শ পরিচালন প্রক্রিয়া অনুযায়ী পঞ্চায়েত বা গ্রামস্তর থেকে প্রথমেই বিকাশ সভা দিয়ে এই অভিযান শুরু হয়েছে। এরপর এখন চলছে প্রতিটি পঞ্চায়েত, গ্রাম ও শহর এলাকায় সুবিধা প্রদানের জন্য শিবির বা ক্যাম্প। প্রতিটি শিবিরে জেলা, মহকুমা ও ব্লক পর্যায়ের কর্মী ও আধিকারিকগণ অংশ নিচ্ছেন। সেই সঙ্গে সরকারের সবগুলাে সংশ্লিষ্ট দপ্তর উপস্থিত থেকে প্রকল্প ও পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্য পূরণে কাজ করছেন। এরপর ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হবে জেলা পর্যায়ে সুশাসন মেলা। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্লক, পুর ও নগর এলাকা, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ভিলেজস্তরে মােট ১,০৭৫ টি বিকাশ সভা শেষ হয়েছে। শিবির শেষ হয়েছে মােট ৪৯৩টি। তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী জানান, রাজ্যে কর্মরত সকল সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার কথা চিন্তা করে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর ত্রিপুরা হেলথ ইনসুরেন্স স্কিম- ২০২২’ চালু করেছে। এই বীমা প্রকল্প অনুসারে প্রত্যেক সাংবাদিক ৩ লক্ষ টাকা করে বীমার সুবিধা পাবেন। ত্রিপুরা হেলথ ইনস্যুরেন্স স্কিম- ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ১৭ অক্টোবর, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা বা এজেন্সি নির্বাচনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে। আশা করা যায় নভেম্বর মাসের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া শেষ হবে। ২১ থেকে ৬৫ বছর পর্যন্ত কর্মরত সাংবাদিকরা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। এবং এতে রাজ্যের ৫ শতাধিক সাংবাদিক লাভবান হবেন। এই লক্ষ্যে রাজ্যে কর্মরত আরও প্রায় ৩২৩ জন কর্মরত সাংবাদিককে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া হবে। বীমা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রদেয় প্রিমিয়ামের শতকরা ৮০ ভাগ টাকা দেবে রাজ্য সরকার আর ২০ ভাগ টাকা দেবে বীমার সুবিধাভােগী সাংবাদিক।
সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী জানান, কলকাতার সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের সহযােগিতায় ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটে এ স্বল্প মেয়াদী ৪টি কোর্সে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে গত ২০ সেপ্টেম্বর,2022।
প্রত্যেকটি সর্ট টার্ম কোর্সের জন্য ১৫টি করে আসন রয়েছে। ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা পড়েছে- স্ক্রিন অ্যাক্টিং (৮ সপ্তাহ)-এ ২৭টি, ফিল্ম এপ্রেসিয়েশন (৪ সপ্তাহ)-এ ৭টি, ফিল্ম প্রােডাকশন ম্যানেজমেন্ট (৪ সপ্তাহ)-এ ১০ টি, নিউজ এনকোরিং, রিপাের্টিং এন্ড নিউজরুম
অটোমেশন (৪ সপ্তাহ)-এ ১৩টি। আবেদনপত্র জমা নেওয়ার পর স্কুটিনি শেষে আগামী ৩০ অক্টোবর এর মধ্যে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সােমবার থেকে ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এ প্রথম ব্যাচ এর ক্লাস চালু করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। রাজ্য সরকার প্রত্যেকটি কোর্সে ৯০ শতাংশ ভর্তুকি দেবে। ছাত্র/ছাত্রীদের মাত্র ১০ শতাংশ কোর্স ফি দিতে হবে। ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজম্যান্ট কমিটি গঠন না হওয়া পর্যন্ত পদাধিকার বলে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এর অধিকর্তা হিসেবে কাজ করবেন। এছাড়াও তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের একজন যুগ্ম/উপঅধিকর্তা ত্রিপুরা ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার হিসেবে কাজ করবেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী শ্রী চৌধুরী দুর্গাপূজার পর রাজ্যে প্রথমবারের মতাে মায়ের গমন অনুষ্ঠানটি শান্তিপুর্ণভাবে সফল হওয়ার জন্য প্রতিটি ক্লাব ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে এই প্রথম রাজ্যে দূর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে শারদ সম্মান এবং মায়ের গমন (কার্নিভাল) এর আয়ােজন করা হয়েছিল। গত ৭ অক্টোবর আগরতলার সিটি সেন্টার এর সামনে মায়ের গমন অনুষ্ঠানটিতে আগতলার মােট ৪৬ টি ক্লাব অংশগ্রহণ করেছে। মানুষ আনন্দে মাতােয়ারা হয়েছেন। মায়ের গমন অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে ত্রিপুরার চিরাচরিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রায় দেড় লক্ষ লােকের সমাগম হয়েছিল এই মায়ের গমন অনুষ্ঠানে। যেসমস্ত ক্লাবগুলি অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে থেকে ৩টি ক্লাবকে পুরস্কৃত করা হবে। প্রথম পুরস্কার- ৫০ হাজার টাকা সাথে ট্রফি ও মানপত্র, দ্বিতীয় পুরস্কার- ৩০ হাজার টাকা সাথে ট্রফি ও মানপত্র, তৃতীয় পুরস্কার- ২০ হাজার টাকা সাথে ট্রফি ও মানপত্র।
| তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, মায়ের গমন অনুষ্ঠানের জনসমাগমের উপর ভিত্তি করে ধারনা করা হচ্ছে আগরতলায় বিশেষ করে পােষ্ট চৌমুহনি থেকে দশমিঘাট পর্যন্ত এবং আশপাশ এলাকায় ব্যবসায়ীদের কমপক্ষে ২ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। এই বছরই প্রথম তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর ৬টি বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে আগরতলা ও তার পার্শ্ববর্তী ক্লাব/পুজো কমিটি এবং জেলাস্তরের ৫টি বিষয়ে ক্লাব/পুজো কমিটিগুলিকে শারদ সম্মানে ভূষিত করবে। কেন্দ্রীয় ও জেলাস্তরে বিচারক মন্ডলি দূর্গাপূজার সময় পুজোমন্ডপগুলি পরিদর্শন করেছেন। ফলাফল চুড়ান্ত করা হয়েছে। যথাসময়ে তা প্রকাশ করা হবে এবং খুব শীঘ্রই এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মায়ের গমনের পুরস্কার এবং শারদ সম্মাননা বিজয়ী ক্লাবগুলির মধ্যে প্রদান করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. পি কে চক্রবর্তী প্রতিঘরে সুশাসন অভিযান সম্পর্কে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন। তিনি জানান, ৩০ নভেম্বরের পরে মূল্যায়ন করা হবে এবং এর নিরিখে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ নাগাদ রিপাের্টকার্ড তৈরি করা হবে। সচিব জানান, এখন পর্যন্ত সারারাজ্যের বিভিন্ন ব্লক, পঞ্চায়েত, পুর ও নগর পঞ্চায়েতে মােট ১০৭৫টি বিকাশ সভা এবং ৪৯৩টি শিবিরের আয়ােজন করা হয়েছে। এর ফলে ৪৬ হাজার। লােক বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হয়েছেন।